Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

বান্দরবানে মোরা ও বন্যায় ক্ষতি প্রায় পাঁচশত কোটি টাকা: ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি প্রান্তিক কৃষক

 

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:

এবারের ভারী বর্ষণ ও পাহাড় ধ্বসে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সড়ক ও কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ও তাদের তালিকা শেষ করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। সরকারি রাস্তাঘাট ও স্কুল ছাড়া মোরা’র আঘাতে ও বন্যায় স্থানীয় জনসাধারণের যে পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরপনের কোন কাজ করেনি স্থানীয় প্রশাসন।

গতমাসে বান্দরবানে পাহাড় ধ্বসে শিশুসহ নয়জনের মৃত্যু হয়। স্থানীয় প্রশাসন তাদের প্রত্যেক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। কিন্তু তাদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করেনি। স্থানীয় সুধিজনরা পাহাড় থেকে নির্বিচারে গাছ কাটা, পাহাড় কাটা ও পাহাড় খোদায় করে এবং নদী ঝিড়ি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

জেলার ৭টি উপজেলায় সড়ক জনপথ ও সেনা প্রকৌশলের সংস্কারের আওতাধীন প্রায় ১’শ কিলোমিটার সড়ক এবং এলজিইডির ২৫ কিলোমিটার সড়ক ও ১৫০ মিটার ছোটখাট কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোরার আঘাতে জেলার ২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মোরার আঘাতে কৃষি খাতে আম ২৫ হেক্টর, কলা পেঁপে ২৫ লক্ষ হেক্টর এবং বন্যায় বিভিন্ন সবজি ২০ হেক্টর এবং আমনের বীজ তলা ৫ লক্ষ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে মোরা ও ২ দফা বন্যায় জেলা প্রশাসন তিন কিস্তিতে ৩০৩ মেট্রিক টন চাল, নগদ সাড়ে দশ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রে শরনার্থীদের জেলা প্রশাসন, নিরাপত্তাবাহিনী, জেলা পরিষদ ও পৌর সভার পক্ষ থেকে খিচুরি ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

এছাড়া বর্ষায় অল্প বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যায় নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১২৬১৬জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন।

এদিকে বন্যা ও পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকিতে ১৩৩৬ পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছে বান্দরবান পৌরসভা। প্রতি বছর সামান্য বৃষ্টি হলে নিন্মাঞ্চলে বসবাসকারীদের বসতভিটা ডুবে যায়। আবার ভারী বৃষ্টি হলে পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকিতে পড়ে। ফলে এসব পরিবারকে ঘনঘন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হয়। এদেরকে স্থায়ীভাবে পূনর্বাসনের জুরুরী হয়ে পড়েছে।

গত জুন মাসে পাহাড় ধ্বসের পরে ৯টি ওয়াডে এক জরিপে দেখা যায় ৫টি ওয়াডে বন্যায় ঝুঁকিতে রয়েছে ৯৫৬টি পরিবার এবং পাহড়ে ঝুঁকিতে বসবাস করছে ৩৮০টি পরিবার।

পৌর মেয়র ইসলাম বেবী বলেন, বন্যা ও পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাস করা ১৩৩৬টি পরিবার গলায় কাটা হয়ে দেখা দিয়েছে। এসব পরিবারগুলোকে উচ্ছেদও করা যাচ্ছেনা আবার ঝুঁকিতেও রাখা যাচ্ছেনা। অধিকাংশ পরিবার অপরিকল্পিত ভাবে জলাভূমির আশেপাশে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছে বলে বন্যার শিকার হচ্ছে। আর পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ন জেনে তারা বসবাস শুরু করেছে। এসব পরিবারগুলোকে পূনর্বাসন করা জরুরী হয়ে পড়েছে যা পৌরসভার পক্ষে সম্ভব নয়।

সড়ক জনপথ বিভাগের হিসাব মতে এবার ভারী বর্ষণে বান্দরবানের গুরুত্বপূর্ণ ৯টি সড়কের প্রায় ৩শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের জন্য সরকারের কাছে ৮ কোটি টাকা চেয়ে আবেদন করেছে সড়ক জনপথ বিভাগ।

এলজিইডি বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ কিমি সড়ক মেরামত ও ১৫০ মিটার ছোটখাট বক্স কালভার্ট দ্রুত গতিতে মেরামতের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে।

এদিকে পাহাড় ধ্বসের ফলে প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর বান্দরবান-রুমা সড়ক যোগাযোগ চালু হলেও যেকোনো সময় তা ধ্বসে আবারো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া দেশের সর্বোচ্চ সড়ক থানচির ডিম পাহাড় সড়কটিও ভাঙ্গনের ফলে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল জুন মাসে ভারী বর্ষণ ও পাহাড় ধ্বসের ফলে বান্দরবানের সড়কগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছে। রুমা সড়কের ওয়াই জংশন এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সড়কের উপর পাহাড় ধ্বসে পড়ায় এ সড়কটিতে প্রায় এক মাস ধরে যান চলাচল বন্ধ ছিল। অন্যদিকে দেশের সর্বোচ্চ সড়ক থানচি-আলীকদম ডিম পাহাড় সড়কটির বেশিরভাগ অংশই ধ্বসে পড়েছে।

এছাড়া চিম্বুক-থানচি সড়ক, বান্দরবান-কেরানীর হাট সড়ক, বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়ক, লামা-আলীকদম সড়ক, রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পেভমেন্ট ধ্বসে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কালভার্ট, বেইলি ব্রিজসহ সড়কের পাশের অংশ।

সড়ক জনপথ বিভাগ সম্প্রতি এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক জরিপ করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করেছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সড়ক জনপথ বিভাগের আড়াইশ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ৭০ কিলোমিটার সড়কই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে নিরাপত্তাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের সংস্কার কাজের আওতাধীন ওয়াইজংশনের রুমা সড়ক, চিম্বুক-থানচি সড়কসহ বেশ কয়েকটি সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বান্দরবান সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম খান জানান, বান্দরবানের গুরুত্বপূর্ণ ৯টি সড়কে এবার ভারী বর্ষণে ৩০৪ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে এসব সড়ক দ্রুত মেরামতের জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ৮ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া মধ্য মেয়াদী সংস্কারে ১৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ও দীর্ঘ মেয়াদী সংস্কারের জন্য ২’শ ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোতে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ইতোমধ্যে সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে নিরাপত্তাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ ১৯ ইসিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ইফতেখার শাহরিয়ার জানান, বান্দরবান চিম্বুক ও ওয়াইজংশনের রুমা সড়ক দু’টির বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গেল ১২ জুনের পর থেকে বন্ধ থাকা রুমা সড়কটি চালু করতে সক্ষম হয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী।

এলজিইডর সিনিয়ার প্রকৌশলী মো. জিল্লুর রহমান জানান, নির্মাণাধীন সড়করে মধ্য ২৫ কিমি. সড়ক মেরামত ও ছোটখাট প্রায় ১৫০ মিটার ছোটখাট বক্স কালভার্ট দ্রুত গতিতে মেরামতের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার রিটন কুমার বড়ুয়া জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে জেলার ২৯টি কাঁচ-পাকা নির্মাণাধীন প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ৪৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।

সুলতান পুরের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, মোরার আঘাতে কড়লা ও শসা ক্ষেতের মাচাং ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে বন্যায় সবডুবে সম্পূর্ণ ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছিলাম। ফলন আসার সময়ে মোরা ও বন্যায় সব শেষ হয়ে গেল। সরকার থেকে কিছু সহযোগিতা পায়নি।

কৃষি সম্প্রসারাণ বিভাগের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, মোরার আঘাতে কৃষকদের আম, কলা ও পেপে ঝড়ে পড়েছে। এছাড়া আমনের বীজ তলা ও সবজি মিলিয়ে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বন ও ভূমি সংরক্ষন অধিকার আদায়ের সভাপতি জুমলিয়ান আমলাই বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ হবেই, এতে কারো হাত নেই। তবে পার্বত্য এলাকায় প্রাকৃতিক দূর্যোগের জন্য স্থানীয় বসবাসকারী এবং প্রশাসনই দায়ী।

তিনি বলেন, শহর কেন্দ্রিক জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে। তাই তারা বসবাসের জন্য এবং উন্নয়নের নামে যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টির জন্য প্রকৃতির সৃষ্টি পাহাড়ের গায়ে হাত দিয়ে তার ভারসাম্য নষ্ট করছে। এছাড়া নির্বিচারে গাছ কাটা, ও পাথর উত্তোলনের জন্য ভূমি ধ্বসের প্রধান কারণ বলে মনে করেন জুমলিয়ান আমলাই।

জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক বলেছেন, গাছ কাঁটা, পাথর উত্তোলন ও অপরিককল্পিত পাহাড় কাঁটাকে পাহাড় ধ্বসের প্রধান কারণ। এছাড়া জেলার অধিকাংশ বালি পাহাড় হওয়ায় এবং পাহাড়ের গায়ে ছোটখাট গর্তে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়ায় ধারণ ক্ষমতার বাইরে যাওয়ায় পাহাড় ধ্বসের অন্যতম কারণ।

ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পূণর্বাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, পূণর্বাসনের জন্য ভূমি খোঁজা হচ্ছে। শহরের আশেপাশে সুবিধামত ভূমি পেলে অধিগ্রহণ করে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

 

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন