ইউএনও’র সাথে সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের মতানৈক্যে গুইমারার সোলার প্যানেল প্রকল্পের ৬২ লাখ টাকা ফেরৎ


রামগড় প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ি জেলার নবগঠিত গুইমারা উপজেলার নির্বাহি অফিসারের সাথে সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের চুক্তি সম্পাদনে মতানৈক্যের কারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সোলার প্যানেল প্রকল্পের বরাদ্দকৃত প্রায় ৬২ লক্ষ টাকা ফেরৎ গেছে। এতে উপজেলার সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, গুইমারা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টিআর এবং কাবিটা প্রকল্পে সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য ৬১ লক্ষ ৪০ হাজার ৫৪৮ টাকা বরাদ্দ  হয়। তন্মধ্যে  ২০১৬ সালের মার্চে  প্রথম ধাপে টিআর(সাধারণ), টিআর(এমপি), কাবিটা(সাধারণ) ও কাবিটা(এমপি) মোট ৩১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৮৫০ টাকা এবং মে মাসে দ্বিতীয় ধাপে ২৯ লক্ষ ৯৪ হাজার ৬৯৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত দরিদ্র বাসিন্দাদের বাসা বাড়িতে বিনামূল্যে সোলার প্যানেল স্থাপনের কথা।

ইডকল পি ও হিসেবে সোলার প্যানেল সরবরাহ ও স্থাপন কাজের জন্য নিযুক্ত ব্রাইট গ্রীণ এনার্জি ফাউন্ডেশন(বিজিইএফ) নামে একটি প্রতিষ্ঠানরে সাথে গুইমারা উপজেলা নির্বাহি অফিসারের চুক্তি সম্পাদন নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়।

জানাযায়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ১১টি শর্ত ছাড়াও উপজেলা নির্বাহি অফিসার আরও ৭টি শর্ত সংযোজন করায় দুপক্ষের মধ্যে এ মতানৈক্য দেখা দেয়। এ মতানৈক্যের কারণে চুক্তি সম্পাদিত না হওয়ায় অর্থ বছর শেষ হওয়ার পরও  উপজেলায় সোলার প্যানেল স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে এ জটিলতার নিরসন না হলে চলতি অর্থ বছরেও সোলার প্যানেল স্থাপনের এ প্রকল্পটির  বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।

ব্রাইট গ্রীণ এনার্জি ফাউন্ডেশনের (বিজিইএফ) ব্যবস্থাপক মো. নাঈম দীন বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের শর্তাবলীসহ সম্পূর্ণ নীতিমালা অনুযায়ী চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য উপজেলা নির্বাহি অফিসারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তিনি তাঁর মনগড়া ৭টি শর্ত সংযোজন ছাড়া চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর দিতে অসন্মতি জানান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা নির্বাহি অফিসার তাঁদের কাছে অনৈতিক আবদার করেন। তাঁর এ আবদার রক্ষা না করায় তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর দেননি। নাঈম দীন আরও জানান, এ ব্যাপারে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।

অপরদিকে, গুইমারার ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিএম মশিউর রহমান মুঠো ফোনে বলেন, মানসন্মত সামগ্রী সরবরাহ, কাজের গুণগত মান রক্ষা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের নিশ্চয়তার জন্যই উপজেলা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭টি শর্ত সংযুক্ত করতে বলা হয়।কিন্তু ব্রাইট গ্রীণ এনার্জি ফাউন্ডেশন অসৎ উদ্দেশ্যের কারণে এসব যুক্তি সংগত শর্তারোপে রাজী নয়। অথচ অন্য একটি প্রতিষ্ঠান এ শর্তগুলো মেনে মাটিরাঙ্গা, পানছড়ি ও মানিকছড়ি উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

‘অনৈতিক আবদার’ করার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ঐ প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের কোন কর্মকর্তা কখনও তাঁর কাছে আসেনি।

এদিকে, নব গঠিত এ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প সোলার প্যানেল স্থাপনের কাজ না হওয়ায় খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ক্ষোভ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। গত ২৩ জুন স্বাক্ষরিত ঐ চিঠিতে চুক্তিপত্র সম্পাদনে জটিলতার কারণে ব্রাইট গ্রীণ এনার্জি ফাউন্ডেশন কাজ না করায় অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়।

গুইমারা উপজেলা চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু মারমা  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুপক্ষের মতানৈক্যের কারণে সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা ফেরৎ যাবে এটা মেনে নেয়া হবে না।

গুইমারা সদর ইউপির চেয়ারম্যান মেমং মারমা বলেন, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক সভায় এ ব্যাপারে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। তিনি বলেন, খাগড়াছড়ির অন্য সব উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। গুইমারার মানুষ সরকারের এ বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের এর দায়দায়িত্ব নিতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন