খাগড়াছড়িতে পাচউবো সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প ব্যবস্থাপক সহিদুল হক ভূঞার আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন
পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের খাগড়াছড়ি জেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক সহিদুল হক ভূঞার বিরুদ্ধে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে স্ত্রীর নামে বাড়িঘর, প্লাট ও ভূমি ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশ্ন উঠেছে এই কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর আয়ের উৎস নিয়ে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি শাসনামলের প্রভাবশালী ক্যাডার ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো: মাহফুজুর রহমানের কাছ থেকে স্ত্রী বিলকিছ আক্তারের নামে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের কলাবাগান এলাকার চার তলা বাড়িটি ২০১১ সালে ১৯ লক্ষ টাকায় বায়না নামা মূলে ক্রয় করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের জেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক সহিদুল হক ভূঞা।
বাড়ি ক্রয়ের সময় স্ত্রীর ঠিকানা দেখানো হয় খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়নে। তবে বায়না পত্রে উল্লেখিত ঠিকানা ভুয়া বলে জানিয়েছেন বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা। ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বাড়ি ক্রয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিলকিছ আক্তার পেশায় একজন গৃহিনী হয়ে কিভাবে এত টাকার মালিক হলেন এমন প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি। আয়ের বৈধ কোন কাগজপত্র নাই বিলকিছ আক্তারের নামে।
বাড়ি ক্রয়ের বায়নাপত্র করলেও বিএনপির ক্যাডার মাহফুজুর রহমান জরুরী সকারের আমলে খাগড়াছড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ায় শহীদুল হক ভূঞার স্ত্রীর নামে মালিকানা পরিবর্তন করে দিতে না পারায় জটিলতার সৃষ্টি হয়। বিলকিছ আক্তারের(বায়নামূলে) সাথে মাহফুজুর রহমানের দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসান ঘটে চলতি বছরের ১লা মে খাগড়াছড়ির কলা বাগানের ঠিকাদার আইয়ুব খানের স্ত্রী শাহানাজ বেগমের(রোজী) কাছে চুক্তিমূলে বিক্রীর মাধ্যমে।
উক্ত চুক্তিতে শাহানাজ বেগম রোজীকে ১ম পক্ষ উল্লেখ করে পূবালী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের ৪টি চেকে সাড়ে ২৬লক্ষ টাকা সহিদুল হক ভূঞার স্ত্রী বিলকিছ আক্তারকে পরিশোধ করা।এ প্রতিবেদকের কাছে পদত্ত চারটি চেকের নাম্বার রয়েছে।
তবে বাড়ি ক্রয় বিক্রয়ের কথা প্রথমে অস্বীকার করলে পরবর্তীতে স্ত্রীর নামে বাড়িতে ক্রয় করতে চেয়েছিলেন বলে স্বীকার করে শহীদুল হক ভূঞা জানান, ২০১১ সালে বাড়িটি কিনতে চেয়েছিলাম। সে জন্য মাহফুজুর রহমানকে ১৯ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন করতে না পারায় মাহফুজুর রহমান থেকে টাকা ফেরত নিই। কিন্তু শাহনাজ বেগম রোজীর কাছে সাড়ে ২৬ লক্ষ টাকায় বাড়ি বিক্রীর চুক্তিপত্রে দ্বিতীয় পক্ষ ছিল শহীদুল হকের স্ত্রী বিলকিছ আক্তার। তথ্য গোপন করে বাড়ি ক্রয়-বিক্রয় ও ভুয়া ঠিকানা ব্যবহারের কোন সদুত্তোর দেননি বিলকিছ আক্তারের স্বামী সহিদুল হক ভূঞা।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো: শানে আলম জানান, মাহফুজুর রহমানের কাছ থেকে সহিদুল হক ভূঞা তার স্ত্রীর নামে বাড়ী ক্রয়ে তিনিও একজন স্বাক্ষী ছিলেন। তবে তারিখ মনে নেই। সহিদুল হক ভূঞা বাড়ী ক্রয় ও বিক্রয়ে শুধু ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ক্ষান্ত হননি। বিক্রির সময় বায়না নামায়ও অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৬ লাখ টাকা কম উল্লেখ করেছেন।
শহীদুল হক ভূঞার স্ত্রী বিলকিছ আক্তারের কাছ থেকে চুক্তিমূলে বাড়িটি ক্রয়ের কথা স্কীকার করে শাহনাজ বেগম রোজী জানান, বিলকিছ আক্তারের কাছ থেকে বাড়িটি নেয়া হলে আমাকে মালিকানা পরিবর্তন করে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছেন বাড়ির মূল মালিক মাহফুজুর রহমান।
মাহফুজুর রহমানের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন নিলেও বাড়ির দখলদার সূত্রে মালিক বিলকিছ আক্তারের স্বামী শহীদুল হক ভূঞাকে ৩১ লক্ষ টাকা, ঢাকায় বসবাসকারী শহীদুল হকের শ্যালককে ৫লক্ষ টাকা ও মাহফুজুর রহমানকে ৫ লক্ষ টাকাসহ সর্বমোট বাড়িটির মূল্য পড়েছে ৪২ লক্ষ টাকা। টাকার উৎস সর্ম্পকে শাহনাজ বেগম রোজী জানান, আমার শ্বশুড়ের দেয়া ভূমি বিক্রীকৃত টাকা দিয়ে খাগড়াছড়ির বাড়িটি কেনা হয়েছে।
আরেকটি সূত্রের তথ্যে জানা যায়, শুধুমাত্র খাগড়াছড়ি শহরের কলাবাগানের বাড়িটি নয় একই ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে সহিদুল হক ভূঞা তার স্ত্রী বিলকিছ আক্তারে নামে ২০১০ সালে মাটিরাঙা উপজেলার কাজী পাড়ায় ১৮০ শতক বাগান ক্রয় করেন।