Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

ক্যান্সারে আক্রান্ত মেধাবী ছাত্রী শিবলী বাঁচতে চাই

চকরিয়া প্রতিনিধি:

অন্যদশ শিক্ষার্থীর মতো জীবনে স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে একদিন বড় হয়ে ডাক্তার হবে। সমাজ ও দেশের মানুষের সেবা করবে।কিন্তু সেই স্বপ্ন মরণব্যাধী ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে আটকে আছে দরিদ্র বাবার পলিথিন ঢাকা ভাঙা ঘরের মাটির বিছানায়। কক্সবাজারের চকরিয়ায় উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহদ্দারকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী শিবলী। তার পুরো নাম আরেফিন জন্নাত শিবলী (১৫)। সে বিএমচর ইউনিয়নের দক্ষিণ বহদ্দার কাটা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শফি’র তৃতীয় কন্যা। দরিদ্র বাবার আর্থিক দন্যতা ও চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মেধাবী ছাত্রী শিবলী। তার হাঁটুতে ধরা পড়েছে বোন ক্যান্সার।

মা রেনুআরা বেগম জানান, ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার মাসখানেকও পার হয়নি। প্রতিদিনের মতো সেদিনও বই, খাতা, কলম নিয়ে স্কুলে যায় শিবলী। স্কুল থেকে ফেরার পথেই অনুভব হয় তার হাঁটুর প্রচণ্ড যন্ত্রণা। পরদিন থেকে আর স্কুলে যেতে পারেনি সে। কয়েকদিন ধরে হাঁটুর যন্ত্রণা তীব্র আকার ধারণ করলে তাকে চট্টগ্রামের ডাক্তারদের কাছে নিয়ে গেলে তারা বলেছে মেয়েটির হাঁটুতে ক্যান্সার।

তার বাবা মোহাম্মদ শফি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি এমন এক হতভাগ্য বাবা যে কিনা সারারাত মেয়ের ব্যথার যন্ত্রণার আহাজারি শুনি কিন্তু মেয়ের জন্য কিছুই করতে পারিনা। আমি গরীব মানুষ। বয়সও হয়েছে। কাজও করতে পারিনা। আমার থাকার ঘরটি পর্যন্ত নেই। পরিবারের ৮ সদস্যের খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছি। তবুও আমি চেষ্টা করেছি আমার মেয়েদের পড়ালেখা করাতে। কিন্তু টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা দিতে না পারায় মেয়ে শিবলী এখন বোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে অর্ধেক চিকিৎসা করালেও অর্থিক দন্যতার কারণে সঠিক সময়ে কেমো থেরাপি গুলোও পর্যন্ত দিতে পারছিনা এভাবে চলতে থাকলে আমার মেয়েটি চোখের সামনেই মরে যাবে বলে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠেন তিনি।

ক্যান্সার আক্রান্ত মেধাবী ছাত্রী শিবলী বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের রেডিওথেরাপী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. এম এ আউয়ালের তত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছে। দীর্ঘ ৭ মাস ধরে তিনি চিকিৎসা চালিয়ে গেলেও তার দেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী কেমোথেরাপি গুলোও ঠিকমত দিতে পারছেননা দরিদ্র বাবা শফি।

সরেজমিনে দেখাগেছে, হতদরিদ্র  মোহাম্মদ শফি ৪ মেয়ে ২ ছেলেকে নিয়ে থাকেন একটি ভাঙা ঝুপড়ি বাড়িতে। ঘরের চালা ভেঙে যাওয়ায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে কোনরকম রোদ বৃষ্টি থেকে রক্ষা করে চালিয়ে যাচ্ছেন তার জীবন সংসার। ঘরের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে কোন আসবাবপত্র নেই। মাটি দিয়ে বানিয়েছেন থাকার বিছানা। এখন এ মাটির বিছানায় শুয়ে বসেই নীরবে চোখের জ্বল ফেলে কাটছে স্বপ্নকাতর শিবলীর জীবন। কখনো কখনো ব্যথার যন্ত্রণা সইতে না পেরে চিৎকার করে আহাজারি করেন। কখনো নিরবে চোখের পানি ফেলেন। মা রেনুআরা বেগম আর ছোটবোন আশরাফুল জন্নাত সবসময় থাকেন তার পাশেই।

তুমি পড়ালেখা করে কি হতে চাও শিবলী কাছে জানতে চাইলে ভেজা চোখে কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে সে বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল আমি পড়ালেখা করে বড় হয়ে ডাক্তার হব। গরীব রোগীদের ফ্রী চিকিৎসা সেবা দেব।সমাজ ও দেশের মানুষের সেবা করব। কিন্তু এখন আমার সব স্বপ্ন আটকে আছে এ মাটির বিছানায়। যদি আল্লাহর রহমতে সুস্থ হতে পারি তাহলে আবার স্কুলে যাব, মন দিয়ে পড়ালেখা করব।

হতভাগা দরিদ্র পিতা শফির ৪ মেয়ের মধ্যে সবার বড় জন্নাতুন নঈম পড়ছেন এইচ এসসি ২য় বর্ষে। টিউশনি করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে সে। ২য় মেয়ে জন্নাতুল বকেয়া পড়ে পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজের প্রথম বর্ষে। সে পেকুয়ায় এক বাড়িতে লজিং থেকেই নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে।

৩য় মেয়ে আরেফিন জন্নাত শিবলী ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। আর চতুর্থ মেয়ে আশরাফুল জন্নাত পড়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। পিতা শফি ও মাতা রেনু আরা এখনো আশায় আছেন, তাদের মেয়ে সঠিক চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে উঠবে। এজন্য তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রী, দেশের দানশীল, বিত্তবানদের কাছে সাহায্য কামনা করেছেন।স্থানীয় লোকজন জানান, দেশের প্রতিটি বিত্তবানরা যদি এ রখম ক্যান্সার আক্রান্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে এসে একটুখানি দয়ার হাত বাড়ান তাহলে একটি মেধাবী মেয়েকে বাঁচানো সম্ভব হবে। অন্যথায় চোখের সামনেই পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে একটি মেধাবী মুখ ও তার লালিত স্বপ্ন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন