পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে উষাতন এমপি দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হলেন বাঘাইছড়ির সাবেক পৌর মেয়র আলমগীর

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে রাঙামাটির এমপি উষাতন তালুকদারে দায়ের করা চাঁদাবাজী মামলায় আটক হলেন একই জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাবেক পৌর মেয়র আলমগীর কবিরসহ ৭ জন। আলমগীর কবির বিএনপি নেতা ও বাঙালী ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপাতি। গ্রেফতারকৃত অন্য ৭জন ছাত্রলীগ নেতা বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শেরে বাংলা থানায় চাঁদাবাজীর মামলা করেছেন উষাতন তালুকদার এমপি। তিনি জেএসএস সন্তু লারমা সমর্থিত গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রাঙামাটি থেকে সতন্ত্র নির্বাচিত এমপি।

আলমগীর কবিরের কাছের লোকদের নিকট থেকে জানা গেছে, দুইজন দুই মেরুর হওয়ার পরও মেয়র থাকাকালে বাঙালী ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি আলমগীর করিবের সাথে জেএসএস সহসভাপতি উষাতন তালুকদারের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার আগে গত বেশ কিছুদিন ধরে বাঘাইছড়ির সাবেক মেয়র আলমগীর কবির, ঊষাতন তালুকদার এমপি কাছে নয় লক্ষ টাকা পাওয়ার অভিযোগ করে সেই টাকা উদ্ধারে রাঙামাটির সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে দফায় দফায় যোগাযোগ করেছেন। এমপি সর্বশেষ পাওনা টাকা পরিশোধে গত রবিবার সময় দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে চাঁদা না দিলে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় বলে শেরেবাংলা নগর থানায় অভিযোগ করেছেন সাংসদ ঊষাতন তালুকদার। সাংসদ ঊষাতন তালুকদারের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ সংসদ সদস্য ভবন থেকেই শুক্রবার রাতে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবারই তাঁদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত রিমান্ড না দিয়ে আসামিদের এক দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশকে অনুমতি দিয়েছেন। আসামিরা এখন কারাগারে।

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জি জি বিশ্বাস আজ বলেন, সাংসদ ঊষাতন তালুকদার অভিযোগ করেছেন, বৃহস্পতিবার রাতে সাতজন লোক তাঁর সংসদ ভবনের অফিসে ঢুকে ঈদ বকশিশ বাবদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ সাংসদ ঊষাতন তালুকদার মামলায় বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সংসদ সদস্য ভবন-২-এর ২০৩ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিলেন। আসামিরা বেআইনিভাবে তাঁর অফিসকক্ষে ঢুকে পড়েন। পরে নিজেদের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ও সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছোট ভাইয়ের পরিচয় দিয়ে তাঁর কাছে সাড়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন। তখন আসামিরা বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আসামিরা তাঁকে (ঊষাতন) হত্যার হুমকিও দেয়। হত্যার হুমকি দেওয়ার এ ঘটনা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান সাংসদ উষাতন তালুকদার।

ঘটনা প্রসঙ্গে সাংসদ ঊষাতন তালুকদার বলেন, মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ঢুকে আসামিরা নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তাঁর কাছে চাঁদা চান। চাঁদা দিতে না চাইলে নানা প্রকার হুমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁকে উঠিয়ে নেওয়ার হুমকিও দেন। আদালতের কাছে পুলিশও এক প্রতিবেদন দিয়ে বলছে, সাংসদ ঊষাতনের কাছে আসামিরা দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে ঈদ বকশিশ বাবদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন।

চাঁদা দাবি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাত আসামির মধ্যে একজন বাঘাইছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র। তাঁর নাম মোহাম্মদ আলমগীর (৩৭)। অপর ছয়জন হলেন যশোর ঝিকরগাছার ওলিয়ার রহমান (৩৭), চট্টগ্রাম হালিশহরের মো. রাজু (২৫), ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শাখাওয়াত হোসেন সোহেল (৩৫), যশোর কোতোয়ালির শিমুল হোসেন (২৪), কক্সবাজারের উখিয়ার ফয়সাল মাহমুদ রেদওয়ান (২১) ও উখিয়ার মাইনুদ্দিন শাহীন (২১)।

সাবেক মেয়র আলমগীরসহ সাতজনকে গতকাল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। অপরাধী চক্র শনাক্ত করার জন্য আসামিদের রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ মনিরুজ্জামান। তবে আদালত পুলিশের আবেদনে সাড়া না দিয়ে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিকে সাবেক মেয়র আলমগীরসহ অন্য আসামিদের আইনজীবী আদালতের কাছে তাঁর মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করেন। ষড়যন্ত্র করে তাঁদের বিরুদ্ধে এ মামলা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা। আলমগীরসহ সাতজনের আইনজীবী জয়দেব বড়াল দাবি করেন, সাবেক মেয়র আলমগীর সাংসদ ঊষাতন তালুকদারের কাছে নয় লাখ টাকা পাবেন। সোনালী ব্যাংক এবং একটি পরিবহনের মাধ্যমে সাংসদ ঊষাতনকে এই টাকা দেন আলমগীর। এর রসিদও আদালতের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে তিনি জানান।

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সৈয়দ মনিরুজ্জামান বলেন, আসামিদের মধ্যে একজন সাবেক মেয়র। বাকিদের পেশা কী, তা জানার চেষ্টা চলছে। আর সাংসদের কাছে চাঁদা দাবি করার এ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে। আইনজীবী জয়দেব বড়াল জানান, আসামি শিমুল হোসেন ব্যাংকে চাকরি করেন বলে তাঁকে জানানো হয়েছে। বাকিদের কেউ কেউ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী বলে তাঁর কাছে দাবি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলমগীর কবির। তিনি দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে ২৪৩৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী দেয়ালঘড়ি প্রতীকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জমির হোসেন জমির পেয়েছেন ২৪০২ ভোট। মাত্র ৩৭ ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আলমগীর কবির।

বিজয়ী হওয়ার পর আলমগীর কবির বিএনপির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে বিএনপিতে যোগও দেন। কিন্তু তিনি প্রকাশ্যেই রাঙামাটির স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিপরীত মেরুর এই দুই নেতার ‘সম্পর্ক’ নিয়ে রাঙামাটির রাজনৈতিক অঙ্গনেও ছিলো ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু পাওনা টাকা আদায় নিয়ে এই দুই নেতার সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হওয়ার পর এনিয়ে শুরু হয়েছে নয়া ভাবনা।

সূত্র- প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন