অভাব-অনটনে আটকেনি পানছড়ির নাজমুলের গোল্ডেন জিপিএ-৫
পানছড়ি উপজেলার জিয়ানগর গ্রামের মো আবদুল খালেক মধ্যনগর মাদ্রাসায় মাষ্টার রোলে শিক্ষকতা করছে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে। বর্তমানে তার মাসিক সম্মানী দুই হাজার তিনশত টাকা। এই টাকার সাথে একখানা খয়রাতি রেশন কার্ডের উপর নির্ভর পুরো পরিবার। তার ছেলে নাজমুল হুদা ও মেয়ে খুরশিদ জাহান নুরী দু’জনেই এবার এইচএসসি (আলিম) পাশ করেছে ভালো ফলাফল নিয়ে।
জানা যায়. নাজমুল ২০১৪ সালে জুনিয়র দাখিল (জেডিসি) পরীক্ষায় খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ থেকে গোল্ডেন জিপিএ, ২০১৭ সালে দাখিলে জিপিএ ফাইভ (বিভাগীয় বৃত্তিসহ), ২০১৯ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গীস্থ তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিমে লাভ করে গোল্ডেন জিপিএ।
অপরদিকে তার বোন খুরশিদ জাহান নুরী পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে একই সালে জুনিয়র দাখিল (জেডিসি)তে জিপিএ ফাইভ (বৃত্তিসহ), দাখিলে ৪.৪৫ ও আলিমে লাভ করে ৪.৭৫। ছেলে-মেয়ের ভালো ফলাফলে খুশীর পরিবর্তে মা-বাপের চোখে মুখে বিরাজ করছে হতাশার চিহ্ন। দু’জন কিভাবে পড়ালেখা করবে এ চিন্তায় মা-বাবা অস্থির।
নাজমুল জানায়, দাখিল পর্যন্ত তেমন খরচ ছিলোনা কিন্তু আলিমে এসে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। নিজে কোনদিন প্রাইভেট না পড়ে উল্টো পড়িয়েছি। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে দেশের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন তার। কিন্তু অভাবের সংসারে স্বপ্ন কতটুকু বাস্তবায়ন হবে সে চিন্তায় ঘুম আসছেনা। মা-বাবা কি আমাকে দেখবে নাকি আমার বোনকে দেখবে তা নিয়ে আমি চিন্তিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বা ইসলামের ইতিহাস নিয়ে পড়ার কথা জানায় সে।
নাজমুল ও নূরীর বাবা আবদুল খালেক জানায়, এলাকার স্বার্থে দীর্ঘ বছর যাবৎ মধ্যনগর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা পেশায় আছি নামে মাত্র সম্মানী নিয়ে। যা দিয়ে ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ দুরের কথা সংসারের খরচও চলেনা। ছেলে নিজে প্রাইভেট না পড়ে প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ চালিয়ে নিয়েছে। এখন তো অনেক বিশাল খরচ। সেটা কিভাবে হবে তা নিয়ে আমি চিন্তিত।
জিয়া নগর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুস সালাম, সিরাজুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য মো আবুল হাসেম হাসু জানান, ওরা ভাইবোন দুজনেই আমাদের গ্রামের রত্ন। এদের জন্য গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে কি করা যায় তা আমরা সবাই মিলে বসে সিদ্ধান্ত নেব। প্রশাসন ও বিত্তবানরা তাদের লেখাপড়ার সহায়তায় এগিয়ে এলে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের বেগ পেতে হবেনা বলে তারা জানায়।