Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

রামগড়েই সর্বপ্রথম চালু হয় মুক্তিফৌজের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

রামগড় প্রতিনিধি:

৭১ এর আজ এ দিনে পাকহানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে দীর্ঘ ৭ মাস ৬ দিন পর রামগড়ের মাটিতে উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। শত্রুমুক্ত হয় বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ ঘাঁটি। মহান মুক্তিযুদ্ধে  রামগড়ের ভুমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেসময় খাগড়াছড়ি ছিল রামগড় মহকুমার মহালছড়ি থানাধীন একটি ইউনিয়ন মাত্র। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণার পর ১৬ মার্চ আওয়ামী সংগ্রাম পরিষদ গঠনের মাধ্যমে মহকুমা শহর রামগড়ে ব্যাপকভাবে শুরু অসহযোগ আন্দোলন।

২৫মার্চের পর চট্টগ্রামের বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, অভিনেত্রীসহ  সামাজিক নেতৃবৃন্দ রামগড় আসতে শুরু করেন। আসেন মেজর জিয়া, ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম(পরবর্তীতে মেজর ও সাবেক স্বরাস্ট্রমন্ত্রী), ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদেরসহ বেশ কয়েকজন সামরিক অফিসার। মেজর জিয়া ও ক্যাপ্টেন রফিকের নেতৃত্বে রামগড় হাই স্কুল মাঠে খোলা হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। মুক্তিফৌজের সর্বপ্রথম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এ রামগড়েই খোলা হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান আহমেদের(মরহুম) নেতৃত্বে শত শত মুক্তিকামী তরুণ, যুবক সকলেই দেশকে স্বাধীন করার দৃঢ় প্রত্যয়ে এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। একদিকে পাক সরকার বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন চলে, অন্যদিকে রামগড়কে শত্রুমুক্ত রাখতে বিভিন্ন স্থানে ঘাঁটি বসিয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে পরিচালিত হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। রাঙ্গামাটি পতনের পর ১৩ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সদর সেখান থেকে স্থানান্তরিত করে নিয়ে আসা হয় রামগড়ে। রামগড়ে এসে তৎকালীন জেলা প্রশাসক(বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা) এইচটি ইমাম স্বাধীন বাংলা সরকারের অধীনে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করেন।

এরমধ্যে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালি প্রভৃতি এলাকা থেকে হাজার হাজার বাস্তুহারা মানুষ ভারতে পাড়ি জমাতে রামগড়ে আসতে শুরু করেন। জেলা প্রশাসক এইচ টি ইমাম এসব বাস্তুহারা মানুষের খাবার দাবারের জন্য লঙগর খানা খোলেন। ফেনী নদীর উপর কাঠের সেতু নির্মাণ করে ভারতে আনা হয় অস্ত্র গোলাবারুদসহ বিভিন্ন সমরাস্ত্র।

এসব অস্ত্রশস্ত্র রামগড় থেকে চাঁদের গাড়ি করে পাঠানো হয় চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে। ২৭ এপ্রিল মহালছড়িতে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর মিজো ও চাকমা মুজাহিদদের সাথে এক প্রচণ্ড যুদ্ধে শহীদ হন অকুতভয় তরুণ সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীর উত্তম। রামগড়ের মাটিতে সমাহিত করা হয় এ বীর শহীদকে।

২ মে ভোর বেলায় ভারী কামান ও শক্তিশালী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চারিদিক থেকে রামগড় ঘাঁটির উপর হামলা চালায় পাকবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুদের প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করে। কিন্তু  শত্রু পক্ষের বিপুল সৈন্য সংখ্যা ও ভারী অস্ত্রশস্ত্রের মুখে বেশীক্ষণ টিকতে পারেনি  মুক্তিযোদ্ধারা। বিকেল ৫টার দিকে পাকবাহিনী পুরো রামগড় দখল করে নেয়। পতন হয় চট্টগ্রাম , কুমিল্লা খন্ডের মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে শক্তঘাঁটির।

রামগড় পতনের পর সেক্টর এক এর হেডকোয়ার্টার পুনঃস্থাপন করা হয় সীমান্তের ওপারের ভারতের ত্রিপুরার সাবরুম মহকুমার হরিনায়। এর আওতায় সাবরুমের অম্পি নগর, বগাফা, পালাটনা,হরিনা প্রভৃতি স্থানে স্থাপিত ট্রেনিং সেন্টারে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়। সেক্টর এক এর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম(সাবেক স্বরাস্ট্র মন্ত্রী) তত্ত্বাবধান করেন এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের।

শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করে রামগড়ের মাটিতে আবার স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ানোর দৃপ্ত শপথ নিয়ে সাবরুমের ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ নেয় ১২ বছরের বালক থেকে ৫০ বছরের প্রৌঢ় সবাই। প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারীদের নিয়ে গঠন করা হয় পৃথক পৃথক যোদ্ধা গ্রুপ। রামগড়ের এসব অগ্নিতরুণ যুবকযোদ্ধারা প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদার মুক্ত করতে শুরু করেন মরণপণ মুক্তিযুদ্ধ। রামগড়ের শত্রুঘাঁটির উপর তাঁরা প্রায়ই গেরিলা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করে পাক বাহিনীর।

৭ ডিসেম্বর সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর তিনটি জেট বিমান রামগড়ে দখলদারবাহিনীর অবস্থান গুলোর উপর প্রবল বোমা বর্ষণ করে। প্রায় সাত মিনিট বোমা হামলা শেষে বিমান তিনটি ফিরে যাওয়ার সাথে সাথে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সন্মিলিতভাবে কঠোর আক্রমন চালায় পাকহানাদারদের উপর। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় শত্রুরা।

ফলে ভীতসন্ত্রস্ত পাকবাহিনীর সৈন্যরা ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে পিছু হটতে শুরু করে। ৮ ডিসেম্বর  সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে  আরো দুটি ভারতীয় বিমান পাকঘাঁটির উপর পাঁচ মিনিট বোমা বর্ষণ করে। বিমান থেকে বোমা হামলা আর  স্থলে অকুতোভয় বীরযোদ্ধাদের মরণপণ গেরিলা আক্রমণে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে পাক সেনারা। শেষ পর্যন্ত শত্রুরা নিজের প্রাণ বাঁচাতে সদলবলে রামগড় থেকে পালাতে শুরু করে।

৮ ডিসেম্বর বিকেলের আগেই  পাক সৈন্যরা সবাই রামগড়ের মাটি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়। বিকেল ৪টার দিকে ভারতের সাবরুমের আশ্রয় শিবির থেকে বিজয় উল্লাসে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশের মাটিতে ছুটে আসে রামগড়ের মানুষ। রামগড় বাজারে উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন