‘বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক অনেক উপজাতি মেয়ে ধর্ষিত হচ্ছে’


স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কর্তৃক অনেক উপজাতি মেয়ে ধর্ষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধিবৃন্দ। মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্ট, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, জনউদ্যোগ, কাপেং ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের উদ্যোগে ঢাকায় সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বান্দরবানের লামায় দুই কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় নারী ও মানবাধিকার সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিদের সরেজমিনে পরিদর্শনোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক রীনা রায়। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের সহ-সভাপতি ও নাট্যজন আফরোজা বানু, জনউদ্যোগের আহ্বায়ক ড. মুশতাক কামাল ও সদস্য সচিব তারিক হোসেন মিঠুল ও কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, আইন ও সালিশ কোন্দ্রের হাসিবুর রহমান সূর্য, ব্লাস্টের অটুট আরেং ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের শরীফ চৌহান প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা।

মূল বক্তব্যে বক্তারা দুই উপজাতি কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার দাবি জানান।

উল্লেখ্য যে, বিগত ২২ আগস্ট ২০১৮, অানুমানিক রাত ১০:১৫ ঘটিকার সময় বান্দরবান জেলার লামা থানাধীন ০৩নং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ০১নং ওয়ার্ডের রাংগতি পাড়া সাকিনস্থ বলিচন্দ্র ত্রিপুরার সেগুন বাগানের ভিতর দুই উপজাতি ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগের ভিত্তিতে পরের দিন ২৩ আগস্ট ২০১৮ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় জনগণ ঘটনাস্থলে যান। ঐদিন রাত ১১:৩৫ ঘটিকায় ভিকটিমদের মধ্যে একজন বাদী হয়ে লামা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ৯(১)/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। লামা থানার মামলা নং-০৫/২০১৮।

ঘটনাটি সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য গত ৪সেপ্টেম্বর ২০১৮ ঢাকা থেকে একটি নাগরিক প্রতিনিধি দল বান্দরবানের লামায় যান। পরিদর্শনের সময় প্রতিনিধিবৃন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, লামা থানার ওসি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কার্বারী, ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের সাবেক সভাপতি, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের দুইজন সদস্য, স্থানীয় সংবাদ প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নাট্যজন আফরোজা বানু বলেন, বান্দরবানের লামার দুই কিশোরী ধর্ষণের ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আমরা আশা করব যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সময়ক্ষেপণ না করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হোক। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার একটা সুষ্ঠু তদন্ত চাই। যারা ভিকটিম তাদের ক্ষতিপূরণসহ নিরাপত্তার ব্যবস্থা যাতে প্রদান করা হয়।

পল্লব চাকমা বলেন যে, এই ধরনের ঘটনা আগে শুধু আমরা মাঠে, রাস্তায় প্রতিবাদ করতাম। কিন্তু এবার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন আমাদের সাথে একত্রিত হয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ওখানকার বাস্তবচিত্র তুলে এনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তথ্যগুলো জাতীয় পর্যায়ে উপস্থাপন করছেন। জোর দিয়ে জানাই বিচারহীনতার সংস্কৃতির আবর্তে পড়ে গিয়ে কোন সুষ্ঠু বিচার পাই না। তাই আমরা আশা করি এই চিত্র উপস্থাপনের পরে কর্তৃপক্ষ যাতে উদ্যোগ নেয় এবং অপরাধীদের যাতে সুষ্ঠু বিচার করা হয়। যারা ভিকটিম তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তার পাশাপাশি সকল উপজাতি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত যেন করা হয়।

ডা.মুশতাক হোসেন তিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশের নারী ও কন্যা শিশুদের যৌন সহিংসতা আশংকাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। তাই সরকার যাতে এর দ্রুত বিচার এবং অপরাধীদের গ্রেফতার পদক্ষেপ গ্রহন করে সেই দাবী জানান।

তিনি বলেন, উপজাতি নারীরা এমনিতে বিভিন্ন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সমান অধিকার ভোগ করতে পারছে না। তার উপর উপজাতি নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। ভিকটিমদের সকল প্রকার ডাক্তারী পরীক্ষা করা হয়েছে কিন্তু দোষীদের নাম সনাক্ত করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, যারা অভিযুক্ত তারা আইন শৃঙ্গলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমরা জানি যে আইন শৃঙ্গলা রক্ষাকারী বাহিনীদের মধ্যে আইন শৃঙ্গলা ভঙ্গকারীদের দ্রুত শাস্তি প্রদান করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আইন শৃঙ্গলা রক্ষাকারী বাহিনীকর্তৃক পরিকল্পিতভাবে অনেক উজাতি মেয়ে ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে। কাজেই এই তিনটি বিষয়কে যদি আমরা সামনে আনি আমাদের অবিলম্বে বিচারের দাবীতে সোচ্চার হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, কেননা আমার মনে হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় সব জায়গায় স্মারক লিপি দেওয়া দরকার। তাদের সাথে কথা বলে দরকার এবং এই বিষয়টি আরো নজরে আনা দরকার। এই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি যদি বন্ধ করতে হয় তাহলে ঘটনার আসামীকে চিহ্নিত করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন