টানা বর্ষণে নাইক্ষ্যংছড়ির পাঁচ ইউনিয়নে বুরো ধান ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি
বাইশারী প্রতিনিধি :
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে অকাল ও বিরামহীন ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ী ও নিম্নাঞ্চল এলাকায় বুরো ধান ও সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়া ও টানা বর্ষনের ফলে বুরো ধানের পাশাপাশি সবজি ক্ষেত ও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কাল বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় বুরো ধান পাকা ও আধা পাকা মাটিতে নুইয়ে পড়েছে উপজেলার কিছু কিছু স্থানে। টানা বর্ষনে নতুনভাবে রোপিত শাক-সবজি ক্ষতির আশংকায় কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, দোছড়ি, সোনাইছড়ি, সদর ও বাইশারী ইউনিয়নে এবার বুরো ধান ও সবজির ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় আর কয়েকদিন পরেই ধান কাটার উৎসব শুরু হবে। বৈরী আবহাওয়া ও বিরানহীন বর্ষনে ধান কাটার সেই উৎসব ভেস্তে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার বুরো মৌসুমে পনের শত হেক্টর জমিতে বুরো ধান ও দুইশত হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার সবজি উৎপাদন হয়েছে। এরই মধ্যে এক হাজার হেক্টর জমিতে উৎষি এবং একশত হেক্টর জমিতে হাইব্রিড চাষাবাদ হয়েছে।
সরজমিনে এই প্রতিবেদক উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে পাহাড়ী এলাকা ও সমতল এলাকা ঘুমধুম, তুমব্রো, ফাট্রাঝিরি, বৈদ্যে ছড়া, সোনাইছড়ি, মারিগ্যা পাড়া, লামার পাড়া, জারুইল্যা ছড়ি, দোছড়ি, ছাগল খাইয়া, বাঁকখালী, বাইশারী সদর, চাকঢালা, ছেরার কুল, ফুলতলি, আসাদতলি, কম্বুনিয়া, হলুদ্যাশিয়া, করলিয়া মুরা, কাগজি খোলা, বড় ছড়া, ক্যাংগার বিল, চোরা ঘোনা সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বুরো ধানের পাশাপাশি সবজি ক্ষেতও পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকের লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান।
কৃষক মো. নুরুল আজিম জানান, এবার বুরো মৌসুমে তিনি বিশ একর জমিতে চাষাবাদ করেছেন। প্রথম দিকে ফসল ভাল হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও টানা বর্ষনে প্রায় দশ একর ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে একদিকে ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত অন্যদিকে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ফলে বাদামী গাছ ফড়িং ও মাজরা পোকায় আক্রান্ত হয়ে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তার ক্ষতি পরিমাণ পোষিয়ে মূলধন পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে।
উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল আলম জানান, প্রথমদিকে আবহাওয়া অনুকুলে, সঠিকভাবে সার ও কিটনাশক প্রয়োগ এবং পাংচিং পদ্ধতি ও সারি পদ্ধতিতে বুরো ধান রোপন করায় ফসল অনেক ভাল হয়েছিল। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ফসলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আগামীতে আরো উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে এবারের ক্ষতি পুষিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে।
কৃষক মো. আবু শামা জানান, তিনি বুরো ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন শাক-সবজি ক্ষেত লাউ, শসা, বরবটি, ঢেঁরস, তিত করলা, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, জিংগা সহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষাবাদ করেছেন। টানা বৃষ্টিতে সকল প্রকার সবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় তিনি এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পুনরায় ক্ষতি পুষিয়ে উঠা কখনো সম্ভব হবে না বলে জানান।
সরজমিনে ঘুরে কৃষকদের সাথে কলা বলে আরো জানা যায়, অনেকে আগাম সুদে টাকা নিয়ে আবার অনেকে স্থানীয় সরকারী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন। তারা কিভাবে এ ঋণ পরিশোধ করবে তা নিয়ে দুঃচিন্তায় রয়েছে। তাই কৃষকদের দাবি ঋণের সুদের টাকা যেন সরকার তাদের মওকুফ করে দেন।