কক্সবাজারের এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আকুতি
আবদুল্লাহ নয়ন, কক্সবাজার:
কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার বাইরে এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মীনি তার মাথা গুজার ঠাঁই ঠিকিয়ে রাখতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। বিজিবি ১৭ ব্যাটালিয়নের সীমানা পরিবর্তন করতে গিয়ে তার বসতভিটার উপর চাপ আসছে বলে অভিযোগ করে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন।
আবেদনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মীনি জানান, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন হাবিলদার রহিম বক্স। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘ইস্ট পাকিস্তান এর এইচকিউথ্রি উইফ ইস্ট পাকিস্তান রিলিফ্স’ রেজিম্যান্ট এর মুক্তিযুদ্ধের ০৫ নং সেক্টরের সদস্য হিসেবে ই/পি/আর হাবিলদার হিসেবে ওই রেজিমেন্টে সিলেটে কর্মরত ছিলেন। যার সদস্য নং ছিল ৪৬৪১ রাংক। শহীদ হওয়ার পর সিলেট সুনামগঞ্জ সদরের ১নং রঙ্গাচর এলাকায় তাকে অন্য শহীদের সাথে কবরস্থ করা হয়। ১নং রঙ্গারচর এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদগণের ৪৮ জনের সমাধির মধ্যে তার সমাধির ক্রমিক নং-০৩।
আবেদনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মীনি শামশুন নাহার বেগম আরো উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধে তার স্বামী শহীদ হওয়ার পর একমাত্র এতিম কন্যা আনোয়ারা বেগমকে জনৈক আবু তাহের নামে এক ব্যক্তির সাথে বিবাহ দেয়া হয়। তৎকালীন বিডিআরের মহাপরিচালক দয়া পরবশ হয়ে আবু তাহেরকে বিডিআর বাহিনীর চাকরীতে নিয়োগ দেন। আবু তাহের বর্তমানে ঢাকা পিলখানা ৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নে পাঁচক হিসেবে কর্মরত।
এদিকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মীনি ও তার জামাতার বসবাসের কোন জায়গা না থাকায় বিগত ১৯৯৬ সালের আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে কক্সবাজার সদর উপজেলা ঝিলংজা (বর্তমান বিজিবি ক্যাম্পের পাশে) এলাকায় এক একর জমি বন্দোবস্তী পাবার জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসক কক্সবাজারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সেক্টর বরাবরে আবেদন করেন। যা এখনো মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডারের বিশেষ সুপারিশক্রমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
ওই খাস জমি বন্দোবস্ত পাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিগত ২০০০ সালের ঝিলংজা ১৬ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন তাদেরকে সরকারী পতিত খাস জমিতে বাসস্থান নির্মাণের ব্যবস্থা করে দেয়।
তিনি আরো জানান, বিগত ১৯৯২ সালের ২২ জানুয়ারী আবেদন সালের অপর একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ মোতাবেক কক্সবাজার জেলা প্রশাসক তাকে বসবাসের জন্য ঝিলংজা মৌজা বিএস ০১ নং খতিয়ানের ৭৫২৮/৬১৬৮ দাগের এক একর জমি দান করেন।
আবেদনে তিনি অভিযোগ করেন, সেই আমল থেকে অদ্যাবধি ওই জমিতে তিনি ও তার জামাতা সহ বসবাস করে আসছেন। ১৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সীমানার বাইরে তাদের জমিটি অবস্থিত। কিন্তু সম্প্রতি সীমানা পরিবর্তন করতে গিয়ে বিজিবি তাদের বসতভিটার সীমানার মধ্যে ক্যাম্পের সীমানা পুঁতে দেয়ার চেষ্টা চালায়।
এব্যাপারে তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। জেলা প্রশাসকের কাছে প্রদত্ত আবেদনে তাঁর বন্দোবস্তী প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য দাবী জানান। অন্যতায় তাঁর ও তাঁর পরিবারের সমূহক্ষতির আশংকা করছেন।