বৌদ্ধ পূর্ণিমায় বাংলাদেশে আইএসের জঙ্গী হামলার হুমকি

পার্বত্য চট্টগ্রামের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ

fec-image

বাংলাদেশ ও ভারতে বৌদ্ধ পূর্ণিমায় আইএসের হামলার হুমকির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এই হামলা মোকাবিলায় পুলিশ প্রশাসন সতর্ক ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী ও বৌদ্ধ মন্দিরের সংখ্যা বেশী থাকায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন পূর্ব সতর্কতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে। তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের পুলিশ সুপারবৃন্দের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। আগামী ১৮ মে বৌদ্ধ পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত হবে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মোহা, আহমার উজ্জামান পার্বত্যনিউজকে জানান, হুমকির প্রেক্ষিতে জেলার সকল গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকের টহল রয়েছে। ধর্মীয় নেতাদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে।

অন্যদিকে আইএস কর্তৃক হামলার হুমকির সতর্কতার বিষয়ে রাঙামাটির জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর কবির পার্বত্যনিউজকে জানান, আগামী ১৮ মে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে মন্দিরগুলোতে সতর্কতামূলক নজরদারির পাশাপাশি পূর্ণশক্তি নিয়োগ করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, জেলার যে কোন স্থানে যে কোন সময় তল্লাশির চেক পোষ্ট বসানো হবে।

কাউকে সন্দেহের বাইরে রাখা হবে না জানিয়ে এসপি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যা যা করণীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাই করা হবে। রাঙামাটির পাঁচ শত বৌদ্ধ মন্দিরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সকল ধরণের মানুষকে নিরাপত্তার আওতায় আনা হবে। এজন্য ধর্মীয় গুরুরা বাদ যাবে না। যাকে সন্দেহ হবে তাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রমাণ পেলে শাস্তি অবধারিত। দেশের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ সব কিছু করতে প্রস্তুত বলে জানান তিনি।

এদিকে বান্দরবান পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার পার্বত্যনিউজকে বলেন, এধরণের একটা হামলার ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে আসার পর আমরা সম্ভাব্য সকল ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। অন্যান্য বারের তুলনায় এবারে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা গুরুত্বপূর্ণ প্যাগোডা, কিয়াং, মন্দির ও গির্জাগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করেছি। কিছু জায়গায় আমরা পেট্রোলের ব্যবস্থা করেছি। আর যেগুলো একটু কম ‍গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোতে মোবাইল টিমের মাধ্যমে একটা নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করেছি।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, আমরা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পুরোহিত, ভিক্ষু, ফাদারদের নিয়ে মত বিনিময় করেছি নিরাপত্তা ইস্যুতে। এসব বৈঠকে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সৃষ্টির জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছি। আমাদের মোবাইল নম্বরগুলো তাদেরকে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন থানা থেকে কোনো না কোনো অফিসার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভিজিট করছেন। তাদের সাথে কথা বলছে। ঝুঁকি নানা বিষয় ও করণীয় নিয়ে মত বিনিময় করছে।

তিনি বলেন, যারা সন্ত্রাসী হামলা করতে পারে তারা কোন কোন ছদ্মবেশে আসতে পারে সে বিষয়ে তাদের সাথে মত বিনিময় করা হয়েছে। ভান্তেদের ছদ্মবেশে, ফাদারদের ছদ্মবেশে, গর্ভবতী মহিলাদের ছদ্মবেশে, বিভিন্নভাবে তারা আসতে পারে সে বিষয়ে তাদের সচেতন করা হয়েছে। তারাও নিজস্ব চেকিং ব্যবস্থা চালু করেছে এবং আমরাও বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত চেক পোস্ট করছি। মসজিদ, মন্দির, কিয়াং, গির্জা সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য,  বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গে এই সতর্কতার কথা জানিয়েছে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)। এই সম্ভাব্য হামলা চালাতে পারে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) বা ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

বুদ্ধ পূর্ণিমায় হামলার আশঙ্কার পাশাপাশি আইবি জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু বা বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা চালানো হতে পারে। শুক্রবার এই সতর্ক বার্তা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

গত মাসে ইস্টার সানডেতে শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও হোটেলে সিরিজ বোমা হামলার পর পশ্চিমবঙ্গে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।

এর আগে ২৭ এপ্রিল আইএসপন্থী একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে বাংলায় প্রকাশিত একটি বার্তায় ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ‘শিগগিরই আসছি’। শ্রীলঙ্কায় হামলার জন্য ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত (এনটিজে)-কে দায়ী করে আসছেন লঙ্কান কর্তৃপক্ষ। এনটিজে’র সঙ্গে জামাতুল মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার (জেএমআই) ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধনে এর আগে বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কার সিরিজ হামলায় জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ভারতীয় শাখা জেএমআই জড়িত থাকতে পারে।

খবরে বলা হয়েছে, ভারতে জেএমআই’র কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে একাধিক খবরে ভারতে তাদের উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে জেএমবি’র দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন