টেকনাফে বন বিভাগের রিজার্ভ জমির পাহাড় কেটে নির্মিত হচ্ছে আলিশান বাড়ী
টেকনাফ প্রতিনিধি:
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীপাড়ায় বন বিভাগের রিজার্ভ জমির পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে আলিশান দালান বাড়ী। যে বনে গাছ রক্ষা করার কথা সেখানেই বনকর্মীরা পাহাড়ের জমি ও গাছ কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে এলাকার কাঠচোরদের কাছে। সেই সাথে মোটা টাকায় পকেট ভরে বনবিভাগের গেজেটভূক্ত জমি একে একে তুলে দিচ্ছেন ভূমিদস্যুদের হাতে। ফলে একদিকে হারিয়ে যাচ্ছে বন, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে তার রাজস্ব, সেই সাথে প্রকৃতি হারাচ্ছে তার পরিবেশ।
জানা যায়, টেকনাফ-শামলাপুর এলজিইডি সড়ক এবং মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মিত হওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় এখন জায়গা জমির দাম আকাশচুম্বিতে পরিনত হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা জমির প্রায় বিক্রি শেষ এবং এসব জায়গা জমির মালিক এখন দেশী ও বিদেশী ব্যবসায়ীরা। যেখানে উপকূলীয় এলাকায় যে জমি-জায়গা গত ১৫ বছর আগে বিক্রি হতো ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, এখন সেখানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি একর ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। অর্থের লোভে পড়ে অনেকেই ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিজমা বিক্রি করে এ সরকারী বনভূমি দখল এবং বাণিজ্যে মেতে উঠেছে এবং কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের শীলখালী রেঞ্জের অধীন রাজারছড়া বনবিটের দৃষ্টি নন্দন নোয়াখালীর সংরক্ষিত উপকূলীয় বনাঞ্চল ক্রমান্নয়ে বেদখল হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, শীলখালী রেঞ্জের আওতাধীন রাজারছড়া বিটকর্মকর্তারা স্থানীয় বনকর্মী দাবিদার নোয়াখালীপাড়ার মোহাম্মদ হোছন প্রকাশ মাছন এর নেতৃত্বে কাঠচোর ও ভূমিদস্যুর সাথে সখ্য গড়ে তোলে। প্রতিদিন ডিউটির নাম করে কাঠচোর ও ভূমিদস্যুদের সাথে আড্ডায় মেতে থাকে। আর সুযোগ বুঝে রেঞ্জ ও বিটকর্মকর্তা কাঠচোরদেরকে গাছকাটার সুযোগ করে দেয়। পরে কাটা গাছের গুঁড়ি উপরে ফেলে বনের জমি অলিখিতভাবে তুলে দিচ্ছে ভূমিদস্যুর হাতে। ফলে বনবিভাগের গেজেট ভূক্ত জমিতে দিন দিন গড়ে উঠেছে পানের বরজ, সুপারী বাগান গুদাম ও বাসাবাড়ী। এভাবেই বেদখল হয়ে পড়ছে বন বিভাগের জমি। সরেজমিনে গিয়েও এর সত্যতা পাওয়া যায়।
এদিকে বড়ডেইল মৌজায় বনবিভাগের রোপনকৃত গাছের ৭০ ভাগই চুরি হয়ে গেছে । সরকারী কাগজে কলমে বনবিভাগের বাগান থাকলেও ভূমিদস্যুরা সেইসব জমিতে পানের বরজের চাষ করেছেন। সেই সাথে গড়ে তুলছেন অবৈধ স্থাপনা। নোয়াখালীপাড়ার স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যু মো: হোছন প্রকাশ মাছন এর নেতৃত্বে সরকারী বনভূমিকে পৈত্রিক সম্পত্তির মত ব্যবহার করে দখল বাণিজের প্রতিযোগিতা চলছে, যেন পর্যটকদের দৃষ্টি নন্দন এবং আকর্ষণীয় এলাকা স্থানীয় ভূমিদস্যুদের দখলে চলে গেলে দেশী ও বিদেশী পর্যটকেরা এতে বিমূখ হবে। তার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মক ভাবে অবনতি ঘটবে, এমন আশঙ্কা করেছেন সচেতন জনসাধারণ।
স্থানীয় প্রভাবশালী মো: হোছন প্রকাশ মাছন কাছে বনবিভাগের জমির উপর বাড়ী নির্মাণ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার বাড়ী নির্মাণাধীন জমিতে খতিয়ানভূক্ত ও বনবিভাগের রিজার্ভ জমিও রয়েছে
রাজারছড়া বিট কর্মকর্তা আলমগীর কবিরের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাবলিক বলে আমার জমি, আমরা বলি সরকারের জমি এ নিয়ে ঝামেলায় আছি ভাই। তবে নেতা মেম্বার সাহেব কে বলেছি তিনি কাগজপত্র দেখে একটা ফয়সালা দিবেন। বনবিভাগের জমি নেতা কিভাবে ফয়সালা দিবেন জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে মোবাইলের লাইন কেটে দেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাছ চুরি ও জমি বেদখল হয়ে যাওয়া এটা তারা কোন বিষয়ই মনে করেন না, তারা সবসময় নিজেদের পকেট ভারী করতে গরিবের নামে মামলা দিয়ে ধনীদের বাঁচাতে বেশি ব্যস্ত থাকে।
এ বিষয়ে শীলখালী রেঞ্জার জসীম উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন সংক্রান্ত কোন বিষয় হলে আমাকে জানাবেন আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।