Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

কক্সবাজারে লোডশেডিংয়ে হাঁপিয়ে উঠছে জনগণ!

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মো. আমিন উল্লাহ। মোমবাতির আলো জ্বেলে গত বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত অর্থনীতি-২য় পত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তীব্র গরমের কারণে টেকনাফের হ্নীলা এলাকার এ পরীক্ষার্থীকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছিলেন তার মা নজিফা বেগম।

গর্ভধারিণী মা নজিফা বেগম বললেন, দিন-রাত ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। বলা যায়, বিদ্যুৎ থাকছে না, আসা-যাওয়ার মধ্যেই আছে! সন্ধ্যায় একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে কখনো কখনো দুই-তিন ঘণ্টা বাদে ফেরে। ছেলের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সমস্যা হচ্ছে। মা হিসেবে হাত পাখার বাতাস ছাড়া আর কী করতে পারি?

তিনি জানান, তাঁর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, গরমে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া উখিয়া গ্রীডে সমস্যা ও গরম বেশি হওয়ায় সবাই এসি, ফ্যান চালু রাখায় বিদ্যুতের ব্যবহারও বেশি হওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে।

তীব্র গরম আর লোডশেডিং এর কারণে এখন আমিন উল্লাহরমতোই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সমস্যায় পড়ছেন অন্যান্য পরীক্ষার্থীরাও।

এছাড়া তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী নারী-পুরুষ, শ্রমিক এবং রোগীদেরও দুর্ভোগ বেড়েছে। বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা শহরে এখন প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ গেলে দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা পর আসে।

তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে গভীর পানির পাম্প দিয়ে পানি উত্তোলন করতে না পারায় কক্সবাজার শহর ও উপজেলার  বিভিন্ন স্থানে দেখা দিচ্ছে পানির সংকট। অন্যদিকে শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের অবস্থা আরও বেশি খারাপ। সেখানে এর ভয়াবহতা আরও বেশি। দিনরাত বিদ্যুৎ থাকে মাত্র ২ থেকে ৩ ঘন্টা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা লোডশেডিংয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, মূলত যান্ত্রিক ত্রুটি ও অতিরিক্ত গরমের কারণেই বিভিন্ন এলাকায় ৫-১০ মিনিট করে একাধিকবার লোডশেডিং হচ্ছে।

কিন্তু শহরের বাসিন্দা রফিক জানান, ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুত গিয়ে এক-দুই ঘণ্টার আগে আসছে না। এ ছাড়া শহরের বাইরে টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।

কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ ও বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, তাপমাত্রা বেশি হওয়ার প্রভাব বিদ্যুৎ সরবরাহে পড়ছে। বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে যন্ত্রপাতির ওপর চাপ পড়ায় সেগুলো অতিরিক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে। এ থেকে যাতে বড় দুর্ঘটনা না ঘটে তা এড়াতে যন্ত্রপাতি ঠান্ডা রাখার জন্য বিদ্যুৎ বণ্টনের যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখা হয়। এজন্য বিভিন্ন এলাকার বিতরণ লাইনও বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

সচেতন মহলের মতে, কক্সবাজার শহর ও বিভিন্ন এলাকায় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে না যাওয়া পর্যন্ত লোডশেডিং শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।

এদিকে খবর নিয়ে জানা গেছে, লোডশেডিংয়ের হাত থেকে বাঁচতে ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলাব্যাপী বেড়ে গেছে জেনারেটর, আইপিএসের বিক্রি।

শহরের এক জেনারেটর ব্যবসায়ী মিনহাজ মেহেদী বলেন, গত এক সপ্তাহে জেনারেটর বিক্রি বেশ ভালো।

এদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং দিন দিন বাড়ছেই। সাথে সাথে প্রচন্ড গরমে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। বিশেষ করে শিশুদের জন্য মারাত্বক বিপদজনক। গরমে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। স্বর্দি, জ¦র ও ডায়রিয়া ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে। গরমে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। এছাড়া পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, গরমের কারণে বিভিন্ন হাট-বাজার, মোড়গুলোতে ভ্রাম্যমাণ তরমুজ, ডাব ও আখের রসের দোকান বসেছে। এসব দোকানে ভিড়ও বেশ। এছাড়া গ্রামগুলোতে গরমে অতিষ্ঠ ছোট শিশুরা পুকুরে নেমে দীর্ঘদিন ধরে ডুব-সাঁতারসহ গোসল করছে। অনেককেই দেখা গেলো, গরম থেকে বাঁচতে ছাতা মাথায় চলাচল করতে।

টেকনাফের হ্নীলা রংগীখালীর রিদুয়ানুল ইসলাম রিমন বলেন, একদিকে তীব্র গরম অন্যদিকে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে আমাদের অবস্থা খুবই নাজুক। বাড়িতে আইপিএস থাকলেও বিদ্যুৎ না থাকায় সেটাও বন্ধ হয়ে পড়েছে। তাই গরমে রাতেও ঘুমাতে পারি না। গতকাল রাতে প্রায় ৩টা পর্যন্ত বাইরে চেয়ার নিয়ে বসেছিলাম। ঘরের ভেতরে গরমের কারণে ঘুমাতে পারছি না। রাস্তাঘাটে যেখানেই যায় সবার মুখে একই কথা বিদ্যুৎ নাই বিদ্যুৎ নাই। মানুষ এখন বলে বিদ্যুৎ নাকি মাঝে মাঝে আসে। মোট কথা খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি।

এরকম মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, রামু, উখিয়াসহ সব জায়গা থেকে একাধিক জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা সবাই দাবি করেন, বর্তমানে লোডশেডিং এর মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাদের দাবি সরকার বলছে এক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে তাহলে সেটা যাচ্ছে কোথায়। এসময় অনেকে অভিযোগ করেন কর্তৃপক্ষ বিশেষ সুবিধা নিয়ে কিছু বিশেষ এলাকায় বেশি সরবরাহ দিচ্ছে।

জেলাবাসীর জোরালো দাবি তীব্র এই গরমের সাথে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি বন্ধ করে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রদানের আহবান জানান। অন্যথায় জেলার সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নামবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজারে লোডশেডিংয়ে হাঁপিয়ে উঠছে জনগণ!
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন