খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচনের ঝড় বিএনপি-আ.লীগে অস্থিরতা আর বহিস্কার আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে

আওয়ামী লীগ বিএনপি

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে নাগরিক কমিটি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মো: রফিকুল আলম বিজয়ী হবার পর বড় দু‘দলেই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

বিএনপি-আওয়ামী লীগ এবং এ দুই দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়ায় দল দুটির শীর্ষ নেতারা বেছে বেছে ত্যাগী ও ইমেজ সম্পন্ন নেতাদের বহিস্কারের পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে দুই দলের ভেতর থেকেই। এমন পরিস্থিতিতে দু‘দলেই বহিস্কার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

খাগড়াছড়ি শহরে বিএনপি শক্তিশালী বলে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা এতদিন ধারণা করে এসেছেন। তারপরও খাগড়াছড়ি বিএনপির অভিভাবক হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভূইয়া দীর্ঘদিন পর খাগড়াছড়িতে অবস্থান নিয়ে নিজেই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠ চষে ভোট চাওয়ার পরও ‘ধানের শীষ’ প্রতীক হিসাবে থাকার পরও ভোটের হিসেবে তৃতীয়স্থান লাভ করার পর দলটির তৃণমুল নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকে মনে করছেন দলে ভুল প্রার্থি, বিভক্তিসহ অতীত সব ভুলেরই খেসারত দিতে হয়েছে এবারের পৌর নির্বাচনে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে বহিস্কার আতঙ্ক।

খাগড়াড়াছড়ি জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি আমিন শরীফ সওদাগর, যুগ্ম-সম্পাদক তাজুল ইসলাম বাদল, কোষাধ্যক্ষ বাদশা মিয়া সওদাগর, সাবেক মেয়র ও জেলা ছাত্রদলের সাবে সভাপতি মো: জয়নাল আবেদীন, খাগড়াছড়ি জেলা যুবদলের সভাপতি আব্দুস সালামের নাম বহিস্কারের তালিকায় রয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভুঁইয়া পার্বত্যনিউজকে বলেন, খাগড়াছড়ি বিএনপিতে কোনো বহিস্কার আতঙ্ক নেই এবং এরকম কোনো তালিকাও করা হয়নি। প্রার্থি নির্বাচনের ভুলের বিষয় সম্পের্কে তিনি বলেন, প্রার্থি নির্বাচন করেছেন আমাদের তৃণমূলের ১৩৫ জন নেতা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে। এখানে তৃণমূল নেতৃবৃন্দ যদি প্রার্থি নির্বাচনে ভুল করে তাহলে আমাদের কি করার থাকতে পারে।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-সম্পাদক মো: তাজুল ইসলাম বাদল বলেন, যাঁরা ব্যক্তি স্বার্থে দলকে বিকিয়ে ফায়দা হাসিল করেছেন, বিএনপি’র সাধারণ নেতাকর্মীরা তাঁদেরকে চিহ্নিত করতে পেরেছে। তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী সৈনিকরা নীতির প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের সময়োপযোগী জবাব দেয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অন্যদিকে শাসকদল আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের একটি বড় অংশও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে নাগরিক কমিটি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রফিকুল আলম‘র পক্ষে কাজ করায় এরই মধ্যে দলটিতে বহিস্কারের হিড়িক পড়েছে। আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী মো. শানে আলম পরাজিত হওয়ায় দলটির দু:সময়ে জেল-জুলুম আর নির্যাতনের শিকার এমন কিছু নেতার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো: জাহেদুল আলম, যুগ্ম-সম্পাদক এস.এম. শফি, শিক্ষা ও মানবকল্যাণ সম্পাদক মো: দিদারুল আলম এবং জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ফিরোজসহ অনেককে বহিস্কারের গুঞ্জন উঠেছে। এ্ররই মধ্যে দলীয় জেলা কার্যালয়ে তালা দেয়া ও তার প্রতিবাদে মানববন্ধন নিয়ে বিভক্তি প্রকাশ হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগ‘র সিনিয়র সহ-সভাপতি রন বিক্রম ত্রিপুরা বলেন, আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে যাঁরা দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছে তাঁরা অটোমেটিকেলি দল থেকে বহিস্কার হয়ে গেছেন। এছাড়াও তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাসহ বহিস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জেলা কমিটি থেকে প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে বলেও দাবী করেন তিনি।

এদিকে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মো: শানে আলম‘র বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আ.লীগ ও পৌর আ.লীগের ১৭ নেতাকর্মীকে আগেই বহিস্কার করা হয়েছে।

দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে কেন্দ্রের নির্দেশনা মানা হয়নি দাবী করে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম বলেন, এ জেলায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে শক্তিশালী করেছেন এমন নেতারা মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহেদুল আলম বলেন, আমি নিজে, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক এস.এম. শফি ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জহির উদ্দিন ফিরোজ বিএনপি’র দূর্গ হিসেবে পরিচিত মাটিরাঙ্গায় অবস্থান করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছি। একটি চক্র অহেতুক তার বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি পৌরসভার নির্বাচনে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে ষড়যন্ত্র করছেন বলেও দাবী তার।

এদিকে যারা দল করে দলের শৃংখলা ভঙ্গ করবে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়াটাই স্বাভাবিক বলে দাবী করেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ, খাগড়াছড়ি, নির্বাচন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন