“চাঁদাবাজিতে বাধা দেয়ার জের ধরে পাবত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফের প্রসীত গ্রুপের সন্ত্রাসীরা ”

ইউপিডিএফ’র চাঁদাবাজিতে বাধা দেয়ায় বাঙালি যুবককে গুলি করে হত্যা

fec-image

 

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির সীমানা লাগোয়া ফটিকছড়ির ভুজপুরের বড়ইতলী নামক একটি দুর্গম এলাকায় বাসায় এসে আবদুর রহিম বাদশা (২৫) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা।

শনিবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে এ হত্যার ঘটনাটি ঘটে। নিহত রহিম বাদশা বড়ইতলীর মোমিনুল হক সর্দারের ছেলে।

চাঁদাবাজিতে বাধা দেয়ার জের ধরে পাবত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফের প্রসীত গ্রুপের সন্ত্রাসীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। তবে এ অভিযোগের ব্যাপারে সংগঠনটির পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রামগড় বিজিবি জোন কমান্ডার লে.কর্নেল মো. তারিকুল হাকিম জানান, ঐ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই যৌথ অভিযান শুরু করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, ফটিকছড়ির ভুজপুর থানাধীন দাঁতমারা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা বড়ইতলীতে জনৈক কালা’র বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন আব্দুর রহিম বাদশা। প্রতিদিনের মত শনিবার রাত ১২টার দিকে রহিম ও তার সঙ্গি লিটন এবং অপর একজন ঐ ভাড়া বাসায় ঘুমাচ্ছিলেন।

এসময় ইউপিডিএফের প্রসীত গ্রুপের কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ঐ বাসা ঘেরাও করে ফেলে। সন্ত্রাসীদের একজন ঘরের জানালা দিয়ে ঘুমন্ত রহিম বাদশার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে এক রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। রবিবার সকালে খবর পেয়ে ভুজপুর থানার পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে।

দাঁতমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জানে আলম বলেন, খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার সীমানায় অবস্থিত বড়ইতলী গ্রামটি অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে তিনি নিজেইও পুলিশের সাথে গিয়েছিলেন নিহতের লাশ উদ্ধার করতে। তিনি বলেন, একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি নিহত রহিম বাদশা পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ঐ দুর্গম এলাকায় জনৈক কালা’র বাসায় ভাড়া থাকতো।

স্থানীয় সুত্র জানায়, ভুজপুরের দাঁতমারা ইউনিয়নের বড়ইতলী গ্রামের মধ্যদিয়ে চলাচলকারী বড়ইতলী – রামগড় -দাঁতমারা সড়কে বাঁশ দিয়ে কাঠ, বাঁশবাহী গাড়িসহ বিভিন্ন পন্যবোঝাই গাড়ি এবং ঐ এলাকায় উৎপাদিত কৃষিজ পন্য থেকে চাঁদা আদায় করতো পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। কখনো ইউপিডিএফ আবার কখনো জেএসএস এ চাঁদা আদায় করতো। বতর্মানে ইউপিডিএফের প্রসীত থীসা গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ঐ এলাকাটি।

গত কয়েক মাস আগে রহিম বাদশা তার সমর্থিত লোকজন নিয়ে ঐ রাস্তায় পাহাড়ি সন্ত্রাসদের চাঁদা আদায়ে বাধা দেয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে হালকা মারামারির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় পাহাড়ি বাঙ্গালী এ দু পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। স্থানীয়ভাবে দু পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়।

পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের এ চাঁদাবাজি বন্ধের পাশাপাশি নিজেদের আধিপত্য বিস্তার সুদৃঢ় করতে জনৈক কালার বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে অবস্থান নেয় রহিম বাদশা ও তাঁর সঙ্গিরা। দুপক্ষের দীর্ঘদিনের এ বিরোধের জের ধরে রহিম বাদশাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

এদিকে, রামগড় বিজিবি জোনের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. তারিকুল হাকিম রবিবার সকালে ঘটনাস্থল পর্রিদশন করেছেন। তিনি বলেন, ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা দীঘদিন ধরে দুর্গম ঐ এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কমকান্ড চালাচ্ছে। তাদের এ চাঁদাবাজির কাজে বাধা দেয়ার জের ধরেই রহিম বাদশাকে তারা হত্যা করেছে বলে সবারই ধারণা। তিনি বলেন, ঐ এলাকায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই যৌথ অভিযান চালানো হবে।

হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনো কোন মামলা হয়নি । দাঁতমারা ইউপি চেয়ারম্যান মো: জানে আলম বলেন, নিহতের পিতা মোমিনুল হক সর্দার মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউপিডিএফ'র, গুলি, চাঁদাবাজিতে
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন