ইরাবতীর ভুয়া খবরে ছড়াল রোহিঙ্গাবিদ্বেষ

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী রাখাইন বৌদ্ধদের হামলা-নির্যাতনের মুখে যখন লাখো রোহিঙ্গা মুসলিম রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, ঠিক তখনই ভুয়া খবর প্রকাশ করে রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাবকে আরও ছড়িয়ে দিল মিয়ানমারের পত্রিকা ইরাবতী। গত সোমবার ওই খবর প্রকাশের পর যখন এটি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়, তখন পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষ তার অনলাইন থেকে এক দিন পার হওয়ার কিছু আগে সেটি সরিয়ে ফেলে।

পত্রিকাটি সাম্প্রতিক বলে সোমবার যে খবর প্রকাশ করে, প্রকৃতপক্ষে সেটি ছিল এক বছর আগের প্রকাশিত একটি খবর। মিয়ানমারের স্থানীয় ভাষায় প্রকাশিত ওই খবরের শিরোনাম ছিল, ‘উইপনস প্লানডারড ফ্রম বাংলাদেশি রিফিউজি ক্যাম্প গার্ড’ (বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তারক্ষীদের অস্ত্র লুট)। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তা ফাঁড়িতে হামলা নিয়ে এক বছর আগে এএফপি ও ডেইলি মেইলের প্রকাশ করা একটি খবর পুনর্বিন্যাস করে সোমবার ছাপায় ইরাবতী

বছরখানেক আগের ওই ঘটনায় হামলাকারীরা বাংলাদেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্যকে হত্যা করে ১১টি রাইফেল ও ৫৭০টি গুলি লুট করে। ওই সময় পুলিশ এএফপিকে বলেছিল, ওই হামলায় রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জড়িত থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা।

এ ঘটনাকে সাম্প্রতিক খবরে রূপ দিয়ে ইরাবতী বর্তমান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিয়ানমার সরকারের ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে প্রতিবেদনে তথ্য উপস্থাপন করে। প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে নানা সন্দেহ ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে ধরা হয়। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান পরিচালনা ও তাদের দেশছাড়া করার পেছনে এ অভিযোগকেই অজুহাত হিসেবে তুলে ধরে।

মিয়ানমারের গণমাধ্যমের খবর চ্যালেঞ্জ করার মতো ঘটনা বিরল হলেও এ খবরটি প্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুতর সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এর কারণটি ছিল এই, যে ঘটনাকে বর্তমান বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে তা ছিল এক বছর আগের। ওই ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় ছিল ২০১৬ সালের ১৩ মে। কিন্তু সোমবার এ ঘটনাকে ১৩ অক্টোবরের বলে উল্লেখ করা হয়।

খবরটি ভুয়া বলে প্রথম চিহ্নিত করেন রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী নে স্যান লিউইন। তিনি এ বিষয়ে তাঁর টুইটারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর এক ঘণ্টা না পেরোতে ইরাবতী তার ওয়েবসাইট থেকে খবরটি প্রত্যাহার করে নেয়।

এ বিষয়ে ইরাবতীর মিয়ানমার-ভাষা সংস্করণের সম্পাদক ইয়ে নি বলেন, ‘এটা একটা ভুল ছিল। আঞ্চলিক ডেস্ক থেকে অনুবাদ করে খবরটি তৈরি করার সময় ভাবা হয়েছিল ঘটনাটি ২০১৭ সালের অক্টোবরের। যখন আমরা বুঝেছি ঘটনাটি পুরোনো, তখন আমরা তা সরিয়ে ফেলেছি।’

এদিকে কোকোনাটস-এর খবরে বলা হয়, এ খবর প্রকাশ সত্যিকারের ভুলের কারণে হোক বা না হোক, তা ইরাবতীর বিপুলসংখ্যক পাঠকের মধ্যে রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব উসকে দিয়েছে। খবরটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার আগে মান্দালয়ভিত্তিক একটি ফেসবুক পেজ থেকে তা ১০ লাখের বেশি বার শেয়ার হয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন