রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতাটির বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ডি-ফ্যাক্টো ব্যবস্থার ওই রাষ্ট্রে নিপীড়ক সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। জাতিসংঘের তরফ থেকেও ওই সমঝোতা বাস্তবায়নে ঊর্ধ্বতন সেনা নেতৃত্বের বাধা সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

অং সান সু চির সরকার আন্তর্জাতিক চাপের ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিটি সম্পন্ন করে। তবে জান্তা প্রণীত সংবিধানে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীই ডিফ্যাক্টো সিন্টেমের নিয়ন্ত্রক। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, মূলত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের হাত থেকে বাঁচতেই গত ৩ মাসে সোয়া ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের নেতৃত্ব দিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী উগ্র বৌদ্ধদেরও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছে।

মিয়ানমারের বর্তমান সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং চরম রোহিঙ্গাবিরোধী। তিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা কোনো কর্মরত সেনাপ্রধানের পক্ষে দেয়া শুধু অশোভনই নয়, রীতিমতো ধৃষ্টতা। সম্প্রতি মিয়ানমার সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন হ্লাইংয়ের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন। তবে সেই বৈঠক যে ফলপ্রসূ হয়নি তা বোঝা যায় বুধবার টিলারসনের দেয়া বিবৃতিতে। এতে তিনি রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী জাতিগত নিধন চালাচ্ছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।

চীন সফররত মিয়ানমার সেনাপ্রধান হ্লাইং বুধবারও বলেছেন, ‘রাখাইন পরিস্থিতি স্থানীয় রাখাইন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী (মগ) ও বাঙালি (রোহিঙ্গা) উভয়ের কাছে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হতে হবে। বরং স্থানীয় রাখাইন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীই মিয়ানমারের সত্যিকারের নাগরিক এবং সে কারণে তাদের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিতে হবে।’ তিনি রোহিঙ্গাদের ফের বাঙালি তথা অবৈধ অভিবাসী বলে মন্তব্য করেছেন এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মতোই বর্বর মগদের পক্ষ নিয়েছেন। বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ১৯৮২ সালের দেশটির নাগরিকত্ব আইন এবং ১৯৯২ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। ১৯৮২ সালে জান্তা প্রণীত চুক্তির ফলেই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়, যদিও তারা সেখানে কয়েক শতাব্দী ধরে বাস করছেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারে জাতিসংঘের কর্মকর্তারাও শঙ্কিত যে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা নাও করতে পারেন।

এর আগে মানবাধিকার কর্মীরাও উদ্বেগ জানিয়েছিলেন যে সামরিক বাহিনী এই প্রক্রিয়া ব্যহত করতে পারে। সু চির সামরিক বাহিনীর ওপর কোনও প্রভাব নেই। মূলত এজন্যই মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রত্যাবাসন এই প্রক্রিয়ার সংবাদে উদ্বিগ্ন।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের শরণার্থী ও অভিবাসী অধিকার পরিচালক চারমেইন মোহাম্মদ বনে, এই চুক্তির বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করেনি। মিয়ানমারের নিধনযজ্ঞ শেষ হতে না হতেই তাদের আবার ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারে যতদিন বর্ণবৈষম্য থাকবে ততদিন তাদের ফেরা নিরাপদ নয়। বর্তমান পরিস্তিতিতে তাদের ফেরার কথা ভাবাও যায় না। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অবস্থা ভালো না। সাম্প্রতিক নিধনযজ্ঞের মাত্রা হয়তো সবচেয়ে বেশি। তবে বছরের পর বছর মিয়ানমারের বৌদ্ধ সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে আসছে।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন