অব্যাহত বৈরি আবহাওয়ায় সাগরে যেতে না পারায় জেলেদের কষ্টে দিনাতিপাত

Coxs Fishing picture

আবদুল্লাহ নয়ন, কক্সবাজার:
ঘুর্ণিঝড় ‘মহাসেন’র পর সাগরে অব্যাহত ‘সতর্ক সংকেত’ ও ‘বৈরি আবহাওয়া’র কারণে মাছ ধরতে যেতে পারছে না জেলেরা। ফলে মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকায় এর সাথে জড়িত হাজারো লোক বেকার হয়ে পড়েছে। জেলে পল্লীতে বিরাজ করছে চরম হতাশা। এদিকে বৈরি আবহাওয়ার সময় জেলে ও শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বেশ কিছু দিন থেকে সাগরে প্রতিকুল আবহাওয়া বিরাজ করছে। তার উপর গত ৯ মে থেকে ঘুর্ণিঝড় ‘মহাসেন’র কারণে সাগরে ফিশিং বন্ধ করে দেয় ট্রলার গুলো। মহাসেন’র আঘাত থেকে বাঁচতে দলে দলে ট্রলার গুলো উপকূলে ফিরে আসে। তারা আশ্রয় নেন বাঁকখালীর নদীর বুকে। এরপর থেকে ‘বৈরি আবহাওয়া ও অব্যাহত সতর্ক সংকেত’র কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। ফলে এখনো সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছে না ট্রলার গুলো।

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতি’র সভাপতি জয়নাল আবেদিন জানিয়েছেন, ট্রলার গুলো মাছ ধরতে সাগরে যেতে না পারায় মৎস্য ব্যবসায় সাথে জড়িত ছোট বড় সকল প্রকার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। চাহিদা থাকার পরও মাছ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে করে জেলায় দেখা দিয়েছে মাছের আকাল। আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

আমির হোসেন (৩৮) নামে এক জেলে জানিয়েছেন, বর্তমানে মাঝি-মাল্লাদের ঘরে চলছে অভাব-অনটন। খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। ট্রলারের মালিকরাও অগ্রিম টাকা দিতে অনিহা প্রকাশ করছে।
ফিশারী ঘাটস্থ আরিফ উল্লাহ মাঝি (৫০) জানিয়েছেন, সাগরে যেতে পারছে না ট্রলার গুলো। তাই দক্ষিন চট্রগ্রামের সব চেয়ে বড় মৎস্য অবতরন কেন্দ্রটি এখন অনেকটা মৎস্য শুন্য। যে কেন্দ্রটি জেলে ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ীদের পদভারে মুখরিত থাকত সে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি অনেকটা ফাঁকা।

কক্সবাজার ফিশিং বোট মাঝি সমিতি সুত্র জানিয়েছেন, সাগর অনূকূলে না থাকায় জেলার অন্তত ৮০ ভাগ ট্রলার উপকূলে নিরাপদে রয়ে গেছে। বাকি ২০ ভাগ ট্রলার উপকূলের কাছাকাছি ফিশিং করছে। মাছ ধরতে যেতে না পারায় মৎস্য ব্যবসায় পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট অন্তত ৫ লাখ মানুষ দুশ্চিন্তা ও হতাশায় ভূগছেন। আবার অনেকে আগামী মওসুমের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কক্সবাজার সদর উপজেলা লোড-আনলোড মৎস্য শ্রমিক ইউনিয়ন’র সভাপতি মোহাম্মদ আসাদুল হক জানিয়েছেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ না থাকায় লোড-আনলোডকারী শ্রমিকরাও বেকার হয়ে পড়েছে। দুই শতাধিক শ্রমিক পুরোটা দিনই অলসভাবে পার করছে। এছাড়া সম্প্রতি অগ্নিকান্ডে তাদের সর্বস্ব পুড়ে যাওয়ায় দূর্ভোগ আরো চরমে পৌঁছেছে।

তিনি সরকারের প্রতি দাবী জানিয়ে বলেন, বৈরি আবহাওয়ায় যখন মৎস্য কাজে সংশ্লিষ্টরা বেকার সময় কাটান। তখন সরকার যদি তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেন; তাহলে পুরো একটি জনগোষ্ঠী বেকারের অভিশাপ মুক্ত হবে। দু-পয়সা আয় করে দু’বেলা অন্ন জোগাড় করতে সক্ষম হবেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন