কাপ্তাই স্পিলওয়ের ১৬টি গেইট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়েছে 

fec-image

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির চাপ বাড়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই বাঁধের সবক’টি স্পিলওয়ে খুলে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাত পৌনে আটটায় ১৬টি স্পিলওয়ে ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেন কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিক নিয়মে এই সময় কাপ্তাই হ্রদে ৮৬.৪০ এমএসএল (মিনস সি লেভেল) পানি থাকার কথা থাকলেও রাত ৮টা পর্যন্ত পানি রয়েছে ১০৬.৩০ এমএসএল।

কাপ্তাই বাঁধের সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ১০৯ এমএসএল। বর্তমানে স্বাভাবিকের চেয়ে হ্রদে ১৯.৯ ফুট পানি বেশি রয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে উজান থেকে ধেয়ে আসছে পাহাড়ি ঢল। বাড়তি পানির চাপ সামলাতে ১৬টি গেইট একসাথে খুলে দেওয়া হয়।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সুত্র জানায়, ১৬টি স্পিলওয়ে দিয়ে ৯ হাজার কিউসেক পাশাপাশি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট চালু রেখে টারবাইনের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে আরো ২৪ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে সর্বোচ্চ ১৬৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ১৬টি স্পিলওয়ে ও ৪টি টারবাইনের মাধ্যমে একসাথে সেকেন্ডে ৩৩ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আরেকটি ইউনিটে বিকেলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ইউনিটটি চালু হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২১২ মেগাওয়াট হতো বলে জানান কর্তৃপক্ষ।

কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, উজানে পাহাড়ি এলাকায় কয়েক দিনের অতি বর্ষণে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দিনে হ্রদে প্রায় সাড়ে পাঁচ ফিট পানি বেড়েছে। বাঁধের উপরে বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে বিপদ সীমা অতিক্রম করতে পারে পানির স্তর। পানি বৃদ্ধির ফলে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ লেক থেকে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ১৬টি স্পিলওয়ে দিয়ে আধা ফুট হারে বাড়তি পানি ছাড়া হয় বলে কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ড. এম এম এ আব্দুজ্জাহের জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হ্রদের পানির উচ্চতা ছিলো ১০৬.৩০ ফিট এমএসএল (মিনস্ সি লেভেল)। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১৯.৯ ফুট বেশি পানি থাকায় স্পিলওয়ে খুলে দিয়ে পানির চাপ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল নামতে থাকায় কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।

তিনি বলেন, পানির স্তর বাড়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পাঁচটি ইউনিটের সবগুলো দিয়ে একযোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে মঙ্গলবার বিকেলে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। সেটার মেরামতের কাজ চলছে। দ্রুত সেটাও চালু করা হবে বলে তিনি জানান।

২৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪টি ইউনিটে গড়ে সর্বোচ্চ ২১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে গেলেও উজান থেকে আসা পানির চাপ কমানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে স্পিলওয়ে দিয়ে পানি ছাড়ার প্রয়োজন হয়েছে। অবস্থার উন্নতি না হলে পানি ছাড়ার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান ব্যবস্থাপক ড. এম এম এ আব্দুজ্জাহের ।

স্থানীয় সুত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তির্ণ পাহাড়ি এলাকায় একদিন বৃষ্টি হলে তার পানি গড়িয়ে লেকে পৌঁছুতে সময় লাগে। একদিনের বৃষ্টির পানি কয়েকদিন ধরে লেকে পড়তে থাকলে সেই হিসেবে গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টির পানি প্রভাব বাঁধ পর্যন্ত পৌঁছতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। বৃষ্টি অব্যাহত ও পানির চাপ বাড়তে থাকলে স্পিলওয়ে খুলে রাখার পরিমাণ বৃদ্ধি ও সময় দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে সুত্র জানায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন