ছাত্রী কেলেংকারীর সেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এবার জালিয়াতির অভিযোগ

fec-image

এবার জেলা প্রশাসকের পত্র জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে সেই ছাত্রী কেলেংকারীর দায়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ছৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে। এক মাসের ব্যবধানে একই স্মারকে তিনটি পত্র নিয়ে এলাকায় নতুনভাবে তোলপাড় শুরু হয়েছে। জড়িত অধ্যক্ষের শাস্তির দাবি জানিয়ে দুটি অভিযোগ ইউএনও’র কাছে দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু অধ্যক্ষের জালিয়াতির ঘটনায় মাদরাসা কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রকাশ হওয়া তিনটি পত্রের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট আলীম মাদরাসার নির্বাহী কমিটির ২ জন শিক্ষানুরাগী সদস্য মনোনয়নের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে গত ৫ নভেম্বর তিনজনের নামের তালিকা প্রেরণ করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সনের ১৩ ডিসেম্বর ০৫.৪২.০৩০০.২০৯.০২.০০৯.১৮-৩৩৬ স্মারক মূলে নির্বাহী কমিটির জন্য মোহম্মদ শফিউল্লাহ ও তসলিম ইকবাল চৌধুরীকে মনোনয়ন প্রদান করেন জেলা প্রশাসক।

কিন্তু সম্প্রতি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে মাদরাসা অধ্যক্ষের জমা দেওয়া কাগজপত্র ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের নির্বাহী কমিটির প্রজ্ঞাপন কপিতে গড়মিল ধরা পড়ে। নাইক্ষ্যংছড়ি জনতা ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আসিফ হাসান বলেন- অধ্যক্ষ কর্তৃক ব্যাংকে জমা দেওয়া নির্বাহী কমিটির কাগজে ৫নম্বর ক্রমিকে সদস্য হিসেবে তসলিম ইকবাল চৌধুরীর নাম উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু মাদরাসা বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপন কপির ৫নম্বর ক্রমিকে রয়েছে মো: ছৈয়দ আলম এর নাম। এই বিকৃত তথ্যের জন্য অধ্যক্ষের কাছে ব্যখ্যাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে।

এদিকে অধ্যক্ষ ছৈয়দ হোসেন যে স্মারক নম্বরটি ব্যবহার করে দুটি চিঠি চালাচালি করেছেন সেই স্মারক নম্বর অনুবলে জেলা প্রশাসক আশারতলী তাফহীমুল কোরআন দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

এই প্রসঙ্গে আশারতলী তাফহীমুল কোরআন মাদরাসার সুপার নূর মোহাম্মদ এই প্রতিবেদককে বলেন- গত বছর ২৩ অক্টোবর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের ০৫.৪২.০৩০০.২০৯.০২.০০৯.১৮-৩৩৬ স্মারক নম্বরের চিঠিটি অধ্যক্ষ ছৈয়দ হোসেন আমার কাছ থেকে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে দু’মাস পর জানতে পারি ওই স্মারকে দুটি চিঠি তৈরী করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে গত ১৪জুলাই লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের শিক্ষা শাখায় খোজঁ নিয়ে ও তিনটি চিঠি পর্যালোচনায় দেখা যায়, মাদরাসা অধ্যক্ষ ছৈয়দ হোসেন অত্যন্ত কৌশলে জেলা প্রশাসকের স্মারক নম্বর, তারিখ, স্বাক্ষরসহ সব তথ্য ঠিক রেখে শুধুমাত্র মধ্যখানে পছন্দের ব্যক্তির নাম বসিয়ে এই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তবে আশারতলী মাদরাসার চিঠিতে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরের নিচে তারিখ উল্লেখ থাকলেও মদিনাতুল উলুম মাদরাসার দুটি চিঠিতে তারিখ নেই।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন- এই জালিয়াতি দেখে আমি তো প্রথমে অবাক হয়েছি। এক স্মারকে তিনটি চিঠি দেখে আমার সন্দেহ হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি অধ্যক্ষ ছৈয়দ হোসেন নিজের দূর্নীতি ধামাচাপা ও কাউকে খুশি করার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের চিঠি থেকে আমার নাম কেটে অন্যজনের নাম কম্পোজ করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। আর দুটি চিঠির মধ্যে একটিতে অধ্যক্ষ ছৈয়দ হোসেন নিজে সত্যায়িত করেছেন অন্যটি রিসিভ কপি দেখানো হয়েছে। যার কারনে অধ্যক্ষ ছৈয়দ হোসেন পত্র দুটি অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। এই ঘটনায় গত ১০ জুলাই নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর তিনি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বহু অভিযোগের পরও বির্তকিত অধ্যক্ষ বহাল রাখার জন্য কমিটিকে দায়ী করেছেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা। বিগত সময়ে মাদরাসার আর্থিক লেনদেন, অনিয়ম দূর্নীতি বৈধ করার জন্য এই প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ।

তবে অধ্যক্ষকে প্রশ্রয় দেওয়ার কথা অস্বীকার করে মাদরাসার নির্বাহী কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, কমিটির সদস্য ছৈয়দ আলমের নাম কারো কাছে মনপূত না হওয়ায় পরবর্তী তসলিম ইকবালের নাম সংযোজন করে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিয়ে মাদরাসা বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। তবে একই স্মারকের চিঠির বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। তিনি আরো বলেন- কমিটি গঠনের পর এখনো এক সাথে বসা হয়নি, যার কারনে মাদরাসা অধ্যক্ষকে নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে সে বিষয়ে আলোচনা করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ ছৈয়দ হোসেন বলেছেন- একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে কেউ তার পক্ষে, কেউ বিপক্ষে থাকতে পারে। বিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে। চিঠি যারা জালিয়াতির কথা বলছে তারাই মনে হয় ষড়যন্ত্র করে দুই রকম চিঠি বানিয়েছে। ব্যাংকেও তারা নানাভাবে ভূল ধারণা দিয়েছে। ব্যাংকের চিঠির জবাব দু-একদিনের মধ্যে তিনি পাঠাবেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন কচি বলেন- অধ্যক্ষ ছৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্ত করার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন