রোহিঙ্গা ইস্যুতে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ, ১০ লাখ পর্যটক হারাচ্ছে বাংলাদেশ!

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চলতি মৌসুমে প্রায় ১০ লাখ পর্যটকের বাজার হারাতে বসেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের রাখাইনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার পর থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

গত দু’মাস ধরে এই রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটকদের উপস্থিতিও কমে গেছে।পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাহাজ চলাচল শুরু করতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক বসলেও সিদ্ধান্ত ছাড়াই তা শেষ হয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নৌমন্ত্রী বৈঠক করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে বৈঠকে জানানো হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত পেন্ডিং থাকলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নৌ মন্ত্রণালয় কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সুপারিশ করা হয়েছে যে, নৌ পরিবহনমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড় দিলেই জাহাজ চলাচল শুরু হবে।’

বিআইডব্লিউটিএ-র চেয়ারম্যান আরও  বলেন, ‘আর যদি তা না হয়, তাহলে বিকল্প পথ হিসেবে কক্সবাজার সদর বা রেজু খাল থেকে জাহাজ চালানো যাবে। বিকল্প নৌপথ ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে।’

তাহলে বিকল্প এই রুটে এখন জাহাজ চালানো হচ্ছে না কেন, জানতে চাইলে কমোডর এম মোজাম্মেল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই রুটে সময় বেশি লাগবে বলে মালিকরা জাহাজ চালাচ্ছেন না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সমুদ্র শান্ত থাকায় প্রায় ১০ লাখ পর্যটক টেকনাফ থেকে জাহাজে সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করেন। কিন্তু মিয়ানমার থেকে রেহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসায় সমস্যা দেখা দেয়। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে টানাপড়েনের কারণে এ রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সেন্টমার্টিন ভিত্তিক পর্যটন শিল্পে।

এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও জাহাজ চলাচলের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত ছাড়াই তা শেষ হয়। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।

বৈঠকে জানানো হয়, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌ পথের দূরত্ব ৩৪ নটিক্যাল মাইল। মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী নাফ নদী হয়ে যেতে হয় প্রায় ২৪ নটিক্যাল মাইল। সমুদ্র পাড়ি দিতে হয় ১০ নটিক্যাল মাইল। নাফ নদীর অংশ পার হওয়ার সময় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাসাকা একাধিকবার বাংলাদেশি নৌযানে গুলি চালায়। এ পরিস্থিতিতে মাছ ধরার ট্রলারের পাশাপাশি যাত্রী ও পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বৈঠকের পর ‘ট্যুর অপারেটরস-কক্সবাজার’ এর যুগ্ম আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে দুই মাস ধরে। এতে করে  এ মৌসুমে দেশি প্রায় ১০ লাখ পর্যটক বাইরের দেশে চলে যাবেন। ইতোমধ্যেই অনেক পর্যটক বাইরে চলে গেছেন। এছাড়া, জাহাজ চলাচল না করায় ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন অনিশ্চতার মধ্যে।’

দ্রুত বিজিবি ও নাসাকার সঙ্গে পতাকা বৈঠক করে জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান তোফায়েল আহমেদ।

সমুদ্রে জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম জানান, সভায় সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচলের কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর অক্টোবরের শুরু থেকে পরের বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত এই রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন