খাগড়াছড়ির তামাকচুল্লিতে বছরে পোড়ানো হচ্ছে এক লাখ মণ কাঠ

fec-image

   25.04.2014-Tamak NEWS.Pic-02        
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, পার্বত্য নিউজ :

খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে তামাকচুল্লি। এক তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা গেছে, এসব তামাকচুল্লি তৈরি ও তামাক শুকানোর কাজে প্রতিবছর অন্তত এক লাখ মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। তামাকচুল্লি নিয়ন্ত্রণে কোনো আইন না থাকায় এসব তামাকচুল্লি তৈরি ও কাঠ পোড়ানোর কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।

জেলায় তামাক চাষ হয় এমন সব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তামাক শুকানোর জন্য অনেকের বসতভিটার পাশে তামাকচুল্লি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে প্রচুর পরিমানে কাঠ। তামাকের ক্ষতিকর ধোঁয়া ও দুর্গন্ধের মধ্যেই তামাক শুকানোর কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্য বা এ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় বিচিতলার বাঙ্গালীপাড়া, গামারিঢালা মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতির গড়গড়িয়া, বেলছড়ির অযোধ্যাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে শতাধিক তামাকচুল্লী। এমনটাই জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি জেলা সদরের বিচিতলা এলাকার বাঙ্গালীপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, বসতভিটার কাছেই তৈরি করা হয়েছে তামাকচুল্লি। প্রতিটি তামাকচুল্লি তৈরিতে অন্তত ২০ ফুট দৈর্ঘের ২৭টি গাছ ব্যবহার করা হয়েছে। মুলিবাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় তিন‘শ। প্রতিটি চুল্লিতে তামাক শুকাতে প্রতিবার ৫০ থেকে ৬০ মণ কাঠ জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হয় বলে জানিয়েছেন তামাক চুল্লি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।একই দৃশ্য দেখা গেছে, মাটিরাঙ্গার বেলছড়ির অযোধ্যা এলাকায় গিয়েও।

গোমতির গড়গড়িয়ায় বসতবাড়ি ঘেষে বসানো হয়েছে পাশাপাশি চারটি তামাকচুল্লি। এ গ্রামে রয়েছে অন্তত: ১০টি তামাকচুল্লি। বিস্তীর্ণ এলাকায় তাকালেই চোখে পড়ে পরিবেশ ধ্বংসকারী তামাকচুল্লি। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়ার কেউ নেই। মো: ফারুক হোসেন ও মো: জহির নামের দুই তামাক চাষী আলাদা চারটি তামাকচুল্লি তৈরী করেছেন। প্রতিটি তামাকচুল্লিতে ১০/১৫জন করে শ্রমিক নিয়োজিত আছে। মো: ফারুক হোসেন‘র তামাকচুল্লিতে শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে ১২ বছরের এক শিশু। দৈনিক ১০০ টাকা বেতনে কাজ করে শিশু শ্রমিক শাহীন আলম। মধ্যগড়ড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র বলে জানায় পিতৃহীন শিশু শ্রমিক শাহীন আলম।

অযোধ্যার একটি চুল্লির মালিক কৃষক সাঈদ আনোয়র বলেন, প্রতিটি চুল্লিতে দুই থেকে আড়াই হেক্টর জমির উৎপাদিত তামাক শুকানো হয়। একটি চুল্লি ছয়-সাত বছর টিকে থাকে। প্রায় সব চুল্লির মালিকরাই পাহাড়ের বিভিন্ন বাগান থেকে গাছ কিনে সেখানে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করেন।

একাধিক তামাক চাষীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, তামাক চাষ ক্ষতিকর জানা সত্ত্বেও আর্থিক লাভের নিশ্চয়তা থাকায় তাঁরা তামাক চাষকে নিরাপদ মনে করেন। তামাকের বীজ থেকে শুরু করে বীজতলা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় পলিথিন বিনা মূল্যে তামাক কোম্পানি থেকে পাওয়া যায়। এ ছাড়া কোম্পানির কাছ থেকে বাকিতে সার-ঔষধ এবং প্রতি হেক্টর তামাক চাষের জন্য ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়, যা অন্য কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। জমি ছাড়া নিজের কোন পুজি প্রয়োজন হয় তামাক চাষে এমন কথাও বললের চাষীরা।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর খাগড়াছড়ির আট উপজেলায় এক হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। প্রতি আড়াই হেক্টর জমির বিপরীতে একটি হিসেবে জেলায় তামাকচুল্লি রয়েছে ৪১২টি। এসব চুল্লি তৈরিতে গাছ ব্যবহার করা হয়েছে কমপক্ষে ১১ হাজার। আর সে হিসেবে প্রতিবছর এক লাখ মণেরও বেশি জ্বালানি কাঠ এসব চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে তামাক শুকানোর কাজে।

খাগড়াছড়িতে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে জাবারাং কল্যাণ সমিতি। সমিতির  প্রকল্প কর্মকর্তা অমল ত্রিপুরা জানান, তামাক চাষ ও তামাক পোড়ানো জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এ ছাড়া জনবসতি এলাকায় চুল্লি স্থাপন এবং এতে কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ করতে সুনির্দিষ্ট আইন করা প্রয়োজন।

খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আনারকলী জানান, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকচুল্লি নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কোনো বিধিবিধান নেই। এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলে পরিবেশ আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তবে খাগড়াছড়ি জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো কার্যালয় নেই।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন