ত্রাণের দৃশ্য ভিডিও করে কেড়ে নেয় সেনারা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রাখাইন থেকে এবার ক্ষুধার জ্বালায় পালিয়ে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সেনারা তাদের গ্রাম অবরুদ্ধ করে রাখায় কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। ফলে তাদের মজুদ করা খাবারও শেষ হয়ে যায়। ইতিমধ্যে যারা বাংলাদেশে এসেছে তাদের মাধ্যমে জানতে পারে, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ ও খাবার দেওয়া হচ্ছে। তাই খাবারের আশায় সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসছে তারা।

রাখাইনের লম্বাবিল এলাকার মো. আলম পরিবারের ১০ সদস্য নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ তাদের গ্রাম। বাড়িতে কোনো খাবার মজুদ ছিল না। খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটছিল। মাঝেমধ্যে তাদের ডেকে নিয়ে ত্রাণ দেওয়া হয়। ত্রাণ দেওয়ার দৃশ্য ভিডিও করে পরে আবার সে ত্রাণ কেড়ে নেয় মিয়ানমার সেনা ও তাদের সঙ্গে থাকা রাখাইনরা। শেষে ক্ষুধার জ্বালায় পালিয়ে বাংলাদেশের পথ ধরেন তারা।

গত বুধবার সকালে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে হাজারো রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। এ ছাড়া টেকনাফের জাদিমুড়া, নাইট্যংপাড়া, লম্বাবিল ও খারাংখালী পয়েন্ট দিয়েও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ মিয়ানমারের বুচিডং টাউনশিপ এলাকার। শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমারের ওপারে ডংখালি নামক চর এলাকায় শত শত রোহিঙ্গা তাঁবু টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে তারা খাবারের অভাবে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে।

বুচিডং টাউনশিপের ঘোদামপাড়ার বশির আহম্মদ (৬৫) গত ২০ দিন আগে তার পরিবারকে নিয়ে শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে অনুপ্রবেশ করে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। গতকাল জেটি ঘাট দিয়ে ওপারে আশ্রয়নেওয়া লোকজনের সঙ্গে তাকে মোবাইল ফোনে আলাপ করতে দেখা যায়। ওপারের চরে তার কেউ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে আমার আরও আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। গত এক সপ্তাহ আগে ফোনের মাধ্যমে সেখান থেকে ফুফাত ভাইয়ের পরিবারকে এখানে নিয়ে আনা হয়েছে। সেখানে আমার আরও পরিচিত লোকজন রয়েছে। তাদের আনার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও জানান, তাদের মিয়ানমার সেনাবাহিনী অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। ফলে খাবারের খুব বেশি অভাব দেখা দেয়। একদিন রাতে ফোন করে ছোট ভাই জানায়, বাংলাদেশে তারা খুব ভালো আছে। কোনো কাজ করতে হয় না। প্রতিদিন চাল-ডাল-তেল এবং মাঝেমধ্যে নগদ টাকাও পায়। তাই নৌকায় এপারে চলে আসি।

রাখাইনের মংডু হাসসুরাতার নাজমা খাতুন জানান, এক সপ্তাহ আগে রাতের অন্ধকারে গ্রামের কয়েকশ’ লোক একসঙ্গে পালিয়ে হাঁটা শুরু করে। তারও এক সপ্তাহ আগে থেকে গ্রাম অবরুদ্ধ করে রেখেছিল সেনা ও রাখাইনের সশস্ত্র বৌদ্ধরা। যারা গ্রাম থেকে বাইরে যাচ্ছিল, তাদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই রাতের আঁধারে গ্রাম ছেড়ে পালান তারা।

 

সূত্র: সমকাল

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন