parbattanews

কাউখালীতে চাকমা স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ: শাস্তি ৫০ বেত্রাঘাত ও একটি শুকর দান!

কাউখালী প্রতিনিধি:
রাঙামাটির কাউখালীর ঘাগড়া ইউনিয়নের বেতছড়ি উপজাতীয় পাড়ায় ১৬ বছরের এক চাকমা কিশোরী স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় ঐ কিশোরীর বাড়ীর পার্শ্বে তারই প্রতিবেশী মৃত সবিক্কা চাকমার ছেলে রিপন চাকমা (২৫) কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়।

এ ব্যাপারে ধর্ষিতার বাবা মা রাতে থানায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নিলেও স্থানীয় কার্বারী, মাতাব্বর ও পাহাড়ের সশস্ত্র গ্রুপের ভয়ভীতির কারণে মামলা না করেই বাড়ী ফিরে আসেন। কাউখালী থানার ওসি কবির হোসেন জানান, ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত নয়। তাছাড়া এ বিষয়ে কেউ আমাদের এখনো অভিযোগ করেনি।

ধর্ষিতা কিশোরীর বাবা সবিচন্দ্র চাকমা ও মা পূর্ণিমা দেবীর সাথে কথা বললে তারা জানায়, গত ২ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৫টায় তাদের একমাত্র মেয়ে কাউখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ১৬ বষয় বয়সী অন্তিকা চাকমা (ছদ্ম নাম), সুপারী বিক্রি করতে পার্শ্ববর্তী বাড়ীতে যায়। সেখান থেকে বাড়ী ফেরার পথে একই এলাকার মৃত সবিক্কা চাকমার ছেলে রিপন চাকমা (২৫) জোরপূর্বক তাদের একমাত্র মেয়েকে মুখে কাপড় চেপে ধরে পাশ্ববর্তী জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে।

সন্ধ্যায় তাদের মেয়ে অন্তিকা চাকমা (ছদ্ম নাম), বাড়ী ফিরে কান্না কাটি করতে থাকে এবং বিষয়টি বাবা মা বলে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ন’টায় দূর্গম পাহাড় অতিক্রম করে মেয়েকে নিয়ে হাসপতালে ছুটে আসেন বাবা সবিচন্দ্র চাকমা ও মা পুর্ণিমা চাকমা। কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মোঃ ইমরান হোসেন ধর্ষিতার স্বীকারোক্তি মোতাবেক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

কিন্তু মামলা থেকে বিরত রাখা ও ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাতালে ছুটে আসেন স্থানীয় কার্বারী জয়ধন চাকমা ও এলাকার মাতব্বর হিসেবে পরিচিত কার্যা চাকমা। তারা ধর্ষিতার বাবা মাকে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে স্থানীয়ভাবে মিমাংসার কথা বলে রাতেই এলাকায় ফিরিয়ে নিয়ে যান।

স্থানীয়ভাবে কি বিচার করা হবে জানতে চাইলে জবাবে ধর্ষিতার বাবা জানান, সামাজিক রীতি অনুসারে ধর্ষককে ৫০ বেত্রাঘাত এবং ধর্ষিতাকে একটি শুকর প্রদান করার মধ্যেমেই এমন জঘন্য কাজের বিচার কাজ সম্পন্ন করা হয় বলে তিনি জানান।

কিশোরীর বাবা জানান, সামাজিক সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মামলা মোকাদ্দমা করতে গেলে তাদের উপর নির্যাতন চালানো হবে এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও রয়েছে বলে তিনি জানান। তবে তিনি জানান, যত হুমকিই আসুক সামাজিক প্রথার নামে এমন অন্যায় আমরা মেনে নেব না। আমরা ন্যায় বিচার চাই এবং প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজাতীয় সমাজে সামাজিক বিচারের নামে এমন প্রথা প্রচলিত রয়েছে, যেখানে কেউ ধর্ষিতা হলে ধর্ষককে ধর্ষণের জন্য একটি শুকর জরিমানা করা হয়। এই শুকর জবাই করে তার রক্ত দিয়ে ধর্ষিতাকে গোসল করিয়ে তাকে পবিত্র করানো হয়। একই সাথে ওই রক্ত পাড়ায় ছিটিয়ে পাড়া পবিত্র করা হয়। জবাই করা শুকর রান্না করে সমাজের গণ্যমান্যদের খাওয়ানো হয়।

এদিকে ঐ এলাকায় গত এক বছরে পাহাড়ী যুবকদের দ্বারা অর্ধ ডজন ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও বেত্রাঘাত এবং শুকর দানের মাধ্যমে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করা হয়েছে বলে জানালেন ঐ কিশোরীর বাবা সবিচন্দ্র চাকমা।

ফলে লাই পেয়ে পাহাড়ে উপজাতীয় যুবকদের দ্বারা প্রতিনিয়ত ধর্ষণের মত অহরহ ঘটনা ঘটলেও সশস্ত্র গ্রুপ ও স্থানীয় কার্বারীদের চাপে তা প্রকাশ করতে সাহস পায়না ধর্ষিতা ও তার পরিবার।

এ বিষয়ে ঐ এলাকার কার্বারী জয়ধন চাকমা ও কথিত মাতাব্বর কার্যা চাকমার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।

কাউখালী থানার ওসি মোঃ কবির হোসেন জানান, এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Exit mobile version