উখিয়ায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শতাধিক ভুক্তভোগীর স্মারকলিপি
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাসপাতালের জমির দখল অন্যকে ছেড়ে দেওয়া, সরকারি সম্পদ চুরি, হাসপাতালের কোয়ার্টার বরাদ্ধে অনিয়ম, জরুরী রোগী পরিবহনের দুটো এ্যাম্বুলেন্স অকেজো করে ফেলে রাখা, সরকারী গাড়ী ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করাসহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি তদন্ত পূর্বক শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়া দাবীতে শতাধিক ভুক্তভোগী এলাকাবাসী কক্সবাজার সিভিল সার্জনকে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
শনিবার (২০ জুলাই) বিকেলে কক্সবাজার সিভিল সার্জনকে ভুক্তভোগী উখিয়াবাসীর পক্ষে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মুজিবুল হক আজাদ, কৃষকলীগ সভাপতি সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক তাসহীদ চৌধুরী, জাতীয় শ্রমিকলীগ সভাপতি সরওয়ার কামাল পাশা,উখিয়া ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম আজাদ সহ ১১১ জন।
অভিযোগে জানা যায়, গত দেড় বছর ধরে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল মান্নান নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাসপাতালকে সীমাহীন অনিয়ম, দূর্নীতির ও লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছে। উক্ত কর্মকর্তাকে জড়িয়ে কয়েক মাস পূর্বে তার নারী কেলেঙ্কারি ও দূর্নীতির খবর ফেসবুকে প্রকাশ পায়।
উখিয়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এই সরকারি হাসপাতালকে নিজেদের আখের গোছানোর কেন্দ্রে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে উখিয়া হাসপাতালে ৩টি সরকারী এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও উক্ত কর্মকর্তার গাফেলতিতে ২ টি এ্যাম্বুলেন্স অকেজো পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জরুরী রোগী পরিবহনের ব্যবস্থা না করে তিনি বিভিন্ন এনজিওকে নানা চাপ প্রয়োগ করে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তার অফিসে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন সহ সাজ সজ্জা করেছেন।
সম্প্রতি হাসপাতালের বাউন্ডারি নির্মাণের টেন্ডার হওয়ায় তিনি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনও,বা সহকারী কমিশনার (ভূমি)সহ জমি পরিমাপে কারো সহযোগিতা না নিয়ে টিকাদারকে দিয়ে কাজ শুরু করেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসপাতাল সংলগ্ন কতিপয় বসতি ওয়ালাদের সাথে গোপন আঁতাত করে প্রায় কোটি টাকার সরকারী জমির দখল ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরেজমিনে পরিদর্শন করে পরিমাপ না করে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ বন্ধ করে দেন।
সরকারী ষ্টোরে পর্যাপ্ত ঔষধ মজুদ থাকার পরও রোগীদের না দিয়ে তা তার অনুগতদের দিয়ে চোরাই পথে বিক্রি করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় অনগ্রসর লোকজনের স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারী ভাবে নতূন জীপ গাড়ী দেয়া হয় গত বছর। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উক্ত গাড়ী নিয়ে নিজের ও স্বজনদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। সরকারী বিধি নিষেধ থাকার স্বত্বেও তিনি সরকারী গাড়ীকে ব্যক্তিগত গাড়ীর ন্যায় কক্সবাজার জেলার বাইরে নিজ জেলা চট্টগ্রাম ও নিজ উপজেলা আনোয়ারায় যাতায়াত করে থাকেন নিয়মিত।
এছাড়াও মা ও শিশুদের জন্য স্থাপিত ‘নিমানিশু’ হাসপাতাল থেকে ২টি ল্যাপটপ ১টি সিসি টিভি চুরি হয়ে গেলেও অদৃশ্য কারনে তা কোন তদন্ত করা হয়নি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার একান্ত লোক হওয়ায় হাসপাতালে নিয়োগকৃত দন্ত চিকিৎসক ডাঃ রাজীব নাথ হাসপাতালে চিকিৎসা না করে রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে রোগীদের নিকট থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে এই চিকিৎসক। তার অভিযোগ করলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তা ব্যবস্থা নেয়া হয়না।
শনিবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা স্বাস্থ্য উন্নয়ন সমম্বয় সভা সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ আবদুল মতিনের সভাপতিত্বে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষের দিকে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল মান্নানের বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতির বিরুদ্ধে স্মারকলিপি আকারে সিভিল সার্জনের নিকট অভিযোগ করেন।
শনিবার কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ আবদুল মতিন উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।