রুম বুকিং থাকা সত্বেও গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছেন কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা
কক্সবাজার প্রতিনিধি:
আকাশের গোমরা মুখ এবং ঘন কুয়াশার কারণে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে না পাওয়া ও আলাদা উৎসবহীন এবারের থার্টি ফাস্ট নাইট অনেকটা বিষাদেই কেটেছে কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের। পর্যটকদের অনেকেই রুম বুকিং থাকা সত্বেও ইতোমধ্যে চলে যেতে শুরু করেছেন গন্তব্যে।
সোমবার ও মঙ্গলবার সারাদিন থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় অর্ধলক্ষাধিক পর্যটক রুম বুকিং থাকা সত্বেও ফিরে গেছেন গন্তব্যে। ভোর থেকেই শুরু হওয়া গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি অবিরাম ঝরছে। এতে করে আগত পর্যটকদের মন ভালো নেই বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে গত রবিবার সকাল থেকেই চারপাশ ছিল কুয়াশায় ঘেরা। সকাল গড়িয়ে বিকেল নামলেও আকাশের মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন ভাব কাটেনি। উল্টো সাথে যোগ হয়েছিল হিমেল হাওয়া আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। তারপরও বছরের শেষ সূর্যকে বিদায় জানাতে রবিবার ভোরের আলো ফোটার আগে থেকেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভীড় জমাতে শুরু করে পর্যটকরা। তাদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও বিকেলের নাগাদ সৈকতে ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। আকাশের সেই গোমড়া মুখকে উপেক্ষা করে বিকেলে সৈকত পরিনত হয় জনসমুদ্রে। সন্ধ্যা যতই ঘনিয়ে আসছিল লাখো পর্যটকের দৃষ্টি ততই পশ্চিমাকাশে। দূর সাগরের নীল জলরাশির উপর অপলক নয়নে তাকিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত সূর্যের দেখা পায়নি চার লক্ষাধিক পর্যটক।
ঢাকা গুলশান থেকে আগত পর্যটক দম্পতি অনন্ত ও একা বলেন, একদিকে বছরের শেষ সূর্যকে বিদায় জানাতে পারিনি, অন্যদিকে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজনই রাখেনি স্থানীয় প্রশাসন। এবার কক্সবাজার আসাটাই বৃথা। আজ সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। মনটাই খারাপ। কোথায় যাবো। কিভাবে আনন্দ উচ্ছাস করবো। তাই ৫দিনের সফর ২দিন কেটেই চলে যাচ্ছি।
ঢাকা থেকে আসা আলভী-রুহি নামের দম্পতি জানালেন, বছরের শেষ দিনটি কক্সবাজার কাটাবো আর বছরের শুরুর দিনটি সেন্টমার্টিন যাবো। শেষ দিনটি বিষাদের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার কাটালেও বছরের শুরুর দিনটি সেন্টমার্টিন না গিয়ে চলে যাচ্ছি গন্তব্যে। গতকাল সোমবার সকালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে সেন্টমার্টিনের যাত্রা বাতিল করেছি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো তবুও দেখি বৃষ্টি থামেনি। তাই গাড়িতে উঠতে বাধ্য হচ্ছি।
আগত পর্যটকদের এভাবে অনেকেরই রুম বুকিং থাকা সত্বেও গাড়িতে উঠতে দেখা গেছে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এবারের থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজারে প্রায় চার লাখ পর্যটক এসেছে। তবে কোন উৎসবের অনুমতি না থাকায় তাদের বিনোদনের জন্য কিছুই করা সম্ভব হয়নি। তাই আগামী বছর এর মাশুল গুনতে হবে পর্যটন ব্যবসায়ীদের।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী বলেন, এবারের থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে আউটডোর উৎসবের অনুমতি শুধু কক্সবাজার নয় সারাদেশেই নেই। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু সেদিন থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়া খারাপ থাকায় স্ব-স্ব গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছেন অনেক পর্যটক।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল বলেন, আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েছি। তাদের নিরাপত্তায় কলাতলী থেকে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত ৬টি তল্লাশী চৌকি স্থাপন করা হয়। ট্যুরিস্ট পুলিশসহ জেলা পুলিশের ৫ শতাধিক পুলিশ তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল।