২৪ ঘণ্টায় এক রোগীর জন্ডিস টেস্টের রিপোর্ট চার ল্যাবে চার রকম


পেকুয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের পেকুয়ায় সরকারী নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সুষ্ঠু তদারকির অভাবে দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়ায় এ অপকর্ম চলে আসলেও দৃশ্যত কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন দিয়ে রোগীদের আকৃষ্ট করছে হাসপাতালগুলো। তাছাড়া নিজস্ব দালাল দিয়েও রোগী টানতে ব্যস্ত তারা। কিন্তু সেবার মান বরাবরই হতাশাজনক।

মো. আনোয়ার ইসলাম নামের এক রোগী বলেন, রোগাক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমি জন্ডিস পরীক্ষার জন্য পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালে যাই। সেখানে থেকে দেওয়া পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে হতবাক হই আমি। তার রিপোর্ট এসজিপিটি (ইউ/এল) ৪৬০, বিলুরুবিন ০.৮(এমজি/ডিএল)। এ রিপোর্ট দেখে আমি দ্রুত ছুটে যাই ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারও যথারীতি অবাক। তিনি পরামর্শ দিলেন অন্য ল্যাবে আরেকটি পরীক্ষা করানোর। গেলাম পেকুয়া লাইফ কেয়ার হসপিটালে। একই পরীক্ষায় তারা রিপোর্ট দিলেন ২০৩.৩। এই রিপোর্ট নিয়ে গেলাম পেকুয়া জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু বরাবরই তাদের রিপোর্ট সঠিক দাবী করেন তারা।

তিনি আরো বলেন, ভুল-সঠিকের দ্বন্দ্বে পড়ে যাই আমি। দুই হাসপাতালের সপক্ষে তুলে ধরা যুক্তি শুনে আমি দিশেহারা। তখন সিদ্ধান্ত নিই, অন্য ল্যাবগুলোতেও পরীক্ষা করিয়ে দেখি। গেলাম পেকুয়া মেডিকেল সেন্টারে। তারা রিপোর্ট দিলো ২৭১.২১। এরপরে গেলাম নুর হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। তারা পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিলো ৪২। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চারটি ল্যাবের রিপোর্ট চার রকম। যা দেখে আমার চিকিৎসক খুবই হতবাক হলেন। তিনি আমার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে পূর্বের ওষুধ চালিয়ে যেতে বলেন। পেকুয়ার প্রাইভেট হসপিটালগুলো আমার রোগের পরিমাণ নির্ণয় তো করতেই পারেনি। পাশাপাশি কেটে নিয়েছে আমার পকেট। আমার মত আরো অসংখ্য রোগী তাদের হাতে নিয়মিত হয়রানী হচ্ছে।

এব্যাপার পেকুয়া উপজেলা হাসপাতালের টিএইচএ (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, লিভারের চারটি এনজাইম। রোগী যদি ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ সেবন না করে থাকেন তাহলে, এসজিপিটি এত বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক নয়। কারণ এসজিপিটি বাড়লে বিলিরুরিনও বাড়বে। তাই রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে পেকুয়া জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দেয়া রিপোর্টটি সম্পূর্ণ ভুল। এছাড়াও ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রে লিখা রোগীর শারীরিক অবস্থার বর্ণনা পড়ে অপর দুটি (পেকুয়া লাইফ কেয়ার ও পেকুয়া মেডিকেল সেন্টার) ল্যাবের রিপোর্টও ভুল বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল করিম বলেন, ল্যাব টেকনোলজিস্টদের রিপোর্টে সাক্ষর করার নিয়ম নেই। আমি এ ব্যাপারে আইনগতভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন