খাগড়াছড়ির এমপি কুজেন্দ্র’র বিরুদ্ধে সরকারী ভবন, গাড়ি অবৈধভাবে ভোগ করার অভিযোগ ওয়াদুদ ভুঁইয়ার: এমপি’র অস্বীকার

02.10

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

খাগড়াছড়ির এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও নিয়ম ভঙ্গ করে সরকারী ভবন নিজের বসবাসের জন্য ব্যবহার করার অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভুঁইয়া। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। পার্বত্যনিউজকে তিনি বলেছেন, কোনো অনিয়ম নয়, নিয়ম মোতাবেক ভাড়া নিয়েছেন তিনি।

খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কর্তৃক সরকারী ভবন, জেলা পরিষদের গাড়ি ও অন্যান্য সুবিধা অবৈধভাবে ভোগ করার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য এবং খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া। সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর জন্য নির্মিত ও বরাদ্ধকৃত সরকারী বাসভবন খাগড়াছড়ির সরকারদলীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা‘র ব্যবহারের জন্য সাজসজ্জা চলছে, যা সরকারি বিধি মোতাবেক অবৈধ। ঢাকায় এমপি হোস্টেল ও ন্যাম ভবনে বরাদ্ধকৃত বাসা ব্যাতিত কোনো সংসদ সদস্য নিজ নির্বাচনী এলাকায় সরকারী কোনো বাসা বরাদ্দ পায় না বলেও বিবৃতি উল্লেখ করেন সাবেক এ সংসদ সদস্য।

একজন সরকারী কর্মকর্তার জন্য বরাদ্দকৃত অথবা যেকোনো সরকারী বাস ভবন কোনো সংসদ সদস্যের জন্য বরাদ্ধ বা ব্যবহার বৈধ নয় বলেও বিবৃতিতে দাবী করেন তিনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা প্রায় কোটি টাকা মূল্যের খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সরকারি গাড়ি, ড্রাইভার ও তৈল ব্যবহার করে আসছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন ওয়াদুদ ভুইয়া।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের চরম স্বেচ্ছাচারিতা কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তা এ সংসদ সদস্যের কর্মকান্ড থেকে সহজেই অনুমান করা সম্ভব। সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন যেন চোখ বুজে আছে বলেও বিবৃতিতে দাবী করেন বিএনপি দলীয় সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, এবিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রশাসনিক ব্যাবস্থা চোখে পড়েনি। জেলা পরিষদকে দলীয়করণ করে স্বায়ত্বশাসিত এ প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন ওয়াদুদ ভুইয়া।

বিবৃতিতে ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, দেশব্যাপী চরম দূর্নীতি, নৈরাজ্য ও দলীয় স্বেচ্ছাচারিতার বহি:প্রকাশ হচ্ছে এ ধরণের কর্মকান্ড। আমি এ ধরণের অবৈধ কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এ ধরণের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা নিতে সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় এই অনিয়ম ও দলীয়করণের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন বিবৃতিতে।

প্রসঙ্গত, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর জন্য ৬৮ লাখ টাকায় ভবনটি নির্মাণ করা হয় জেলা পরিষদের অর্থায়নে। খোনে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর বসবাস করার কথা। কিন্তু ইতিমধ্যে সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বসবাসের জন্য সাজসজ্জার কাজ চলছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের পরপরই স্থানীয় সরকার দলীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বর্তমান বাসা ছেড়ে সেখানে উঠবেন।

জানা গেছে, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পূর্বে তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করলেও এখনো পর্যন্ত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সরকারী বাংলোয় বসবাস করছেন। যদিও খুব কাছাকাছি খাগড়াপুরে সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা‘র নিজের বাড়ি রয়েছে। অন্যদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাাইথোঅং মারমা পাইনখাইয়াপাড়াস্থ নিজের বাড়িতেই বসবাস করছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি পার্বত্যনিউজকে বলেন, বাসাটি আমি নিয়ম মোতাবেক ভাড়া নিয়েছি। জেলাপরিষদ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার কাছে বাসাটি ভাড়া দিয়েছে। কতো টাকায় ভাড়া নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছি।

বর্তমানে আপনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাসায় বসবাস করায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেখানে উঠতে পারছেন না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাসভবন নয়, রেস্ট হাউজ। জেলাপরিষদ চেয়ারম্যানরা ভাড়া দিয়ে এই ভবন ব্যবহার করেন। আমিও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকাকালে ভাড়া দিয়ে উঠেছিলাম। বর্তমানে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা হিসাবে ভাড়া দিচ্ছি। কতো টাকা ভাড়া দিচ্ছেন জানতে চাইলে ৫ হাজার টাকা বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ওয়াদুদ ভুঁইয়া, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন