পাহাড়ের দ্বীপ মহেশখালীতে উৎসবমূখর পরিবেশে ‘সবুজ উপকূল’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত

মহেশখালী প্রতিনিধি:

উপকূলের পড়ুয়াদের সবুজ সুরক্ষার আহ্বানের মধ্যদিয়ে মঙ্গলবার(৩১ অক্টোবর) উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারের মহেশখালীতে ‘সবুজ উপকূল ২০১৭’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষ্যে কুতুবজোম অফসোর হাইস্কুলে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

কর্মসূচির আওতায় ছিল রচনা লিখন, পত্র লিখন, ছবি আঁকা ও সংবাদ লিখন প্রতিযোগিতা। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও ‘এসো সবুজের আহ্বানে, গড়ি সবুজ উপকূল’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং গাছের চারা রোপণ করা হয়। কর্মসূচিতে বিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়া পরিবেশ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। বিদ্যালয়ে প্রকাশিত হয় দেয়াল পত্রিকা ‘বেলাভূমি’র বিশেষ সংখ্যা।

উপকূলের পড়ুয়াদের মাঝে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানো, সৃজনশীল মেধার বিকাশ, লেখালেখি চর্চার মাধ্যমে তথ্যে প্রবেশাধিকারসহ জীবন দক্ষতা বাড়ানো এ কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য। ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশ সচেতনতামূলক এ কর্মসূচি এবার তৃতীয় বছরে পা রাখলো। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এ কর্মসূচির আয়োজন করে উপকূল বিষয়ক সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান ‘উপকূল বাংলাদেশ’।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কুতুবজোম অফসোর হাইস্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি সাইফুল হক সিকদার, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক কক্সবাজার শাখার ব্যবস্থাপক (অপারেশন) শামসুল ইসলাম, ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবীর, কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশার্রফ হোসেন খোকন, মহেশখালী উপজেলা সহকারী কমিশন (ভূমি) বিভীষন কান্তি দাশ, মহেশখালী থানার ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশ। সভায় সভাপতিত্ব করেন কুতুবজোম অফসোর হাইস্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা।

আলোচনা সভায় বক্তারা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আলোকিত মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে হলে শুধু পাঠ্য বইয়ের পড়া মুখস্ত করে পরিক্ষায় ভালো করলেই হবে না। জীবন দক্ষতা গড়ে তুলতে চারপাশের জগত সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। উপকূলের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। ভালো ফলাফলের সঙ্গে সাধারণ জ্ঞানের সংমিশ্রনই পারে মানুষের মত মানুষ করে তুলতে। তোমাদেরকে ভালো মানুষ হয়ে প্রদীপের মত আলো জ্বালাতে হবে, যাতে তোমার আলোতে আরও অনেকজন আলোকিত হতে পারে।

কর্মসূচি বিষয়ে বক্তব্য দেন সবুজ উপকূল ২০১৭-এর স্থানীয় সমন্বয়কারী ও দৈনিক ভোরের কাগজ প্রতিনিধি এম. বশীর উল্লাহ। কর্মসূচির প্রেক্ষাপট ও উপকূলের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন সবুজ উপকূল ২০১৭ কর্মসূচির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ও আয়োজক প্রতিষ্ঠান উপকূল বাংলাদেশ-এর পরিচালক রফিকুল ইসলাম মন্টু। অনুষ্ঠান সূচনা ও উপস্থাপনায় ছিল আয়োজক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির রিফাত হোসেন ও নবম শ্রেণির সামজিদা ইয়াসমিন প্রিয়া। অনুষ্ঠানে ঘটিভাঙার বাহারছড়া গ্রামে গুচ্ছগ্রাম এলাকা পর্যবেক্ষণ করে এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাফিয়া ফারজানা রাফি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিভিন্ন সৃজনশীল প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। সকালে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে কর্মসূচির সূচনা ঘটে। আর বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে স্কুলের চারপাশে সবুজায়ন কর্মসূচি উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে।

কর্মসূচিতে সহ-আয়োজক হিসাবে থাকছে উপকূলের স্কুল পড়ুয়াদের সংগঠণ আলোকযাত্রা দল, আইটি পার্টনার হিসাবে থাকছে ডটসিলিকন, মিডিয়া পার্টনার হিসাবে থাকছে এটিএন বাংলা ও দৈনিক সমকাল।

এবার উপকূলের ১৪টি জেলার ১৯টি উপজেলার ২০টি স্থানে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। কর্মসূচিতে ১০০ স্কুলের প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এ নিয়ে তিন বছরে উপকূলের ২৫৬টি স্কুলে ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী সবুজ উপকূল কর্মসূচির আওতায় আসছে। স্কুল শিক্ষার্থীরা পেয়েছে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা, যা তাদের প্রাত্যহিক জীবনে কাজে লাগছে।

এবার সাতক্ষীরার শ্যানগরের মুন্সীগঞ্জ, গাবুরা, খুলনার পাইকগাছা, বাগেরহাটের সদর ও শরণখোলা, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া, বরগুনার তালতলী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ও চরমোন্তাজ, ভোলার চরফ্যাসন ও তজুমদ্দিন, চাঁদপুরের হাইমচর, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়া, ফেনীর সোনাগাজী, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এবং কক্সবাজারের টেকনাফ ও মহেশখালীতে কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

২০১৫ সাল থেকে সবুজ উপকূল কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। ২০১৫ সালে ১০টি জেলার ১৩টি উপজেলার ৪০টি স্কুলের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে যুক্ত হয়। পরের বছর ২০১৬ সালে ১৪টি জেলার ২৫টি উপজেলার ১১৬টি স্কুলের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষার্থীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। এবারের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে তিন বছরে উপকূলের ২৫৬টি স্কুলে ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী সবুজ উপকূল কর্মসূচির আওতায় আসবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন