সুপার ওভারে নিউজিল্যাণ্ডকে হারিয়ে ইংল্যান্ডের প্রথম বিশ্বকাপ জয়

fec-image

এমন ফাইনাল বিশ্বে এর আগে দেখেনি কেউ। তাই কারো প্রত্যাশাতেও ছিলো না এমন ফাইনালের। যেখানে দুইদলই সমান, কিন্তু জিতেছে একদল। শেষ ওভারের আগেও বোঝা যাচ্ছে না কে জিতবে। সেই কবে ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ দিকেও একটু উত্তেজনা ছিল।

এরপর বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল মানেই একপেশে লড়াই। ম্যাচ শেষ হওয়ার বহু আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সব উত্তেজনা। সব ম্যাচ রূপ পেয়েছিল ম্যাড়ম্যাড়ে এক ওয়ানডেতে। কিন্তু আজ ইংল্যান্ড যখন সুপার ওভারে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতল, সে ফাইনালের গায়ে অন্তত কেউ অপবাদ কেউ দিতে পারবেন না।

শেষ ওভারে দরকার ১৫ রান। স্ট্রাইকিং প্রান্তে বেন স্টোকস। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনালে শেষ ওভারে ৪ ছক্কা খেয়ে এক বিশাল দায় বইছেন যিনি। প্রথম দুই বলে কোনো রান এল না। তৃতীয় বলেই ছক্কা। নড়েচড়ে বসলেন সবাই।

পরের বল কাউ কর্নারে পাঠিয়ে দৌড় দিলেন স্টোকস। মার্টিন গাপটিল যে দুর্দান্ত থ্রো করলেন সেটা গিয়ে লাগল স্টোকসের ব্যাটে। সে বল সেই ছুট লাগাল, সীমানা পেরোনোর আগে আর থামল না! দুই রানের বদলে এল ৬ রান! ২ বলে মাত্র ৩ রান দরকার ইংল্যান্ডের!

পঞ্চম বল লং অফে পাঠিয়ে দুই রান নেওয়ার চেষ্টা করলেন স্টোকস। কিন্তু ননস্ট্রাইকিং প্রান্তে রান আউট হলেন আদিল রশিদ। ১ বলে দরকার দুই রান। এবার লং অনে বল ঠেলে দিয়েই আবার দুই রানের চেষ্টা, এবারও রান আউট।

দ্বিতীয় রানের চেষ্টা করতে গিয়ে রান আউট মার্ক উড। ৮৪ রানে অপরাজিত স্টোকস, কিন্তু ওতেও লাভ নেই। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনাল টাই হলো! যে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনাল ও সেমিফাইনাল টাই হলে সুপার ওভার হওয়ার নিয়ম করা হলো, সেবারই ফাইনাল গড়াল সুপার ওভারে।

সুপার ওভারেও বল হাতে তুলে দেওয়া হলো ট্রেন্ট বোল্টের হাতে। ইংল্যান্ডের পক্ষে নামলেন বাটলার ও স্টোকস। সে ওভারে দুই চার ও এক তিনে এল ১৫ রান। ১৬ রানের লক্ষ্য পেল পুরো বিশ্বকাপে বাজে ব্যাটিং করা নিউজিল্যান্ড। স্ট্রাইকিং প্রান্তে গেলেন জিমি নিশাম। প্রথম বলটাই হলো ওয়াইড! পরের বলেই দুই রান, পরের বলেই ছক্কা। ৪ বলে মাত্র ৭ রান দরকার।

এমন অবস্থায় পরের দুই এলে ৪ রান। ২ বলে দরকার ৩ রান। পরের বলে এল ১ রান। শেষ বলে দুই রান দরকার। স্ট্রাইকে ভয়ংকর এক বিশ্বকাপ কাটানো গাপটিল। গাপটিল কোনো রূপকথা লেখার সুযোগ পেলেন না। ডিপ মিড উইকেটে বল পাঠিয়ে ২ রান নেওয়ার চেষ্টা করলেন, কিন্তু জেসন রয়ের থ্রো বাটলারের কাছে এসে পৌঁছাল একটু আগে। রান আউট হয়ে গেলেন গাপটিল। সুপার ওভারও টাই হলো!

কিন্তু তবু বাটলার কেন অত আনন্দে ছুটে বেড়াতে লাগলেন, কেন পুরো ইংল্যান্ড দল ওভাবে পাগলের মতো ছুটতে লাগল? কারণ, সুপার ওভারের নিয়মেই যে লেখা যদি দুই দল সমান রান করে তখন বাউন্ডারির হিসাব চলে আসে। মূল ম্যাচ ও সুপার ওভার মিলিয়ে যে দল সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারি মারবে তারাই জিতবে সুপার ওভার।

সেখানে যদি দুই দলে সমতা থাকে তখন দেখা হবে সুপার ওভারে কারা বাউন্ডারি বেশি মেরেছে তার। নিউজিল্যান্ড মূল ইনিংসে ১৬টি বাউন্ডারি মেরেছিল। আর ইংল্যান্ড মেরেছিল ২৪টি। ফলে সুপার ওভারে নিউজিল্যান্ড যত বাউন্ডারিই মারুক না কেন ইংল্যান্ডকে টপকাতে পারত না তারা। আর তাতেই মহা নাটকীয় এক ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ড অবশেষে দেখা পেল সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ ট্রফির। তিনটি ফাইনাল হারার দুঃখ সেই লর্ডসেই ভুলল ইংল্যান্ড।

আজ দিনটাই হয়তো নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ছিল না। না হলে ৪৯তম ওভারে বোল্ট স্টোকসের ক্যাচ ধরে সীমানা দড়িতে পা না দিলে ম্যাচ হয়তো তখনই শেষ হয়ে যেত। এর পর শেষ ওভারে ওভার থ্রোতে আসা সেই ৪ রান না হলেও তো ম্যাচটা আর সুপার ওভারে গড়ায় না। নিউজিল্যান্ডই তখন হয়তো আজ লর্ডসের ব্যালকনিতে আজ উদ্‌যাপন করত।

কে জানে দিনের শুরুটাই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলে গেল কি না। এর আগে লর্ডসের আগের চার ফাইনালেই টসে জেতা দল হেরেছিল। আজ টসে জিতে নিউজিল্যান্ড যখন ব্যাটিং বেছে নিল, তখনো সে কথাটি উচ্চারিত হচ্ছিল। সে কথাটিই আবার সত্য হলো!

হেনরি নিকোলস ও টম ল্যাথামের দুই ইনিংস ২৪১ রানের যে ছোট সংগ্রহ এনে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে, সেটাকেই অনেক বড় বানিয়ে দিয়েছিল বোলাররা। ৮৬ রানের মধ্যে প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলেছিল ইংল্যান্ড।

এরপরই বাটলার ও স্টোকস হাল ধরলেন। ১১০ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরালেন দলকে। এরপরই অবশ্য বাটলার ও ওকসকে ফিরিয়ে ম্যাচ ঘুড়িয়ে দিয়েছিলেন ফার্গুসন। জিমি নিশামও প্লাংকেট ও আর্চারকে বিদায় দিয়েছিলেন। কিন্তু স্টোকস যে ছিলেন।

এক বছর আগেও জেল খাটার শঙ্কায় দিন কাটিয়েছেন, নিষিদ্ধ হয়ে বাইরে সময় কাটিয়েছেন ছয় মাস। একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শেষ ওভারে মাথা ঠান্ডা রাখতে না পেরে খেয়েছেন টানা ৪ ছক্কা। সে দায় কী দুর্দান্তভাবেই না মেটালেন স্টোকস।

তবু, এ বিশ্বকাপের গল্পটা সুপার ওভারের, এ গল্পটা একটি ওভার থ্রোর।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বকাপ ক্রিকেট
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন