‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারীদের প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে’
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
খাগড়াছড়িতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কিশোরী গণধর্ষণ এবং লামায় ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদ ও ন্যায় বিচারের দাবিতে এক মানববন্ধন করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ ও বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক নামে তিনটি সংগঠন।
বুধবার (২৭ জুন) সকালে রাজধানীর শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ প্রতিবাদ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক-এর সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি মনিরা ত্রিপুরার সঞ্চালনায় মানববন্ধনের শুরুতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী।
তিনি বলেন, গত ২১ জুন ২০১৮ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্কে একজন ত্রিপুরা কিশোরীকে জোরপূর্বক ৮জন সেটেলার যুবক দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হয়। ওইদিনই পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করে যার মধ্যে ৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং বাকিরা পলাতক রয়েছে। আদালত আসামীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করে জেল হাজতে প্রেরণ করার নির্দেশ দিয়েছে।
অপরদিকে গত ১৭ জুন (রবিবার) বান্দরবানের লামায় নিজ বাড়িতে এক মারমা (১৯) তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, নিজ বাড়িতে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এ তরুণীকে। নিহতের আত্মীয়দের অভিযোগ, ধর্ষণের পরে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে মারা হয়েছে। কারণ তার গলায় ছোপ ছোপ কালো দাগ আছে এবং মেয়ের গায়ের কাপড় খোলা ছিল এবং তার শরীরে ধর্ষণের আলামতও দেখা গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারণে উপজাতি নারীর উপর সহিংসতার মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এ ধরনের ঘটনা বারংবার ঘটছে। দুঃখের বিষয় হলো, তবুও এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ্য করছি না।
ঐক্য ন্যাপ-এর সভাপতি বর্ষীয়ান নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ওপর নিপীড়ন বেড়ে চলেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারীরা প্রতিনিয়ত হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এসব ঘটনায় সমগ্র দেশ আজ উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের ওপর এতো মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনা ঘটছে কিন্তু রাষ্ট্র কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। রাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘণের এ বিষয়গুলো দেখেও না দেখার ভান করছে কিংবা রাষ্ট্র এ পাহাড়ি মানুষদের দেখতে পায় না। কোন সুষ্ঠুবিচার না হওয়ার ফলে দেশে সহিসংসতার ঘটনা বেড়েই চলছে।
কাপেং ফাউন্ডেশনের সদস্য সোহেল হাজং বলেন, এবছরের জুন পর্যন্ত সারাদেশে পাহাড়ি নারী ও কন্যাদের প্রতি সহিংসতামূলক ১৮ থেকে ২০টি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে পাহাড় ও সমতলের প্রায় ২৫ জন পাহাড়ি নারী অথবা কিশোরী সহিংসতার শিকার হয়েছে। রাষ্ট্রের চলমান বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও পাহাড়িদের অবহেলার দৃষ্টিতে দেখার কারণেই নারীদের প্রতি এসব সংহিসংতার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি এসব প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক-এর সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা মানববন্ধনের সমাপনী বক্তব্যে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরী গণধর্ষণ এবং লামায় ধর্ষণের পর হত্যার সুষ্ঠু বিচারের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এছাড়া মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খায়রুল চৌধুরী, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্রেট সদস্য জান্নাত এ ফেরদৌসী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জনা গোস্বামী, গণজাগরণ মঞ্চের নেত্রী লাকী আক্তার, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নিপুন ত্রিপুরাসহ এএলআরডি, ব্লাস্ট, আদিবাসী ফোরাম, গারো স্টুডেন্টস ফেডারেশন, মাদল ও অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।