সুযোগ সন্ধানী ও স্বার্থপরতা চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের চরিত্র
সন্তোষ বড়ুয়া, রাঙ্গামাটি থেকে:
ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি আর বই পুস্তকে পড়ে এসেছি যে, বাংলাদেশে চাকমা, মারমা, সাঁওতাল, গারো, খাসিয়া, ত্রিপুরা, মুরং, তঞ্চংগ্যা, খুমি, খেয়াং, লুসাই ইত্যাদি নামের উপজাতি বসবাস করে। কিন্তু হঠাৎ করে এখন শুনছি এরা নাকি উপজাতি নয়, এরা আদিবাসী। বিষয়টা নিয়ে পড়াশুনা করা শুরু করলাম।
সকল তথ্য-উপাত্ত আর ইতিহাস থেকে যা জানলাম তাতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ পেলাম যে, ওরা আসলেই উপজাতি। আদিবাসী নয়। তবে আমার আজকের লেখার বিষয় উপজাতি-আদিবাসী বিতর্ক নয়। বরং এই বিষয়টিকে পুঁজি করে প্রাক্তন চাকমা সার্কেল চিফ রাজাকার ত্রিদিব রায়ের পুত্র ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের স্বার্থপরতা এবং স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার বানানোর কৌশল নিয়ে।
২০১১ সালে সিলেটে এক অনুষ্ঠানে সরকারদলীয় নারী সাংসদ সৈয়দা জেবুন্নেছা হক বলেছিলেন, “আমি তো জানি উপজাতি। সারা জীবন তো এভাবেই বলে আসছি। এখন উপজাতিরা অনুষ্ঠান আয়োজন করে আদিবাসী স্বীকৃতির নামে সরকারের সমালোচনা করবে, আর আমি তো বসে থাকতে পারব না”। (সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, ১০ আগস্ট ২০১১).
কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ নেয়া তৎকালীন চাকমা সার্কেল চীফ ত্রিদিব রায়ের পুত্র বর্তমান চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, “আমরা চাপিয়ে দেয়া কোনো পরিচয় মানি না। আমরা উপজাতি নই, আদিবাসী। এ দাবি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাবো” (সূত্র- somewhereinblog, ৩০ মে, ২০১১)।
দেবাশীষ রায়ের এই কথার স্ববিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়। কারণ, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশেষ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকালে চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যরিস্টার দেবাশিষ রায় রাষ্ট্রীয়ভাবে অফিসিয়ালি লিখেছিলেন যে, “বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নাই। কিছু জনগোষ্ঠী আছে”।
এ প্রসংগে, জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইকবাল আহমেদ ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে সরকার যে চুক্তি করেছে সে প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেছিলেন, চুক্তির সবখানে তারা নিজেদের উপজাতি হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে সই করেছে। সে সময় এ নিয়ে কোনো কথা তোলেননি। তাদের উপর এ পরিচয় চাপিয়ে দেয়া হয়নি। এমনকি তাদের কেউ এ নিয়ে আপত্তিও করেননি। কারণ ওখানে কোনো আদিবাসী নেই। (সূত্র- somewhereinblog, ৩০ মে, ২০১১).
জাতিসংঘের আদিবাসী দশক ঘোষণার পর ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে যখন প্রথম আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন করা হয়েছিল, তখন সন্তু লারমা বলেছিলেন “এই দেশে কোন আদিবাসী নাই। এখানে আমরা সবাই উপজাতি। জুম্ম জনগনের আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আদিবাসী দিবস পালন করা হচ্ছে”।
এ প্রসংগে সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেছিলেন, “১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের সময়ে আমি সন্তু লারমাকে বলেছিলাম এসময়ে উপজাতির পরিবর্তে আদিবাসী বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে ফেলি, তখনও সন্তু লারমা রাজি হয়নি। তখনও সন্তু লারমা বলেছিলেন আমরা আদিবাসী নই, আমরা উপজাতি। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তিতে প্রচলিত ‘উপজাতি’ শব্দটি বহাল রাখা হয়”।
পার্বত্য নেতাদের এরকম স্ববিরোধী বক্তব্য জনমনে যেমন হাস্যরসের সৃষ্টি করছে তেমনি তারা তাদের নিজস্ব অবস্থান এবং পদমর্যাদাকে উপহাসের পাত্রে পরিণত করছে। আসল কথা হচ্ছে একজন মানুষ যখন মিথ্যার পিছনে ছোটে এবং যখন সে নিজেই জানে না যে সে কি চায়? শুধুমাত্র তখনই সম্ভব এ ধরনের গাঁজাখুরি আর স্ববিরোধী বক্তব্য প্রদান করা। নেতাদের এরূপ স্ববিরোধী বক্তব্য আর কর্মকাণ্ডের কারণে তাদেরই স্বজাতি উপজাতিরা তাদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। তাদের এ পাগলের প্রলাপ এখন আর সরকার, জনগণ এবং মিডিয়ার কাছে গুরুত্ব পায় না।
প্রসংগত উল্লেখ্য যে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করে সরকারি চাকরিতে ‘আদিবাসীদের’ জন্য ৫% কোটা বহালের দাবি জানিয়েছেন মি. রবীন্দ্রনাথ সরেন, পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, ফজলে হোসেন বাদশা (এমপি), অধ্যাপক ইয়াসিন আলী (এমপি), অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, নূমান আহম্মদ খান, বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়, হরেন্দ্রনাথ সিং, বিভূতী ভূষণ মাহাতো, আশিক বানিয়াস, সোহেল চন্দ্র হাজং, নকুল পাহান, পরিমল মাহাতো, প্রভাষ মাহাতো প্রমূখ।
কিন্তু বাংলাদেশে কোনকালেই যে ‘আদিবাসী’ কোটা ছিলো না সেই তথ্যটাই তারা হয়তো জানে না অথবা জানার পরও কোন একটি স্বার্থান্বেষী মহলের বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই অর্থের বিনিময়ে কাঠের পুতুলের মত তাদের শেখানো বুলি টেপ রেকর্ডারের মত বাজিয়ে গেছেন। আদতে, বর্তমানে সরকারি চাকরির জন্য সংরক্ষিত কোটার পরিমাণ শতকরা ৫৬ ভাগ। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শতকরা ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০, উপজাতি কোটায় ৫ এবং প্রতিবন্ধী কোটায় ১ শতাংশ।
সরকারী চাকুরীতে যে কোটা বরাদ্দ আছে সেখানে কোথাও ‘আদিবাসী’ কোটা বলে কিছু নেই। যেটা আছে সেটা হলো ‘উপজাতি’ কোটা।
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে যে শান্তিচূক্তি স্বাক্ষরিত হয় সেই শান্তিচূক্তির অনুচ্ছেদ ঘ(১০) এ উল্লেখ আছে যে,
“কোটা সংরক্ষণ ও বৃত্তি প্রদান: চাকুরী ও উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সমপর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত সরকার উপজাতীয়দের জন্য সরকারী চাকুরী ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখিবেন”।
সেই ধারাবাহিকতায় সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে ৫% উপজাতি কোটা চলমান। কিন্তু সম্প্রতি সংঘটিত কোটা আন্দোলনের পর বাংলাদেশ সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে সকল প্রকার কোটা তুলে দিয়েছেন। ফলে এ শ্রেণীতে উপজাতি কোটাও বাতিল হয়ে গেছে।
লেখার শুরুতেই বলেছি যে, বর্তমান চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেছিলেন- “আমরা চাপিয়ে দেয়া কোনো পরিচয় মানি না। আমরা উপজাতি নই, আদিবাসী। এ দাবি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাবো”।
কিন্তু হাস্যকর বিষয় হলো, সেই চাকমা সার্কেল চিফের মুখেই এখন ভিন্ন বুলি। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের আদিবাসী স্বীকৃতির দাবীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে প্রবলভাবে সোচ্চার হলেও গত ১ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে, প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরিত এক চিঠিতে উপজাতিদেরকে ‘আদিবাসী’ আখ্যার পরিবর্তে
‘পাহাড়ী’ ও ‘স্বল্প সংখ্যার জাতিসত্ত্বা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার যেহেতু দেশের উপজাতিদেরকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি তাই চতুর দেবাশীষ রায় তার কোটার দাবি সংক্রান্ত চিঠিতে ‘আদিবাসী’ শব্দটি সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন শুধুমাত্র সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে। হায়রে স্বার্থপর, লোভী, বিবেক বর্জিত, দ্বিমূখী চরিত্র!
পর্দার অন্তরালে থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করতে ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় যে সর্বদাই সচেষ্ট তার প্রমাণ এর আগেও আমরা জেনেছি। এমনকি নেপালের কাঠমাণ্ডুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী সেমিনার আয়োজন করেছিলেন এই ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। (পার্বত্যনিউজ ডট কম, ৩১ মার্চ ২০১৮)।
প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরিত চিঠিতে চাকমা সার্কেল চীফ লিখেছেন যে, চাকমা সার্কেলের পাহাড়ী সহ দেশের স্বল্প সংখ্যার জাতিসত্ত্বাদের জন্য সরকারী চাকরীতে তিনি সংরক্ষিত আসন বহাল চান। যেই দেবাশীষ রায় ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির দাবিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন সেই তিনিই ‘আদিবাসী’ আখ্যার পরিবর্তে ‘চাকমা সার্কেলের পাহাড়ীসহ দেশের স্বল্প সংখ্যার জাতিসত্ত্বা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের বসবাস থাকলেও সর্বক্ষেত্রেই চাকমা সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গই নেতৃত্বের শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। শিক্ষা এবং চাকুরীর ক্ষেত্রে চাকমারা অন্যান্য উপজাতিদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। ২০১১ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে সামগ্রিক শিক্ষার হার ৫৯.৬২% যেখানে চাকমাদের শিক্ষার হার ৭৩%। অথচ, পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য সকল উপজাতিদের শিক্ষার হার ৪৪.৬২%।
শান্তিচুক্তির পর গড়ে ওঠা সংস্থাসমুহ যেমন- আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ ইত্যাদিতে চাকমা সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ অধিকাংশ সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। বাংলাদেশ সরকার ৫% উপজাতি কোটা বরাদ্দ করলেও এর অধিকাংশই চাকমারা ভোগ করছে। একই সাথে এনজিও ও বিদেশী সংস্থাসমূহের শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে চাকমা সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনাপ্রবাহ এবং চাকমা সম্প্রদায়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, চাকমা নেতৃত্বের মধ্যে একপ্রকার স্বার্থপরতা, ক্ষমতার প্রতি লোভ এবং যেকোন প্রকারে শীর্ষ স্থান দখলের প্রবণতা কাজ করেছে।
চাকমা নেতৃত্বের এই স্বার্থপরতা এবং ক্ষমতার লোভের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায় অনগ্রসরতার বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছে না। সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে চাকমারা নিজেদের স্বার্থের কারণে কুক্ষিগত করে রেখেছে। চাকমা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে সবসময় ‘নিজ’ এবং গোষ্ঠীস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে দেখা গিয়েছে। চাকমাদের এই একক আধিপত্য ও স্বার্থপরতাকে অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায় মেনে নিতে পারে না কিন্তু চাকমাদের সশস্ত্র সংগঠন আর বিভিন্ন দেশী-বিদেশী মহলে যোগাযোগ থাকার কারণে তারা ভয়ে কিছু বলতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরিত চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের চিঠির হেডিং (চাকমা সার্কেলের পাহাড়ী সহ দেশের স্বল্প সংখ্যার জাতিসত্ত্বাদের জন্য সরকারী চাকরীতে সংরক্ষিত আসন বহাল ও কার্যকরণ) দেখে আবারও সেটা প্রমাণিত হল যে চাকমা নেতৃত্ব আসলেই কতটা স্বার্থপর। দেশের সকল উপজাতিদের মুখপাত্র হিসেবে কোটার দাবী যদি করতেই হয় তাহলে “চাকমা সার্কেলের পাহাড়ী সহ” কথাটি তিনি কেন আলাদা করে উল্লেখ করলেন তা ভেবে দেখার ভার প্রিয় পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম।
গতকাল মন্ত্রীসভার বৈঠকে সরকারী চাকুরীতে ১ম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে সকল ধরণের কোটা বাতিল করা হয়েছে। যদিও পাহাড়ে এর প্রভাব সামান্যই পড়বে। কারণ অন্যান্য বিভিন্ন আইনে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকুরি ক্ষেত্রে উপজাতিদের প্রিভিলেজ কোটা রয়েছে এবং তারা সেই সুবিধা ভোগ করছে।
এদিকে গতকাল থেকে শাহাবাগে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংরক্ষণের দাবীতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। তাই পরিশেষে পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে সরকারের কাছে আবেদন এই যে, শিক্ষা ও চাকরীর ক্ষেত্রে উপজাতীয় কোটা সুবিধা যদি পুণরায় বহাল করা হয়, তাহলে সংবিধান অনুযায়ী সেই কোটার নাম অনগ্রসর কোটা হওয়া উচিত। একজন নিরোপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে কমিশন গঠন করে রাষ্ট্রের কোথায় কোথায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠী আছে তা সনাক্ত করে তাদেরকে এই কোটা সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা উচিত। কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে নয়।