ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে পাঠদানে জেলায় শীর্ষে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের প্রাথমিক শাখা: আনন্দিত শিক্ষার্থীরা

চকরিয়া প্রতিনিধি:

দক্ষিণ চট্রগ্রামের শিক্ষার আলোর পথপ্রদর্শক হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত ও সমাদৃত শ্রেষ্ঠ বিদ্যানিকেতন কক্সবাজারের চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ। তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগে এগিয়ে যাচ্ছে প্রাণবন্ত এ শিক্ষাঙ্গন। নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে শিক্ষাঙ্গন ছাড়াও সবক্ষেত্রে।

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পুরো বছর জুড়ে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসের পাঠদানে বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখায় শ্রেণি কক্ষেও লেগেছে ‘ডিজিটাল ঢেউ’। তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে পাঠদানের মাধ্যমে পাল্টে গেছে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাক্ষেত্রের দৃশ্যপট।

এতে  প্রাচীন তথা সনাতন শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে কিংবা আদলে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে আধুনিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা হয়ে উঠেছে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের বৃহত্তম চকরিয়া উপজেলায় শিক্ষা বিস্তারে অনন্য অবদান রেখেই চলেছে এই বিদ্যাপীঠ।

মাধ্যমিক শ্রেণির পাশাপাশি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই এখন প্রাথমিক শাখার শিক্ষার্থীরা, বছরের প্রথম থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে পাঠদান শুরু হয়ে চলতি বছরের অক্টোবর মাসের শেষদিকে প্রাথমিক শাখার তিনটি  ক্লাসের পাঠদান শেষ করেন বছর শেষ না হওয়ার পূর্বেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিনুল ইসলাম। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বছরব্যাপী চলছে নিয়মিত ডিজিটাল পাঠদান। ডিজিটাল ধারণার মধ্যদিয়ে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের আওতায় বদলে গেছে শ্রেণি কক্ষের চেহারা ও শিক্ষার্থীদের মন-মানসিকতা।

তবে যেখানে এতদিন হোয়াইটবোর্ড ছিল সেখানে যুক্ত হয়েছে সাদাপর্দা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমান প্রজন্মের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা একধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। মার্কার কলম দিয়ে হোয়াইট বোর্ডে লিখে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পুরনো সেই ধারণা পাল্টে গেছে। বর্তমানে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে পর্দায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক প্রজেক্টরের ভিজুয়াল পর্দা ব্যবহার করে পাঠ্যবইয়ের আলোচ্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে প্রযুক্তি ব্যবহারে পাঠদান দেয়া হচ্ছে। এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে বসেই যে কোন বিষয় নিয়ে পর্দায় দৃশ্য দেখে শুনে, আলোচনা করে তাদের পড়ালেখা ও ক্লাস ওয়ার্ক করতে পারছেন।

সরেজমিনে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখার তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে সবাই চেয়ে রয়েছেন ভিজুয়াল পর্দার দিকে। কেউ কেউ নিজের খাতায় নোট নিচ্ছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিনুল ইসলাম একের পর এক ধারণা দিয়ে যাচ্ছেন পাঠ্য বইয়ের আলোচ্য বিষয় নিয়ে।

শিক্ষার্থীরা কৌতূহলী দৃষ্টিতে ভিজুয়াল পর্দা প্রজেকশনের দিকে তাকিয়ে পাঠদানে আগ্রহী হয়ে চেয়ে রয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখার তিনটি শ্রেণির প্রায় দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ পাঠদানের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছেন।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী অঙ্কনা বড়ুয়া ও রাফির কাছে ডিজিটাল ক্লাসের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা জানায়, পাঠ্য বইয়ের আলোচ্য বিষয় সমুহ তারা এখন অনেকটায় জেনে গেছেন কিভাবে ‘ক্লাস কনটেন্ট’ সমূহ প্রস্তুত করা যায়। ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে ক্লাস করতে অনেক ভাল লাগে। প্রত্যেক বিষয় যদি এইভাবে ডিজিটালের ন্যায় পাঠদান করানো হতো তাহলে আমরা খুবই উপকৃত হতাম।

পঞ্চম শ্রেণির এক অভিভাবকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এই ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানের ফলে আমাদের সন্তান বেশ উপকৃত হয় এবং বিদ্যালয়ে আসা ও পড়ালেখার প্রতি খুবই আগ্রহ দেখা যায়। এমন আগ্রহ অন্য কোনো বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের প্রতি খুব কমই পরিলক্ষিত হয়। অন্যান্য অভিভাবকেরাও জানান তাদের সন্তান এ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে অনেক আগ্রহী।

এ বিষয়ে ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেয়া শ্রেণি শিক্ষক তানজিনুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করে অক্টোবর মাসে শেষ হয়েছে তিনটি (তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম) শ্রেণিতে ডিজিটাল পাঠদান। বছর জুড়ে প্রতিটি ক্লাস সমূহ অত্যন্ত সুচারুভাবে সহজ পন্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেয়া হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীরা সহজে বুঝতে ও জানতে সক্ষম হয় এবং দ্রুত সময়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।

তাছাড়া এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় তাদের পাঠদান মনে রাখতে পারে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মেধা অত্যন্ত প্রখর হয়। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অজানাকে জানা খুবই সহজ মাধ্যম। শিক্ষার্থীদের প্রথম প্রথম পাঠদানে একটু সমস্যা হলেও এ বিষয়ে যখন ধারণা এসে যায় সহজেই ক্লাসে শিক্ষার্থীরা উত্তর দিতে সক্ষম হয় বলেও তিনি জানান।

বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখার পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত ও শিক্ষক প্রতিনিধি বাবু অলসন বড়ুয়া জানান, প্রাথমিক শাখার তিনটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত যৌক্তিক, সহজ ভাষায় ও সরল ভাবে শিক্ষার্থীরা যেন ভাল ভাবে বুঝতে সক্ষম হয় তা বছর ন্যায় ডিজিটাল পদ্ধতির পাঠদান করেছেন শিক্ষক তানজিনুল। তার পাঠদানে প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা খুবই আনন্দিত। সেই সাথে সরকারের ডিজিটাল স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ।

এ ব্যাপারে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জনাব নুরুল আখের স্যারের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ধারণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বা শিক্ষালাভ প্রাথমিক শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা। অতীতে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করলেও এ চলতি বছরের শুরু থেকে বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখায় তিনটি শ্রেণিতে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ক্লাসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পুর্ণাঙ্গভাবে পাঠদান দেয়া হয় বছরের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির এব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা এখন অনেক অগ্রসর হয়েছে।

এ পদ্ধতিতে পাঠদানের ফলে মুখস্থ করার চেয়ে মাল্টিমিডিয়ায় সচিত্র পাঠদান শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বড় সহায়ক। কমেছে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ। আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে পাঠ গ্রহণে অভ্যস্ত হচ্ছে প্রতিটি শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ে বছর জুড়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান করানো শিক্ষক তানজিনুল কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের অত্যন্ত ভালভাবে পাঠদান করে তাদের অন্তরে স্থান পেয়েছে বলে আমি মনে করি। সে সঠিক ভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করতে সক্ষম দেখে সত্যিকার আমি খুবই আনন্দিত। এমনকি আমাদের অভিভাবকেরাও শিক্ষার্থীদের সহজ পাঠদান গ্রহণ দেখে অনেকই এ পদ্ধতির প্রশংসায় মুখর।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন