রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্যর্থতার দায়

জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি এফআরসির

fec-image

সম্প্রতি  জাতিসংঘের এক অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নেওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। আর এই ব্যার্থতার দায় নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব ও তার ঊর্ধ্বতন এক সহকারীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন রোহিঙ্গা একটিভিস্টদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক এফআরসি।

মঙ্গলবার ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন (এফআরসি)-এর এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ।

জাতিগত নিধনের ভয়াবহ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশটি বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও জাতিসংঘের হিসাবে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ এখনও সেখানে থেকে গেছে। ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারে জাতিসংঘের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে চলতি বছর  গুয়াতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গার্ড রোজেনথালকে নিয়োগ দেন মহাসচিব অ্যান্থনিও গুয়েতেরেস। প্রকাশের আগেই তার প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

প্রতিবেদনে মিয়ানমারে জাতিসংঘের কর্মকাণ্ড নিয়ে রোজেনথাল বলেছেন, এটা (মিয়ানমারে সংকট নিরসন) সমষ্টিগত দায়িত্ব ছিলো। একে সত্যিকার অর্থে জাতিসংঘের পদ্ধতিগত ব্যর্থতা বলা যেতে পারে। তিনি বলেন, নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মিয়ানমারে বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন নাকি কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবেন তা নিয়েই একমত হতে পারছিলেন না। আর তৃণমূল থেকে জাতিসংঘের সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ প্রতিবেদন।

এই প্রতিবেদন সামনে আসার পরই জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও মিয়ানমারে সংস্থাটির সাবেক আবাসিক সমন্বয়ক রেনেটা লক দেসালিনকে নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন।

২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ছিলেন দেসালিন। মিয়ানমারে কর্মরত থাকার সময়ে তার বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে এফআরসি’র বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া জাতিসংঘের এক অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন গোপন করেছিলেন দেসালিন।

বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার নীতি-নৈতিকতার এরকম মারাত্মক লঙ্ঘনের পরও দেসালিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এফআরসি বলছে জাতিসংঘ মহাসচিবের যথাযথ ভূমিকার অভাবেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তাদের অভিযোগ ব্যর্থতার জন্য দেসালিনকে দায়ী করার পরিবর্তে তাকে ভারতের জাতিসংঘের প্রধান কর্মকর্তা নিয়োগ করে পুরস্কৃত করেছিলেন গুতেরেস।

মিয়ানামারের নির্বাসিত ভিন্নমতালম্বী ও মানবাধিকার কর্মী মং জার্নি বলেছেন, জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন প্রকাশের পর নৈতিকভাবে, বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ও আইনগতভাবে জাতিসংঘের কোনও পদে গুতেরেস ও দেসালিনের থাকার অধিকার নেই। তিনি বলেন পরিচালকের আসনে বসে তারা বিদ্যমান নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে সংস্থাটিকে ভুল পথে নিয়ে গেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জাতিসংঘ, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন