বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পিণ্ড দান সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:

শত শত বৌদ্ধ ভিক্ষু। এগিয়ে চলেছেন সম্মুখপানে। নতমুখী ওরা সবাই। নানা বয়সের, নানা বর্ণের, নানা ভাষাভাষি। সবারই খালি পা, মুণ্ডিত মাথা-গায়ে গেরুয়া বসন। ক্ষুধাতুর হলেও অবয়বে অপার আনন্দ চেহারায়। মানবতার কল্যাণ ও অনির্বাণ লাভের আশায় সংসারত্যাগী মানুষগুলো। এ জন্য সাধারণ মনুষ্য জীবন ত্যাগ করে ভিক্ষুত্ব গ্রহণ করেছেন তারা। দান গ্রহণ ছাড়া আর কোন পথ নেই ওদের। তাই ওরা ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা গ্রহণ করে।

ভিক্ষুদের ভিক্ষা গ্রহণ নিত্য দিনের সাধারণ একটি কাজ হলেও আষাঢ়ে পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস শেষে এক মাসের ধারাবাহিক কঠিন চীবর দান উৎসবের পর এমন দিনে তারা বেরিয়ে পড়েন আনুষ্ঠানিক ভিক্ষা গ্রহণে। ভিক্ষুরা দিনে একবার খাবার গ্রহণ করেন।

এটিকে বৌদ্ধ পরিভাষায় ‘সোয়াইং’ বা ‘পিণ্ড’ বলা হয়। আর ভিক্ষুদের উদ্দেশ্যে দান করা হয় বলে এর নাম হয়েছে ‘পিণ্ড দান’। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ভিক্ষুদের চীবর (বস্ত্র) দানের মতই পিণ্ড দানকে ‘দানোত্তম’ কাজ বলে বিশ্বাস করেন।

বান্দরবান জেলায় বহুযুগ আগে থেকে কার্তিক মাসের শেষ দিন বা অগ্রহায়ন মাসের প্রথম দিনে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘পিণ্ড দান’ করা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার(৪ নভেম্বর) সকালে বান্দরবান শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ভিক্ষুদের পিণ্ড দান উৎসব।

রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পরিভ্রমন করে ভিক্ষুরা রাস্তার দু’পাড়ে অপেক্ষমাণ হাজারো নারী-পুরুষের কাছ থেকে দান গ্রহণ করেন।

এক সময় শুধুমাত্র ভাতসহ অন্যান্য খাবার দান করা হলেও প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দান পেলে অব্যবহৃত থেকে অপচয় হতে পারে- এ বিবেচনায় সাম্প্রতিক সময়ে রান্না করা খাবারের পাশাপাশি ফল-মূল, চাল, নগদ টাকা, তরল পাণীয় দান করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং এমপি গত কয়েক বছর ধরে তার নিজ বাড়ির সামনে ভিক্ষু সমাজকে বিশেষ প্রণাম এবং পিণ্ড দান করে আসছেন।

শনিবার সকালে তিনি, তার বৃদ্ধা মা এবং স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে নিয়ে প্রায় ৩০০জন ভিক্ষুকে পিণ্ড দান করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জীব কুমার রায়সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মেই দান করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে মহামতি গৌতম বুদ্ধ’র অনুসারীরা ভিক্ষুদের চীবর বা বস্ত্র দান এবং পিণ্ড দানকে সব দানের চেয়ে উত্তম দান মনে করেন এবং সারা বছরই দান করে যাচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন