রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে আগ্রহী মিয়ানমারের তদন্ত কমিশন
রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের একটি তদন্ত কমিশন। এ লক্ষে বাংলাদেশকে একটি চিঠিও দিয়েছে তারা। তবে এ চিঠির ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে কোন সাড়া পায়নি বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের কমিশন। সাড়া পাওয়ার পর রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শনে আসতে চান তারা।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি গত বছরের জুলাইয়ে স্বাধীন অনুসন্ধান কমিশন (ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন অব ইনকোয়ারি-আইসিওই) নামে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেন। ফিলিপাইনের কূটনীতিক রোসারিও মানালাওকে প্রধান করে গঠিত এই কমিশনের কাজ শেষ করতে এক বছর সময় দেওয়া হয়।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএ জানিয়েছে, কমিশনের তরফে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করতে অনুমতি চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ। আইসিওই-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, সর্বশেষ গত ২৮ মে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন ওই মুখপাত্র।
মিয়ানমারে সেনা নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালের আগস্টে কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে সহিংসতা বাড়ে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। রাখাইনে সেনা অভিযানে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে গত বছর জাতীয় তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করে মিয়ানমার। এর আওতায় গঠন করা হয় স্বাধীন অনুসন্ধান কমিশন- আইসিওই।
আইসিওই-এর মুখপাত্র বলেছেন, ‘অনুসন্ধানের মাধ্যমে যে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হলে ব্যাপক তদন্ত কাজ চালানো দরকার। এক্ষেত্রে কক্সবাজার পরিদর্শন করতে আইসিওই-এর অনুরোধে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, ‘ফলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের জাতীয় তদন্ত প্রক্রিয়াকে হতাশ করছে বাংলাদেশ’। তবে ওই মুখপাত্র আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ তাদের অনুরোধে সাড়া দেবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে গত ৭ জানুয়ারি ড. একে আবদুল মোনেমকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইসিওই বলছে, ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করে মোনেমকে চিঠি দেন রোসারিও মানালাও। সর্বশেষ গত ২৮ মে আইসিওই-এর চেয়ারপারসন মানালাও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিস্তারিত প্রয়োজনের কথা জানিয়ে আবারও চিঠি দেন। তবে কমিশনের মুখপাত্র বলছেন, বাংলাদেশ এখনও কোনও সাড়া দেয়নি। মিয়ানমারের কমিশন বলছে তাদের লক্ষ্য হলো কক্সবাজারে বসবাসরত প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষ্য রেকর্ড, প্রমাণ ও তথ্য সংগ্রহ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে ২০১৭ সালের নভেম্বরে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ওই চুক্তির আওতায় একজন রোহিঙ্গাও বাংলাদেশ থেকে ফেরত যায়নি। বাংলাদেশের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদে বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়নি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও একই ধরনের মত দিয়েছে।