খাগড়াছড়িতে রবিবার থেকে টানা ৭২ ঘন্টা হরতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

পাহাড়ি সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তার লড়াইয়ে সবুজ পাহাড় রক্তাক্ত হচ্ছে। মাত্র ২৪ ঘন্টা ব্যবধানে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে একজন জনপ্রতিনিধি ও অপর এক আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনের শীর্ষ নেতাসহ ৬জনের নির্মম মৃত্যুতে পাহাড় জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।

ব্যবসা বানিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ সংঘাত বন্ধের দাবি সকল মহলে। এ দিকে মাইক্রোবাস চালক সজিবসহ সকল হত্যাকান্ডের বিচার ও অপহৃত তিন বাঙালি ব্যবসায়ী উদ্ধারের দাবীতে আগামীকাল রবিবার (৬ মে) থেকে খাগড়াছড়িতে টানা ৭২ ঘন্টার হরতাল ডেকেছে বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য অধিকার ফোরাম। একই দাবিতে সোমবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতির কর্মসূচি দিয়েছে খাগড়াছড়ি রেন্ট-এ কার চালক সমিতি। পাহাড়ি হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রসীতের ইউপিডিএফ-কে দায়ী করে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। সব মিলিয়ে সর্বত্র থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

গত বৃহস্পতিবার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট শক্তিমান চাকমার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে গতকাল শুক্রবার দুপুরে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কের বেতছড়িতে সন্ত্রাসীদের হামলায় ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক-এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমাসহ পাচজন নিহত হয়।

নিহত ও আহতরা সকলেই খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রসীতের ইউপিডিএফকে দায়ী করেছে জেএসএস (এমএন) ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে জনপ্রতিনিধি ও একটি আঞ্চলিক সংগঠনের শীর্ষ নেতাসহ ৬জনের মৃত্যুতে শোকের পাশাপাশি আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে পাহাড়।

পাহাড়ে ভ্রাতিঘাতি সংঘাতে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডে ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠা রিবাজ করছে সচেতন মহলেও সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালিরা ভ্রাতিঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উইমেন্সে রির্সোস নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক শেফালিকা ত্রিপুরা অভিলম্বে ভ্রাতিঘাতি সংঘাত বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলে বসবাসকারী সকল মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক সুদর্শন দত্ত বলেন, পাহাড়ি সংগঠনগুলোর সংঘাতে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বানিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনের সভাপতি এডভোকেট আ. মালেক মিন্ট বলেন, ৪টি পাহাড়ি সংগঠনের আধিপত্য বিস্তার লড়াইয়ে পাহাড়ি ভাইদের পাশাপাশি বাঙালি ভাইয়েরাও প্রাণ হারাচ্ছে। তিনি পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, চাঁদাবাজি বন্ধ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেন, অন্যথায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে মাইক্রোবাস চালক মো. সজিবসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার ও অপহৃত তিন বাঙালি ব্যবসায়ীকে উদ্ধারের দাবিতে বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য অধিকার ফোরাম কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

সমাবেশ থেকে আগামীকাল রবিবার (৬ মে) থেকে খাগড়াছড়িতে টানা ৭২ ঘন্টা হরতালের ঘোষণা দেন বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস এম মাসুম রানা।

সমাবেশে পার্বত্য অধিকার ফোরামের সভাপতি মো. মাঈন উদ্দিনও বক্তব্য রাখেন।
এদিকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত মাইক্রোবাস চালক মো. সজিব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি রেন্ট এ কার চালক সমিতি মানববন্ধন ও শোক র‌্যালি করেছে।

মানববন্ধন থেকে আগামী সোমবার (৭ মে) খাগড়াছড়িতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের কর্মসূচি দেওয়া হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, রেন্ট এ কার চালক সমিতির সহ-সভাপতি খাইরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন ও সিএনজি চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন।

সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে পাহাড়ে খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজির জন্য প্রসীতের ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহাদত হোসেন টিটু জানান, সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে নিহত ৬ জনের লাশ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ময়না তদন্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ হত্যাকা-ের পর পুলিশ সুপারের নির্দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর বিবাদমান পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাতে প্রায় ৫শতাধিক নিহত ও সহস্রাধিক আহত হয়েছে। তার মধ্যে চলতি বছরে প্রাণ হারিয়েছে একজন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অন্তত ১৮জন। পাহাড়ি সংগঠনিগুলোর আধিপত্য বিস্তার লড়াইয়ে সবুজ পাহাড় রক্তাক্ত, আতঙ্কিত মানুষ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন