চকরিয়ায় ‘কেঁচো সার’ উৎপাদন ও ব্যবহারে ব্যাপক সফলতা, বাড়ছে চাহিদা

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কেঁচো সার উৎপাদন ও ব্যবহারে কৃষিখাতে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় হাজার হাজার প্রান্তিক কৃষক।

গোবর মিশ্রিত মাটিতে কেঁচো চাষে তৈরি হয় ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। এ সার উৎপাদন করে শত শত কৃষক পরিবারের ভাগ্যও বদলে যাচ্ছে। পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীল ও স্বাভলম্বী হচ্চে কৃষক।

প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উৎপাদিত এ কেঁচো সার। বাড়ছে এ সারের চাহিদার পরিধি। গোবর মিশ্রিত মাটির তৈরি এ ভার্মি কম্পোস্ট সারে রয়েছে কেঁচোর মল, প্রচুর পরিমাণে হিউমাস ও পুষ্টি উপাদান।

রাসায়নিক সার ব্যবহারে উৎপাদন খরচ যেমন বেশি হয়, ঠিক তেমনি মাটির উর্বরতা শক্তিও হ্রাস পায়। ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার ব্যবহারে মাটির গুণাগুণ ভালো থাকে। তাছাড়া মাটির উর্বরতা ও ফলন উৎপাদনশীলতা খুবই বৃদ্ধি পায়। কৃষকদের উৎপাদন খরচও কম হয়। জৈব সার ব্যবহারে মাটির পানির ধারণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ চলতি অর্থবছরে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর ও জাইকার অর্থায়নে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বর্তমানে কেঁচো সার উৎপাদিত হচ্ছে।

কিভাবে এ ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করবে সেই বিষয়ে উপজেলা ও পৌরসভার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৬০ জন কৃষক-কৃষাণীকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। চলতি মাসের ৩ জুলাই চকরিয়া পৌরসভা এলাকার ১১ জন, সাহারবিল ইউনিয়নের ৬ জন, কাকারা ইউনিয়নের ৪ জন, বিএমচর ইউনিয়নের ৪ জন, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৪ জন, হারবাং ইউনিয়নের ৪ জন, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের ১০ জন ও ফাঁশিয়াখালী ইউনিয়নের ৫ জন কৃষককে জাইকা প্রকল্পের অর্থায়নে ও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগীতায় এ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

ইতিপূর্বেও উপজেলা কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্বাবধানে গত ১৬ জানুয়ারীতে উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ১ জন, চিরিংগা ইউনিয়নের পালাকাটা এলাকার ২ জন, লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ১ জন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ১ জন, পৌরসভা এলাকার ১ জন, ফাঁশিয়াখালী ইউনিয়নের ২ জন, হারবাং ইউনিয়নের ১ জন, খুটাখালী ইউনিয়নের ১ জন ও পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ১ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক কৃষককে ১৫’শ টাকার কৃষি উপকরণ ছাড়াও জনপ্রতি ৩’শ থেকে ৯’শ কেঁচো ও ১ থেকে ৩টি সিমেন্টের তৈরী রিং প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যে কৃষকরা প্রশিক্ষণ পেয়ে সফলভাবে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করে দিয়েছেন। ধান, টবের সবজি, ফলজ ও ছাদের বাগানে কেঁচো সার ব্যবহার করে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ।

কৃষিবিদ মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ বলেন, কেঁচো গর্ত করে মাটির উপরের স্তরের খাবার খায়। খাবার খেয়ে যে মল ত্যাগ করে ওটাই ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। উৎপাদিত এ জৈব সারের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। কৃষকদের মাঝেও দ্রুত সময়ে পরিচিত লাভ করছে। প্রশিক্ষণ পাওয়া কৃষকদের বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। একজন কৃষকের সফলতা দেখে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হয়ে তারাও শুরু করেন এ সার তৈরির কাজ। সার তৈরির সকল উপকরণ কৃষকদের সরবরাহ করেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

তিনি আরও বলেন, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া কোন বিকল্প নেই। জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো ও কৃষকদেরকে পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতেই সরকার এ ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ভার্মি কম্পোস্ট সার ফসলের জন্য খুবই উপকারী। এতে মাটির উর্ববরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রাসায়নিক সারের মত জমির ক্ষতি করে না। কৃষকের কাছে এই সারের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে।

কৃষিবিদ আতিক উল্লাহ বলেন, উপজেলায় ইতোমধ্যে ১০ জন কৃষক প্রশিক্ষণ নিয়ে কেঁচো সার তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। পাশাপাশি উপজেলার ৪৪টি কৃষক মাঠ স্কুলে অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা পাঠদান দিচ্ছেন কৃষক-কৃষাণীদের। গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল পালন, মুরগী পালন ও কিভাবে সবজি চাষ করে সাফল্য হবে তা হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছেন প্রান্তিক কৃষক।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন