কাউখালী উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে হবে: চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার

কাউখালী প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান বলেছেন, মানব সম্পদ এদেশের জন্য বোঝা না। মানব সম্পদকে সম্পদে পরিণত করতে সরকার সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। তাই কাউখালী উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে হবে।

মঙ্গলবার (২৭মার্চ) সকাল ১১টায় কাউখালী উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ চত্তরে কাউখালী উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত কর্মসূচীর আওতায় উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তিতায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, যারা শারিরীকভাবে স্বচ্ছল হওয়ার পরই মানুষের কাছে হাত পেতে দেয় মূলত তাদের কোন ব্যক্তিত্ব নেই। সরকার দেশব্যাপী ভিক্ষুকদের পূনর্বাসনের কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এর পরও যদি কেউ ভিক্ষাবৃত্তি করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক এ.কে.এম মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম. চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ¯েœহাশীষ দাশ, কাউখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী সফিকুল আলম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান মংসুউ চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এ্যানি চাকমা, কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসেন, বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান মো. বেলাল উদ্দিন প্রমূখ।

পরে প্রধান অতিথি, কাউখালী উপজেলার ৪ ইউনিয়নের মধ্যে ৩ ইউনিয়ন, ঘাগড়া, কলমপতি ও বেতবুনিয়া ইউনিয়নের মোট ২৭ জন ভিক্ষুকের মাঝে ৮জনকে ভ্যান গাড়ী, ৬টি করে মুরগী, চাল, ডাল, লবন ও কৃষি উপকরণ, ৩জনকে ১টি করে সেলাই মেশিন, ১টি ছাগল, ৬টি করে মুরগী, চাল, ডাল, লবন ও কৃষি উপকরণ এবং অবশিষ্ট ১৬ পরিবারের মাঝে ২টি করে ছাগল, ৬টি করে মুরগী, চাল, ডাল, লবন ও কৃষি উপকরণ বিতরণ করেন।

উপকরণ বিতরণের শুরুতেই ভিক্ষুক না হয়েও মা কাঞ্চন মালার পক্ষে লুঙ্গী পড়ে ভ্যান গাড়ী গ্রহণ করতে আসেন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম খলিল। এসময় প্রধান অতিথি তার পোষাক দেখে ভিক্ষুক কিনা জিজ্ঞেস করলে তা মা ভিক্ষা করেন বলেন জানায়। এতেও প্রধান অতিথির সন্দেহ দুর না হলে তাকে মাঠে ভ্যান চালিয়ে দেখাতে বলেন। অবশ্য তিনি ভ্যান চালিয়ে পারদর্শিতার পরিচয় দিতে ভুল করেননি।

এদিকে ৪ ইউনিয়নের মধ্যে ঘাগড়া, কলমপতি ও বেতবুনিয়ার তালিকাভুক্ত ২৭ ভিক্ষুক পরিবারের মধ্যে ভিক্ষাবৃত্তির সাথে যুক্ত এমন পরিবারের সংখ্যা খুজে পাওয়া গেছে মাত্র ১৩টি। অবশিষ্ট ১৪ পরিবারেই মোটামোটি স্বচ্ছল এবং ভিক্ষাবৃত্তির কোন সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে ঘাগড়া ইউনিয়নে ১৪ জনের মধ্যে ৮ জনের ভিক্ষাবৃত্তির সাথে সম্পৃক্ততা নেই। সদর ১নং ওয়ার্ডের কাশখালী গ্রামের আমিনা বেগম ৭-৮ কানি জমির মালিক হয়েও ভিক্ষুকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ মানুষ। ১নং ওয়ার্ডের মৃত বাবুল বড়–য়া স্ত্রী সুজা বড়–য়া জানান, ভিক্ষুক না হয়েও যদি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে সুবিধা পাওয়া যায়, তাহলে কাল থেকে আমিও ভিক্ষা করবো।

কলমপতি ইউনিয়নে ১১জনের মধ্যে ৫ পরিবার মোটামোটি ভিক্ষাবৃত্তির সাথে জড়িত থাকলেও বাকী ৬ পরিবারই ভুয়া বলে ধারনা করছে সাধারণ মানুষ। অপর ইউনিয়ন ফটিকছড়ি তাদের ইউনিয়নের কোন ভিক্ষুক না থাকায় তারা তাদের ইউনিয়নকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষনা করেছে।

এলাকাবাসী জানান, এটি ভাল একটি উদ্যোগ ছিল। কিন্তু নির্ভুল তালিকা ও জনপ্রতিনিধিদের ভুল পরিচালনার কারণে মহৎ একটি উদ্যোগ ভেস্তে যাবে হয়তো। এতেকরে যারা প্রকৃত ভিক্ষুক তারা ভিক্ষুকই থেকে যাবে। তাছাড়া ভিক্ষুক না হয়েও যদি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে অস্বচ্ছল পরিবারগুলো সুবিধা আদায়ের জন্য ভবিষ্যতে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়বে। এব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন