ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের অগ্রাধিকার দিতে পিএসসিকে বলে দিয়েছি- শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিনিধি, পার্বত্যনিউজ:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যদিও আমরা কোটা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করেছি কিন্তু তার পরেও পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে আমি বলে দিয়েছি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাহাড়ি হোক বা সমতলের হোক সেখানে যে প্রার্থি থাকবে তারা সব সময় অগ্রাধিকার পাবে। তার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি এবং করে দেবো। তিনি আজ বিকেলে রাজধানীর বেইলী রোডে ‘শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম হিল ট্রাক্টস্ কমপ্লেক্স’-এর উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি অধিগ্রহণ করতে গেলে আমরা সমতলে যেভাবে ক্ষতিপুরণ দিয়ে থাকি সেখানে সেভাবে হয় না। কারণ ভূমির মালিকানা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সেকারণে আমি বলবো ব্রিটিশ আমলে কী আইন করে গেছে সেটাকে অনুসরণ না করে আমাদের দেশীয় যে আইন রয়েছে সে আইন অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ তার নিজের জমির মালিকানা যদি নিজের নামে পায় তাহলে তারা এ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো যেমন ক্ষতিপুরণ সেটা কিন্তু তারা পেতে পারে। ভূমি কমিশন যেন কাজ করতে পারে সেজন্য সহযোগিতা চাইছি। কেননা যতোবার ভূমি কমিশন করেছি কাজ করতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, প্রযুক্তি সমৃদ্ধ হচ্ছে, দিন পরিবর্তন হচ্ছে। কাজেই আমি মনে করি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রত্যেক মানুষই নিজ নিজ ভূমির অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন।

পার্বত্য বাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আর কোনো কোনো সংঘাত নয়, আপনারা সকলে ভাল থাকবেন। যে শান্তি চুক্তি আমরা করে দিয়েছে তার মাধ্যমে যেন শান্তি বজায় থাকে। শান্তির মধ্য দিয়েই সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে। শান্তির পথ ধরেই আসবে প্রগতি, প্রগতির পথ ধরেই আসবে সমৃদ্ধি আর এই সমৃদ্ধির মাধ্যমেই আমরা ক্ষুধা মুক্ত ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

১৯৭০ সালে পার্বত্য পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল সফরের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাগে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন, এরমধ্যে তিনবার তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশে শান্তিচুক্তি হয় কিন্তু অস্ত্র সমর্পন করেনি। কিন্তু এখানে ১৮জন সরাসরি আমার নিজের হাতে অস্ত্র সমর্পন করে। তাদের বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে আনসার ও পুলিশে চাকরি দেয়া হয়। যারা শরণার্থি ছিলো তাদেরকে ফিরিয়ে এনে যে যে দাবী করেছে সে দাবী অনুযায়ী এবং শান্তিচুক্তি মোতাবেক তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বলেন, শান্তিচুক্তির বাইরেও অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। রাস্তাঘাট, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। যেখানে যা দরকার করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশে যা করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে তা করা হয়েছে, এর বাইরেও বিশেষভাবে বরাদ্দ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন করা হয়েছে। আঞ্চলিক পরিষদের জন্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান যে জায়গা চেয়েছেন গণপূর্ত বিভাগের সেই বিশাল জায়গা আমি তাকে দিয়ে দিয়েছি। আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সেখানে তার অফিস, বাসভবনসহ একটা বিশেষ প্রকল্প করে দেবে সেটা আমরা বাস্তবায়ন করে দেবো।

তিনি বলেন, এছাড়াও আমরা সেখানকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কাজ করছে, এছাড়াও আমরা বিশেষভাবে বরাদ্দ দিচ্ছি। এক্ষেত্রে আমি আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদকে বলবো, স্ব স্ব এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তারা প্রকল্প প্রস্তাব করতে পারে যা বিশেষভাবে বরাদ্দ দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে প্রায় ১৬৫৯ কি, মি রাস্তা করে দিয়েছি। বিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেল করে দিয়েছি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র ব্যোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেন, আজকে শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের উদ্বোধন পার্বত্য চট্টগ্রাম বাসীর জন্য সুসংবাদ। এই কমপ্লেক্সের ফরে পার্বত্যবাসী আরো অনেক আশাবাদী হবে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ২০ বছর আগে। আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার সুযোগ লাভ করেছি। আমি দেখেছি বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাজ, বাংলাদেশের সচেতন সমাজ, নেতৃত্ব যারা বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারক তাদের মধ্যে অধিকাংশই পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে জানেন না বা জানার আগ্রহ দেখিনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ অবহিত নন। যেকারণে পাহাড় ও সমতলের মধ্যে অনেক কিছু জানার বিষয় রয়ে গেছে। এই কমপ্লেক্সের মধ্য দিয়ে সেটা বহুলাংশে দূরীভূত হতে পারে।

সন্তু লারমা বলেন, আজকে এই যে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স বিগত বিএনপি সরকারের সময় একটা উদ্যোগ ছিলো, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটা বাস্তবরূপ লাভ করতে পারেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটা বিশেষ উদ্যোগের কারণে বাস্তবরূপ লাভ করতে পেরেছে।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে সমতলে ও পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরা ভাল নেই। তারা যাতে ভাল থাকতে পারে সেজন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি বলেন, শান্তিচুক্তির ৭২ টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৫ টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৯টি ধারা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। উত্তপ্ত পাহাড়ের যেসকল পরিবার পাশ্ববর্তী দেশে শরণার্থি হিসাবে গিয়েছিল তাদের মাঝে ৬৫ হাজার শরণার্থিকে নিজ মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে এনে তাদের প্রয়োজন এবং প্রতিশ্রুত সুযোগ সুবিধাসহ পুনর্বাসন করা হয়েছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি পিরে আসতো না। আজ সেই প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর বুকে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের একটি ঠিকানা গড়ে দিলেন। নান্দনিক একই কমপ্লেক্স করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি, মানুষ, প্রকৃতি ও জলবায়ু, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের ঐতিহ্য ও কৃষ্টির সাথে সামহ্জস্য রেখে। দুইটি বেসমেন্টসহ প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার বর্গফুটের এই কমপ্লেক্সে রয়েছে তিনটি অংশ।

এগুলো হলো, পাবলিক জোন, সেমি পাবলিক জোন ও প্রাইভেট জোন। পাবলিক জোনে অস্থায়ী প্রদর্শনী স্টেজ, ৩৫০ আসন বিশিষ্ট মাল্টিপ্লেক্স হল, রেস্তরা ও এম্পি থিয়েটার রয়েছে। সেমি পাবলিক জোন হলো প্রশাসনিক ব্লক। ৬ তলা বিশিস্ট এই ভবনের প্রতি ফ্লোরে রয়েছে ৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের স্থান। এ ছাড়াও এ ব্লকে সেমিনার হল, সম্মেলন কক্ষ, লাইব্রেরী, আর্কাইভ কক্ষ। এ আর্কাইভ কক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্য তুলে ধরার সুযোগ থাকবে। এর মাধ্যমে সমতল ভূমির বাসিন্দারা পার্বত্য চট্টগ্রামের সভ্যতা সম্পর্ক জানার সুযোগ পাবে। এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের সাথে সমতল ভূমির মানুষের মেলামেশা ও বন্ধন সৃষ্টি হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং এমপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাদার অভ চিটাগাং হিল ট্রাক্টস রূপে আখ্যা দিয়ে বলেন, তার আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে কী হয় নাই। রাস্তা, ঘাট, বিদ্যুৎ, ব্রিজ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ সব হয়েছে এবং আগামী দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব অসমাপ্ত বিষয় রয়ে গেছে সেগুলো যদি কেউ সমাপ্ত করেন তিনি শেখ হাসিনাই করবেন। তাই আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাই বোনদের বলতে চাই, আমরা অকৃজ্ঞ হবো না। আগামী দিনগুলোতে উন্নয়নর জন্য,শান্তিচুক্তি পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য আগামী দিনে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। সেটাই আমাদের শপথ।

অনুষ্ঠানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কর্মকর্তাগণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন