কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে এক রোহিঙ্গা নারী গণপিটুনির শিকার

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

এক রোহিঙ্গা নারী আজ সোমবার বিকালে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে গণপিটুনির শিকার হয়েছে। সতীর্থ রোহিঙ্গারাই তাকে পিটিয়েছে।

এমনকি পুলিশের কবল থেকে ছিনিয়ে নিয়েও রোহিঙ্গারা পিটিয়েছে ওই নারীকে। তুচ্ছ এ ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে বড় আকারে রূপ দিতেও শিবির অভ্যন্তরে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সূত্রপাত ঘটে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের আইওএম মেডিক্যাল ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী স্থানে। জর্ডানের রানি রানিয়া আল আবদুল্লাহ আজ দুপুরে ওই ক্লিনিক পরিদর্শনে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে কিছু রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ ব্যানার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের দেখে রানি এগিয়ে যান।

এ প্রসঙ্গে কুতপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ক্যাম্প ইনচার্জ) সহকারি কমিশনার রেজাউল করিম আজ রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যানার হাতে দাঁড়ানো রশিদা আকতার নামের এক রোহিঙ্গা নারী তখন কি যেন বলতে চাচ্ছিলেন রানিকে উদ্দেশ্য করে। রানিও এগিয়ে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কি চান? জবাবে রশিদা বলেন, ‘আমরা খাবার চাই। এখানে আমরা খাবার পাই না। ‘ ক্যাম্প ইনচার্জ জানান, চেষ্টা চলছে ঘটনাটির প্রকৃত তথ্য জানার জন্য।

রানির অনুষ্ঠান শেষে আজ কালের কণ্ঠ’র এ প্রতিবেদকসহ সংবাদকর্মীরা রোহিঙ্গা শিবির ত্যাগের সময়ও রোহিঙ্গা নারী রশিদাসহ অন্যান্যরা ব্যানার নিয়ে দাঁড়ানো ছিলেন। সেই ব্যানারে রয়েছে তাদের হাতের লেখা। তাতে তারা যা লিখেছেন তার সারমর্ম হচ্ছে- এবার বাংলাদেশের বন্যাকবলিত মানুষের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করছে রোহিঙ্গারা। তারা বলেছে, বাংলাদেশের বহুসংখ্যক জেলা সাম্প্রতিক বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব জেলার লাখ লাখ মানুষ।

ব্যানারের লেখা অনুযায়ী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের বন্যাকবলিত মানুষের জন্য সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসতে ইচ্ছুক। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদ সদস্য, সেনাবাহিনীসহ সবার প্রতি রোহিঙ্গারা কৃতজ্ঞ। রোহিঙ্গারা তাদের স্বদেশ ভূমিতে শান্তিতে ফিরে যাবার ইচ্ছার কথাও তাতে উল্লেখ করা হয়। তাদের আশ্রয় দেওয়ায় তারা খুশি। ব্যানারসহ রোহিঙ্গাদের ছবিও ধারণ করা রয়েছে এ প্রতিবেদকের নিকট।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় খবর মিলেছে, ব্যানার হাতে দাঁড়ানো রোহিঙ্গা নারী রশিদাকে বেধড়ক পিটিয়েছে রোহিঙ্গারা। এই নারীকে পুলিশ উদ্ধার করে কুতুপালং রোহিঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালটির দায়িত্বে থাকা চিকিত্সক ডা. আবদুন নূর বুলবুল কালের কণ্ঠকে জানান, রশিদা নামের এক রোহিঙ্গা নারী গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে আসেন। তাকে প্রাথমিক চিকিত্সা দিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

চিকিত্সক বুলবুল বলেন, ‘কেবল রোহিঙ্গা নারীর অবস্থা সংকটজনক বলে রেফার করা হয়নি। তাকে ক্ষুব্ধ রোহিঙ্গাদের কবল থেকে রক্ষার জন্য নিরাপত্তাজনিত কারণেই জেলা সদর হাসাপাতালে পাঠানো হয়েছে। ‘

এ প্রসঙ্গে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের শেড মাঝি মৌলভী নুর কামাল জানান, আসলে ক্ষুব্ধ রোহিঙ্গারা ওই নারীকে কেন এমনভাবে মারধর করেছে তার কারণ রহস্যজনক। আমরা কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এ ঘটনাকে নিয়ে শিবিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টিরও চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারজ্জামান রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টিকে আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ বলে মনে করা হলেও আসলে আমরা ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে এগুচ্ছি। আমি নিজেই সরেজমিনে শিবিরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সঠিক কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ‘

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, তিনি শুনেছেন ওই নারী জর্ডানের রাণীর নিকট খাবার চাওয়ায় সাধারণ রোহিঙ্গারা সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের কথা হচ্ছে- বর্তমানে তারা (রোহিঙ্গারা) শিবিরে বেশ ভালোই রয়েছেন। এমন অবস্থায় রাণীর নিকট কেন ওই নারী অহেতুক অভিযোগ তুলতে গেলেন। বিষয়টির ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানার জন্য রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত আহত রোহিঙ্গা নারীর বক্তব্য নিতে অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু উখিয়া থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তখনো এসে না পৌঁছায় তা সম্ভব হয়নি।

 

সূত্র: কালের কন্ঠ

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন