ইমামকে মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় তোলপাড়


কক্সবাজার প্রতিনিধি:

কক্সবাজার সদরে মসজিদে মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার ঘটনায় ইমামকে মারধরের ছবি ও ভিডিও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় জনতা ও আলেম সমাজ।

দোষী চেয়ারম্যান ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার না করলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা।

গত ৭ এপ্রিল ঘটনা সংঘঠিত হলেও ৯ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে আলোচনায় আসে উক্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। মুহুর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এই নির্মম ঘটনা। বর্তমানে ইমাম হাফেজ আবদুর রশিদ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনার বিভৎসতা তিনি কোনভাবেই ভুলতে পারছেননা। বারবার ঘটনার বর্ননা তুলে আলেম ও স্বজনদের কাছে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন।

উল্লেখ্য-মসজিদে মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ায় কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদে মসজিদের ইমাম’র উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন চালায় একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক ও তার দুই সহযোগী নুরুচ্ছবি এবং জাফর আলম। গত ৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ টেকপাড়া গ্রামে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত হাফেজ মাওলানা আবদুর রশিদ একই ইউনিয়নের টেকপাড়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ’র ইসলামাবাদ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ইসলামাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক ও চিহ্নিত মাদক কারবারী নুরুচ্ছবি এবং জাফর আলম ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান।

এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা-ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। হামলার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে মামলার প্রস্তুতি ও বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেন হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইয়াছিন হাবিব।

এঘটনায় ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা। সংবাদ সম্মেলনে আহত হাফেজ মাওলানা আবদুর রশিদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন-মাদক ব্যবসা ও সেবনের কুফল সম্পর্কে নামাজে আলেমদের সচেতনতামুলক বক্তব্য দিতে অনুরোধ জানান প্রশাসন। প্রশাসনের নির্দেশনা মতে মাদক ব্যবসা ও সেবনের বিরুদ্ধে আলোচনা করেন ইমাম মাওলানা আবদুর রশিদ। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা আমার উপর নির্যাতন চালায়। এলাকার মুসল্লি ও সাধারণ মানুষের সামনে একজন আলেমকে চরম অপমানিত করে। তাতে পুরো এলাকায় ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠে।

তিনি আরো বলেন, ইতিপুর্বে আমাকে মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য না দিতে বিভিন্ন সময় হুমকিও দেয়। অবশেষে ৭ এপ্রিল রাতে আমাকে নিজ বাড়ি থেকে ডেকে প্রথমে নুরুচ্ছবির বাড়িতে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেধে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক এর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানসহ ভোর ৪টা পর্যন্ত নির্যাতন চালায়। হামলার সময় ইমামের ৬ সন্তান ও স্ত্রী গেলেও তাদের সামনে আরো মারতে থাকে। এ হামলা দেখে ইমামের বড় মেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

ভিকটিম হাফেজ মাওলানা আবদুর রশিদ আরো বলেন-হামলার দিন রাত সাড়ে ১০টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত হাত-পা বেধে হামলা চালিয়ে তা ভিডিও ধারন করে চেয়ারম্যান পুত্র ইমরুল কায়েস তার ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরে চেয়ারম্যান আমার থেকে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় ও এ কথা কাউকে না বলতে হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়।

হেফাজত নেতা মাওলানা ইয়াছিন হাবিব বলেন-নির্যাতনকারী ইসলামাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক ও তার লালিত সন্ত্রাসী নুরুচ্ছবি, জাফর আলমকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। অন্যথায় বৃহত্তর র্সবস্তরের জনগণ ও আলেম-উলামাকে নিয়ে আন্দোলন করা হবে।

এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন-অবশ্যই এই বিতর্কিত চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক ও তার লালিত সন্ত্রাসী নুরুচ্ছবি এবং জাফর আলমের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় কক্সবাজারে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন