Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

‘ইয়ান আরেক দিল্ল্যা বাংলাদেশ’

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

এপারে বাংলাদেশ, ওপারে মিয়ানমার। মাঝখানে বয়ে চলা নাফ নদের মোহনা। এই নদ পেরিয়ে স্রোতের মতো বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। সীমান্ত পাড়ি দিতে তাদের সময় লেগেছে তিন থেকে সাত দিন। এই দীর্ঘ হাঁটা পথে তাদের ভাগ্যে জোটেনি এক মুঠো খাবার। জীবন বাঁচাতে খেতে হয়েছে লতা-পাতাও। নৌকা থেকে নেমে হাজারো ক্ষুধার্ত মানুষ সরু রাস্তা বেয়ে হেঁটে আসছে। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল। তবুও সব হারানো ঠিকানাহীন মানুষের লাইন শেষ হচ্ছে না। ক্লান্ত-শ্রান্ত মানুষদের চোখে-মুখে ভয় আর আতঙ্ক। কেউ পেছনে ফিরে তাকাতে চায় না; শুধুই সামনে হেঁটে চলা।

গুলি, মাইন বোমা আর আগুনের কুণ্ডলী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সহমর্মিতার হাজারো হাত তাদের সামনে। একেকটি হাত যখন তাদের স্পর্শ করছে, তারা যেন অন্য রকম এক অনুভূতি খুঁজে পাচ্ছে। নিজ দেশে ভিটেমাটি, স্বজন হারিয়ে আরেক দেশে এমন সহমর্মিতা তারা হয়তো আশাই করেনি। তাই তো মাত্র দুই প্যাকেট রুটি পেয়ে ভুবনজয়ী হাসি হনুফা বেগমের মুখে।

স্বামী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে হনুফা এসেছেন মিয়ানমারের মংডু জেলার চাইন্দা গ্রাম থেকে। চার দিন হেঁটে তিনি শাহপরীর দ্বীপ হয়ে টেকনাফে এসেছেন। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে সেনারা। সঙ্গে কিছুই আনতে পারেননি। এক কাপড়েই দেশত্যাগ করেছেন। ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে চার দিনের অভুক্ত হনুফারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।

নৌকা থেকে নেমে এপারে আসতেই একজন তাদের প্রত্যেকের হাতে একটি জুস ও এক প্যাকেট বিস্কুট তুলে দেন। আরেকটু সামনে আসতেই আরেকজন তার হাতে তুলে দেন ঘর বানানোর পলিথিন। আরেকটু আগাতেই আরেক বাংলাদেশি তার হাতে গুঁজে দেন ৫০০ টাকা। আরও ১শ’ গজ সামনে আসতে আরেকজন তাদের হাতে তুলে দেন এক প্যাকেট বানরুটি। এর পর আর অনুভূতি ধরে রাখতে পারেননি হনুফা। প্রাণ খুলে হাসছেন। এমন মায়াবী-মিষ্টি হাসি পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে আগে দেখেনি কেউ।

আনন্দ অশ্রু মুছতে মুছতে হনুফা বলতে থাকেন, কিছুক্ষণ আগে প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে আসতে পেরেছি। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে, দুর্গম পথ পেরোতে শিশুদের নিয়ে যে কষ্ট পেয়েছি, তা বলে বোঝানো যাবে না। আমরা খুব ক্ষুধার্ত ছিলাম। গাছের পাতা ছাড়া খাওয়ার আর কিছু ছিল না। সন্তানেরা খেতে চাইছিল, কিন্তু আমরা কোনো খাবার সঙ্গে নিতে পারিনি। নিজ ভূমি থেকে আমাদের তাড়িয়ে দিল, অথচ আরেক দেশ আমাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাচ্ছে।

নিজ দেশের ভাষায় তিনি বলেন, ‘ইয়ান আরেক দিল্ল্যা বাংলাদেশ, তোয়ারা খুব ভালো, খুব রহমতঅলা। টিয়া দর, হর দর, হাবার দর, ইয়ানলইল্ল্যা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া গইজুম দেশের দারাইসিং, মইষল্ল্যাই দোয়া গইজুম।’ বাংলা ভাষায় এর অর্থ দাঁড়ায়- ‘অন্য রকম বাংলাদেশ দেখছি। আপনেরা খুব ভালো, খুব দয়ালু। পথে মানুষ খাবার দিচ্ছে, টাকা দিচ্ছে, কাপড় দিচ্ছে। এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি এবং এ দেশের সরকার ও মানুষের জন্য দোয়া করছি।’ খুব দ্রুত এটুকু বলেই একটু সামনে হেঁটে হনুফা দুই শিশু ও স্বামীকে নিয়ে রাস্তার পাশে বসে পড়েন। এর পর সন্তানদের মুখে তুলে দেন বানরুটি আর জুস। স্বামী-স্ত্রী দু’জন মিলেও কিছুটা ক্ষুধা নিবারণ করেন।

হনুফার মতো এমন লাখ লাখ রোহিঙ্গার এখন বড় ভরসা স্থানীয় এবং বিভিম্ন জেলা-উপজেলা থেকে এগিয়ে আসা মানুষ। মানবতাবাদী এসব মানুষ সাধ্যমতো সহযোগিতা দিচ্ছে। কেউ খিচুড়ি-ভাত রাম্না করে, আবার কেউ কাপড়-চোপড়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন চাল-ডাল, তেল-নুন, পেঁয়াজ, সবজিসহ বিভিম্ন খাদ্যপণ্য বিতরণ করছে। বিতরণ করা হচ্ছে শুকনা খাবারও।

শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় ত্রাণ বিতরণে সুশৃঙ্খল পরিবেশ দেখা গেলেও টেকনাফ থেকে উখিয়া সড়কে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা। কোনো গাড়ি এলেই একসঙ্গে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সাহায্য নিতে।
ঢাকা থেকে ত্রাণ দিতে যাওয়া নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের করুণ অবস্থা দেখে অনেকেই এগিয়ে আসছেন। কিন্তু এত লোককে কে কতদিন খাবার দেবে? বড় ধরনের ত্রাণ সহায়তা না এলে এখানে দেখা দিতে পারে আরেক মানবিক বিপর্যয়।

সূত্র: সমকাল

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন