“দিঘীনালা উপজেলা ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি আবদুল মালেক হাওলাদার বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়ার পর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের কোনো তত্পরতা দেখতে না পেয়ে আমরা খুবই হতাশ।”
বাড়ি, ঘর, বসতভিটা, চাষের জমি ফিরে পাবার আশায়

খাগড়াছড়ির ৮১ গুচ্ছগ্রামে ২৬ হাজার বাঙালি পরিবার

fec-image

সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রতিটি পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১০ হাত বাই ১২ হাত আয়তনের একেকটি ঘর। অধিকাংশ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন। ঘরের একদিকে রান্নার চুলা আরেকদিকে পায়খানা। হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু রাখার ব্যবস্থাও একই ঘরে। গ্রামে বিদ্যুত্ ও বিশুদ্ধ পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। নালানর্দমা ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই নাজুক।

একসময় তাদের ঘরবাড়ি, চাষের জমি, গাছগাছালির বাগানসহ অনেক কিছুই ছিল। সংসারে সচ্ছলতা না থাকলেও কোনোমতে খেয়ে পড়ে মোটামুটি সুখে শান্তিতেই দিন কাটত। তবে এই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তিন পার্বত্য জেলায় আঞ্চলিক দলগুলোর আধিপত্যের লড়াই, গুম, খুন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণসহ সব ধরনের অপরাধের মূল টার্গেটে পরিণত হয় সেখানকার বাঙালিরা।

আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকলে বড় ধরনের সহিংসতা এড়াতে বাঙালিদের তাদের ঘরবাড়ি থেকে গুচ্ছগ্রামে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার ঘরবাড়ি ফিরে পাওয়ার আশ্বাসে সহায়-সম্বল ছেড়ে গুচ্ছগ্রামে ঠাঁই নেয় হাজার হাজার ভীত-সন্ত্রস্ত বাঙালি পরিবার। তারপর একে একে কেটে গেছে তিরিশটি বছর। এর মধ্যে দেশে কয়েক দফা সরকার পরিবর্তন হলেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার কাজটি খুব সহজ নয়। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর জন্য নিরাপত্তা বাহিনীসহ কয়েকটি পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রশাসন একা কিছু করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তিনি আরো জানান, খাগড়াছড়ির ৮১টি গুচ্ছগ্রামে ২৬ হাজার বাঙালি পরিবারকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দিঘীনালা উপজেলার বাবুছড়া নতুনবাজার গুচ্ছগ্রামের আয়তন সবচেয়ে বড়, যেখানে থাকে ৮১২টি পরিবার।

জানা গেছে, ১৯৮১ সালে নতুনবাজারের অদূরে সোনামিয়া টিলায় ৮১২টি বাঙালি পরিবারকে ৫ একর করে জমি বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। পার্বত্য চট্টগ্রামজুড়ে শান্তি বাহিনীর অব্যাহত সহিংসতার মুখে ১৯৮৬ সালের নভেম্বর মাসে ওইসব পরিবারকে সোনামিয়া টিলা থেকে গুচ্ছগ্রামে সরিয়ে নেওয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রতিটি পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১০ হাত বাই ১২ হাত আয়তনের একেকটি ঘর। অধিকাংশ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন। ঘরের একদিকে রান্নার চুলা আরেকদিকে পায়খানা। হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু রাখার ব্যবস্থাও একই ঘরে। গ্রামে বিদ্যুত্ ও বিশুদ্ধ পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। নালানর্দমা ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই নাজুক।

উপজাতি সন্ত্রাসীদের হামলার আতঙ্কে বাঙালিরা গুচ্ছগ্রামের বাইরে যেতে পারে না। খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে উঠছে গ্রামের শিশুরা। তারা স্কুলে যেতে ভয় পায়। পাহাড়ে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন একাধিক নারী। ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগও সীমিত বাঙালিদের। আঞ্চলিক সংগঠনকে নিয়মিত চাঁদা না দিলে ব্যবসা করা যায় না। একটা মুরগির ডিম বিক্রি করলেও উপজাতি কালেক্টরের হাতে চাঁদা তুলে দিতে হয়।

জানা গেছে, সোনামিয়া টিলাসহ বাঙালিদের বেদখল হয়ে যাওয়া ভূমি উদ্ধারে পূর্ণ প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা প্রদান করতে তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

গত বছরের ১ নভেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব রীভা চাকমা স্বাক্ষরিত চিঠিতে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনকে আরো যেসব নির্দেশনা দেয়া হয় তার মধ্যে রয়েছে- বাঙালিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও মানবিক আচরণ করা, তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন না করা এবং বাঙালিদের আইনগত অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

দিঘীনালা উপজেলা ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি আবদুল মালেক হাওলাদার বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়ার পর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের কোনো তত্পরতা দেখতে না পেয়ে আমরা খুবই হতাশ।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিরা নানাভাবে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার। সরকারের পক্ষ থেকে বৈষম্য না করার নির্দেশনা থাকলেও প্রভাবশালী মহলের চাপের কারণে স্থানীয় প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। সরকারি নির্দেশনার ব্যাপারে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি এবং বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সম্ভাব্য করণীয় নিয়ে আলোচনা করছি।

সূত্র- ইত্তেফাক

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গুচ্ছগ্রাম, পার্বত্যবাঙালি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন