কুতুবজোমে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার ৪

fec-image

কুতুবজোম ইউনিয়নের ওয়ারেন্টভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মানব পাচারকারী আসামীদের আটকের জের ধরে, ২৬ জুলাই রাত দশটার দিকে আসামি ছিনিয়ে নিতে ছেলে ধরা গুজব ছড়িয়ে পুলিশের উপর পূর্ব পরিকল্পিত হামলা ও প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়ার ঘটনায়  ৫জনকে আটক করেছে মহেশখালী থানা পুলিশ ৷ এসময় হামলাকারীদের আঘাতে ৫জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি ওসি প্রভাষ চন্দ ধরের।

অন্যদিকে পুলিশের উপর হামলার আলোকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে ইউনিয়নটি ৷ পুলিশের উপর এহেন হামলার ঘটনা নাড়া দিয়েছে স্থানীয় জনসাধারণের মনে ৷ ঘৃণিত এহেন কর্মকাণ্ডে হতবাক শান্তিকামী বাসিন্দারা ৷ ফেসবুকের কল্যাণে দ্রুত সময়ে ছড়িয়ে পড়া সংবাদটি টক অব দ্যা মহেশখালীতে পরিনত হয় ৷

উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার, চায়ের দোকান ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় লোকজন, সচেতন মহল তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন ৷ হামলা পরবর্তী সময়ে হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে স্থানীয়দের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে। স্থানীয় কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ৷ তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার, মাদক, খুন, জমি দখল, ডাকাতি সহ ডজনখানেক মামলা রয়েছে বলে সূত্রে জানা যায় ৷

এলাকায় তাদের এতই প্রভাব ও আধিপত্য রয়েছে যে, প্রকাশ্যে কেউ তাদের নাম মুখে নিতে সাহস করেনা ৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী হামলার ঘটনার মূল নায়ক হিসেবে জনৈক প্রভাবশালী ও বহু মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি কাসেমের পরোক্ষ ইন্ধন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ৷

ঘটনা প্রসঙ্গে কুতুবজোম ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ খোকনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি খোলামেলা আলোচনায় ক্ষোভের স্বরে বলেন-কোন লুকোচুরি নয় ৷ গ্রেপ্তারকৃত দাগী আসামীদের ছিনিয়ে নিতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের উপর হামলা করা হয়েছে।হামলাকারীরা সকলেই চিহ্নিত দাগী আসামি, মানবপাচারকারী ও মাদক ব্যাবসায়ী হিসেবে এলাকাবাসী সহ প্রশাসন অবগত রয়েছে ৷

তিনি দুঃখ করে বলেন, গত দুইমাসে ঐ এলাকায় এবার সহ তিন বার পুলিশের উপরে হামলা হওয়ার ঘটনা ঘটল ৷ এহেন কর্মকাণ্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে আপনার ভূমিকা বা পরিষদ প্রশ্নবিদ্ধ হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন-প্রশ্নই আসেনা! খবর নিলে জানতে পারবেন, আমার ইউনিয়নে এখন মানব পাচার কর্মকাণ্ড একেবারেই হয়না । বিচ্ছিন্নভাবে গুটিকয়েক লোক মানব পাচার করার চেষ্টা করে থাকে । আমাদের কপাল এতই খারাপ যে, বলতেও রুচিতে বাঁধে ৷ আমার স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সরাসরি এহেন কুকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে ৷ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে এলাকার মানুষ মনে করবে ক্ষমতার দাপটে আমি তাদের হয়রানি করছি ৷ তাই তাদের আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এনে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি ৷

চরপাড়া গ্রাম সম্পর্কে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বেশ কিছু চমকপ্রদ চাঞ্চল্যকর তথ্য – অনুসন্ধানে জানা যায়, কুতুবজোম সহ বিভিন্ন জায়গার চিহ্নিত দাগী আসামি ও সন্ত্রাসীরা তাদের নিরাপদ বাসস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে এই গ্রামটিকে ৷ অপরাধীরা এখানে অবস্থান করে নিরাপদে নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা সহ তাদের যাবতীয় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সমূহ ৷ এমনকি সাগরপথে জোরপূর্বক মালয়েশিয়ায় মানব পাচার , পাচারের উদ্দ্যেশ্যে জিম্মি করা লোকজনদের চরপাড়া এলাকায় বন্দী করে রাখার বহু পুরনো রেকর্ড রয়েছে ৷

এসআই পরেশ কারবারী হত্যা মামলার আসামীদের দীর্ঘদিন এই এলাকায় নিরাপদে অবস্থান করার খবরও প্রায় জনের মুখে মুখে ৷ এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান, এলাকায় প্রবেশ ও অভিযানের আগাম সংবাদ পৌঁছে দিতে তাদের রয়েছে আলাদা একটি গ্রুপ ৷ গ্রুপটি বিচ্ছিন্ন ভাবে চরপাড়া এলাকার প্রবেশ পথ , বটতলী বাজার, কবির বাজার, কালামিয়া বাজার সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান করে প্রশাসনের গতিবিধি নজরে রাখে ৷ প্রশাসনিক লোকজনের আনাগোনা টের পাওয়া মাত্রই তাদের মূল পয়েন্টে খবর পাঠিয়ে অপরাধীদেরকে নিরাপদে সরে যেতে সহযোগিতা করে থাকে ৷ চরপাড়া গ্রামের একাংশ ঝাউগাছ, প্যারাবন ও নদীপথে বিস্তৃত হওয়ায় অপরাধীরা দ্রুত সময়ে গা ডাকা দিতে সক্ষম হয় বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ৷  সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আসামীদের গ্রেপ্তারে উক্ত এলাকায় পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে ৷

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন