ফুল বিজুর মধ্য দিয়ে পাহাড়ে তিন দিনের বৈসাবী উৎসব শুরু
স্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি :
মা গঙ্গাকে সাক্ষী রেখে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা জানানো হল পৃথিবীর সর্বজীবের সুখ। সারা জীবন ফুলের মতো পবিত্র রাখতে, জনম জনম ধরে ফুলের মতো সুরূপতা দিতে, সব দুঃখ, বেদনা, গ্লানি, ব্যর্থতা গঙ্গার জলে ভাসিয়ে অনাগত সুন্দর, সফল ও স্বার্থক ভবিষ্যৎ দান করতে। এভাবে ভোরে পাহাড়ি তরুণ-তরুণীদের নদীর জলে ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনা আদায়ের মধ্য দিয়েই তিন পার্বত্যাঞ্চলে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবী শুরু হয়েছে।
গতকাল শনিবার সকাল ৭টায় রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসনো, বয়োজ্যেষ্ঠদের স্নান ও বস্ত্রদান, ত্রিপুরা তরুণ-তরুণীদের গড়াইয়া নৃত্য, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব। এসময় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য অংসু চাইন চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে সিনিয়র পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রীতি কান্তি ত্রিপুরা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা অরুনেন্দু ত্রিপুরা, রাঙামাটি গর্জনতলী ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভপতি সুরেশ ত্রিপুরা ও সাধারণ সম্পাদক ঝিুনুক ত্রিপুরা প্রমুখ।
পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত এগারো ভাষাভাষির চৌদ্দ পাহাড়ি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর এদিনটিকে যৌথভাবে ঐতিহ্যবাহী প্রধান উৎসব হিসেবে পালন করে থাকে। আজ রোববার মূল বিজু। পুরনো বছরের সব দুঃখ, বেদনা, গ্লানি, ব্যর্থতা ধূয়ে-মুছে উৎসব আর আনন্দে মেতে ওঠার দিন। সব কাজ সেরে সব চিন্তা ঝেরে শুধু উৎসব আর আনন্দে কাটার দিন। দিনব্যাপী ঘরে ঘরে থাকবে নানাবিধ আপ্পায়ন। ছোট-বড় সবার জন্যে রয়েছে সুস্বাদু আর সুমিষ্ট খাবারের সমহার- বড়দের জন্য কানজি, জগড়া ও দু’চুয়ানি মদের আয়োজন। ঘরে ঘরে জমবে শুধু উৎসবের ফোয়ারা। বিজু উৎসবকে ঘিরে এবারও সমগ্র পার্বত্য জনপদ আনন্দ মুখর হয়ে উঠেছে। তবে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই পার্বত্য তিন জেলায় পাহাড়িদের প্রতিটি ঘরে উৎসবের ধুম পড়ে গেলেও অভাব আর অর্থনৈতিক সংকট চরম হতাশায় নিমজ্জিত করছে।
চাকমা রীতি অনুযায়ী গতকাল ১২ এপ্রিল পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে তিন দিনের সার্বজনিন উৎসব শুরু হয়। আজ ১৩ এপ্রিল উদযাপিত হচ্ছে মূল বিজু। আগামীকাল ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ গোজ্যাপোজ্যে দিন ও বর্ষবরণ উৎসব।
গোজ্যাপোজ্যে দিন নানাবিধ পূজা-পার্বণ আর প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী উৎসব শেষ হবে। পার্বত্য আদিবাসীদের মতে, বিজু মানে আনন্দ, নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় আর চেতনার নতুন প্রেরণা। তাই এবার অভাব-অনটনের মধ্যেও যথারীতি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবটির যথার্থে আনন্দমুখর করে তুলতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় পালিত হয়েছে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। বর্ষ বিদায় এবং বর্ষবরণ উপলক্ষে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে আয়োজিত এ উৎসবকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু এবং অহমিকারা বিহু বলে আখ্যায়িত করে।