‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের কারনে শহীদ হয়েছিলেন ফকির ধনা মিয়া: ২২ ডিসেম্বর ওরশ

dana-mihya-majar-pic-copy

রাঙামাটি প্রতিনিধি:

শাহছুফি ধনা মিয়া (রঃ) প্রকাশ ফকির মামা আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী একজন সুফি ব্যক্তিত্ব। আল্লাহ ভক্তের প্রতীক, তথা অনুকরণীয় এক ইসলামী আদর্শ বলে ব্যপক ভাবে পরিচিত। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই তার মাজারকে শ্রদ্ধা করে এবং তার ভক্তের ও অভাব নেই মিশানো গাল গল্পের । স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এমনই জানা যায়।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা শহরের অদূরে বরকল উপজেলার সুবলং বাজারের পাশে কাপ্তাই হ্রদের মাঝখানে ছোট একটি মাজার শরীফ। স্থানীয়রা জানান, তিনি একজন ধ্রুব তারা বাংলার ইসলামী ধর্ম আকাশে। যদি বলি বাংলাদেশের ইসলাম প্রচারের সরাসরি তার কি কোন ভূমিকা আছে কি? এর কথায় উত্তর- না। ধর্মীয় বিশ্বাসের উত্তপ্ত হাওয়া সাধারণ কেটে খাওয়া মানুষের বিচার বুদ্ধি কতখানি দূরীভূত করে ধর্মের রঙিন বর্ণণা কিভাবে তাদের নেশা গ্রস্থ করে রাখে। তারা যে সত্য অসত্য বিচার তথ্য প্রমাণের খোঁজ রাখে না। ধর্মের অলৌকিকত্বে সহজে মুগ্ধ হয়ে তারা ছাইপাসে ও পূর্ণ বিশ্বাস আনে।

মাজার জিয়ারত করতে আসা কয়েকজন ধর্মপ্রাণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধনা মিয়া ফকির মামা (রঃ) এর মাজার জিয়ারত করতে আমাদের খুবই ভালো লাগে, আমরা কিছু দান করি  এবং তার দোয়ায় যেন আমাদের মঙ্গল হয়। ভক্তরা আরও জানান, আমরা মামার (রঃ)  দোয়ায় অনেক সাফল্যে অর্জন করেছি তাই শাহছুফি ধনা মিয়া ফকির মামা (রঃ) দরবারে আসি।

মাজারের খাদেম মোঃ আতর আলী ধনা মিয়া ফকিরের সম্প্রতি একটি ঘটনা জানান, একদিন এক জেলে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার করছিল। হঠাৎ এক উপজাতি সন্ত্রাসী নৌকা, জালসহ তাকে অপহরণ করে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যায়। তখন জেলে মুক্তির আশায় হযরত ধনা মিয়া ফকিরের উছিলায় আল্লাহর নাম স্মরণ করেন। আকস্মিক এক মহিলা কন্ঠে একজন এসে জিজ্ঞাসা করলেন আপনার কি হয়েছে? তখন জেলে তার ঘটনা খুলে বললেন, পরে সেখান থেকে অপহরণকারী নিজেই জেলেকে মুক্তি দেয়। তিনি আরও জানান, সৃষ্টিকর্তার কাছে কোন জাতি ভেদাভেদ নেই। এখানে সব জাতি ধর্ম নির্বিশেষের মানুষ প্রতিনিয়ত মামার দরবার শরীফে আসে।

ধনা মিয়া ফকির মৃত্যুবরণের সংক্ষিপ্ত ঘটনা: ধনা মিয়া ফকির ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘জয় বাংলা  আর দেশ স্বাধীন’ এ শ্লোগান দেয়ার অপরাধে তাকে হানাদার ও রাজাকাররা নৃশংসভাবে খুন করে। পওে তাকে ঘটনাস্থলের কাছে বরকল উপজেলার সুবলং বাজারে পাশে জলবেষ্টিত একটি দ্বীপে সমাহিত করা হয় । তার পবিত্র মাজার শরীফের  প্রসিদ্ধি উপজেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন জেলার মানুষের মনে ঠাঁই কওে নিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঘাতকের হাতে নিহত এই সাধক তাই ধনা মিয়া ফকিরের নামেও সমধিক পরিচিত।

মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু তাহের জানান, ’মামার মাজারে সব ধরনের দান টাকা পয়সা সব ধনা ফকির মামা’র দরবারের জন্য ব্যয় করা হয়। মাজার সং¯কারের জন্য রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ উন্নয়ন বোর্ড বেশ অর্থ ব্যয় করেছে। নতুন কওে সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়ায় আমরা রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে আবেদন করেছি। আশ্বাস পেয়েছি এখনো কোন বরাদ্ধ পাইনি।’

মাজার কমিটির সহ-সভাপতি সুজন কুমার শীল জানান, ‘আমরা প্রতি বছর ওরশ শরীফ পালন করি। তবে আশাকরছি এ বছর জাঁকজমকভাবে পালন করবো। তিনি আরও জানান, আমাদের ওরশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চেয়েছি। যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। তবে আগামী ২২ শে ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার আমাদের শহীদ শাহছুফি ধনা মিয়া (রঃ) এর বার্ষিক ওরশ শরীফ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে দাওয়াত জানিয়েছি।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন