সূত্র: বাংলাট্রিবিউন

আরও দুই পার্বত্য স্থলবন্দর হবে কবে?

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দেশের তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি স্থলবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এগুলো হলো—তেগামুখ, ঘুমধুম ও রামগড় স্থলবন্দর। এরমধ্যে রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ কিছুটা এগুলেও বাকি দু’টি নির্মাণে সংশয় দেখা দিয়েছে। কবে নাগাদ এ সংশয় কাটবে, তা এখনও পরিষ্কার হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই তিনটি স্থলবন্দর পুরোপুরি চালু করা গেলে প্রসাধন সামগ্রী, সিরামিক ও মেলামাইন পণ্য, ইট, বালু সিমেন্ট, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, শুটকি মাছ, তামাকজাত পণ্য, মানুষের মাথার চুল, প্লাস্টিকের পানির ট্যাংক, আলু, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী, তৈরি পোশাক, ডিম, টিউবঅয়েল, প্লাস্টিক সামগ্রী, পুরনো কাপড়, চিপস্ ভারত ও মিয়ানমারে রফতানি করা যাবে। এদিকে ভারত ও মিয়ানমারের অংশ দিয়ে শাড়ি, ওষুধ, গরম মসলা, কাঠ, চুনাপাথর, বাঁশ, মাছ, আচার, তেঁতুল, হলুদ, স্যান্ডেল, মাটির সানকি, গাছের ছাল ও সুপারি রফতিানি করা সম্ভব হবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার তেগামুখ ও ভারতের মিজোরাম প্রদেশে একটি, বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ও মিয়ানমারের তামব্রুতে একটি এবং খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলা ও ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমে একটি স্থল বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে সরকার ২০১৩ সালের ৩০ জুন তেগামুখ ও ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর রামগড় স্থলবন্দরকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেও বান্দরবানের ঘুমধুম স্থলবন্দরকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্থল বন্দর হিসেবে ঘোষণা দেয়নি।

সূত্র জানায়, রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। বর্তমানে রামগড়ের সঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলা সদর এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। তবে রামগড় থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থিত বারোইয়ারহাট পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থানে কয়েকটি সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। এছাড়া রামগড় থেকে সাব্রুমের মধ্যবর্তী স্থানে সীমানা লাইনে খরস্রোত ফেনী নদী রয়েছে। এই নদীর ওপর রামগড় থেকে সাব্রুম যাওয়ার জন্য সংযোগকারী ব্রিজ ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নেই। এছাড়া বর্তমানে রামগড় থেকে সাব্রুম যাওয়ার জন্য কোনও বিকল্প স্থল যোগাযোগ নেই। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই স্থলবন্দরটি চালু করার কথা ছিল।

তবে অন্যদিকে তেগামুখ ও ঘুমধুম স্থল বন্দর নির্মাণে আইন জটিলতায় জমি নির্বাচন করা হলেও অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। রাঙামাটির বরকলের তেগামুখ স্থলবন্দরের জন্য সম্ভাব্য স্থানটি পাহাড়ি ও দুর্গম। ভারতীয় অংশের সঙ্গে তেগামুখ স্থল বন্দরের সঙ্গে সড়কপথে কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলা থেকে তেগামুখের দূরত্ব ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রাঙামাটি জেলাসদর হয়ে বরকল উপজেলার তেগামুখ পর্যন্ত যোগাযোগের জন্য ১২৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা প্রয়োজন হবে। এর মধ্যবর্তীস্থানে একটি নদীর ওপর ব্রিজও নির্মাণ করতে হবে। এই বন্দরের নির্ধারিত স্থানের ৫০ কিলোমিটার সীমানার মধ্যে কোনও থানা বা পুলিশ ফাঁড়ি নেই।

এদিকে বান্দরবানের ঘুমধুম এলাকা থেকে মিয়ানমারের তুমব্রুর দূরত্ব সাড়ে তিন কিলোমিটার। আবার ঘুমধুম থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। বর্ডার লাইনে নাফ নদীর একটি শাখা রয়েছে। যার স্থানীয় নাম দেবীন্না খাল। খালটির প্রস্থ ১৫ থেকে ২০ ফুট হলেও গভীরতা ৮ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত। বর্তমানে ঘুমধুম থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি পাকা রাস্তা রয়েছে। রাস্তাটি দেবীন্না খালের স্থাপিত লাল ব্রিজের মাধ্যমে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সংযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাস্তাটি চওড়া করার কাজ চলছে। এ জন্য ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৈ শা হ্লা মারমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাসহ নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান স্থলবন্দর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সামান্য কিছু জটিলতা রয়েছে, তা অচিরেই কেটে যাবে। তবে এই বন্দরের জন্য কাস্টমসের অফিস কক্সবাজারের বালুখালীতে করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যেখানে বর্তমানে সহকারী কমিশনার, কাস্টমস অফিস ছিল। এখানেই ছিল গবাদি পশুর করিডোর, যা বর্তমানে অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে।’ সরকারের এমন সিদ্ধান্তে আমাদের আপত্তি রয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এই স্থলবন্দরের জন্য কাস্টমস অফিস বান্দরবান জেলার ভেতরে হতে হবে।’ এটি এলাকাবাসীর দাবি বলেও জানান কৈ শা হ্লা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই তিনটি স্থল বন্দরের মধ্যে রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন দিলেও বাকি দু’টি স্থলবন্দর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেনি কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করছে বলে বংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘কিছু দিনের মধ্যেই এই বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এ জন্য বিশ্বব্যাংক ১১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘স্থলবন্দর তিনটি নির্মিত হলে তিন পার্বত্য জেলার অর্থনীতি বদলে যাবে। মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এ লক্ষ্য নিয়েই সরকার তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি স্থলবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। একটির কাজ চলছে। বাকি দু’টি স্থলবন্দর নির্মাণে যেখানে যেটুকু সমস্যা রয়েছে, তা নিরসন করে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে বলেও জানান নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন