গুইমারায় মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

fec-image

অনিয়ম

গুইমারা প্রতিনিধি:

অনিয়ম, দূর্নীতির আরেক নাম খাগড়াছড়ি’র গুইমারা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা। সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়ায় উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে নান্দনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বাহির থেকে অনেক সুন্দর হলেও ভিতরে দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে।

মূলত অভিযোগগুলো মাদ্রাসার সুপার জায়নুল আবেদিনের বিরুদ্ধে। মাদ্রাসার নিজস্ব দোকান প্লটসহ নানা ধরনের আয়ের উৎস থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক কেলেংকারী নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

উপজেলার একমাত্র দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুপার জায়নুল আবদীনের প্রতিহিংসা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ২০১৯ সালের শিক্ষার্থী দাখিল পরিক্ষার ফরম পুরণ করতে না পেরে শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পড়ার টেবিল ছেড়ে অনাগত ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাওয়ার শংকায় দিশেহারা হয়ে মাকে সাথে নিয়ে ঘুরছে  বিভিন্ন মহলের দ্বারে দ্বারে।

এদিকে মাদ্রাসাটির ২০১৯ সালের দাখিল পরীক্ষার্থী নুরুন নবীর  বিরুদ্ধে প্রেম করার অভিযোগ এনে বিগত ১৬মে ২০১৮ইং তারিখে কৌশলগত ভাবে বহিস্কার করান তিনি। নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে কিন্তু ক্লাস করতে পারবে না বলে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির  সভায় রেজুলেশন করানো হয়। এ সময়ে  ক্লাশ না করেই কিভাবে পরীক্ষায় কৃতকার্য হবে অভিভাবকদের এমন প্রশ্নে হুংকার দিয়ে সুপার বলেন, হোটেল কর্মচারীর ছেলে বেশী লেখাপড়া করতে হয় না । এরপর নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকালে  অন্যের দোষ নুরুন নবীর গায়ে দিয়ে এক বিষয়ে অকৃতকার্য দেখানো হয় বলে পরিক্ষার্থীর মা অভিযোগ সূত্রে জানান। ক্লাস করার সুযোগ না দিয়ে ২০১৯ সালের দাখিল পরীক্ষার ফি ও বেতন নেওয়ার পরও ফরম ফিলাপ করতে দেওয়া হয়নি। ইতিপূর্বে আরও বেশ কিছু ছাত্রকে তিনি নানান অজুহাতে বহিস্কার করার অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নুরুন নবীর মা জানান অন্যকথা ,তিনি আর সুপার ভাড়া বাসায় পাশাপাশি বসবাস করেন। মাদ্রাসার সুপারের স্ত্রীর রামগড়ে বেড়াতে গেলে রাত ৯টায় সুপার পানি নিয়ে তার ঘরে অনৈতিক উদ্দেশ্যে  ডেকেছেন। ইতিপূর্বে তার স্ত্রীর সাথেও মনোমালিন্য ছিলো তার। এসবের জের ধরে নানান অজুহাতে তারা গরিব বলে সুপার তাদের হয়রানি করছে। নির্বাচনী পরীক্ষার সময় ২৬০০টাকা দিয়ে অংশগ্রহণ করতে দিলেও ফরম ফিলআপের নামে আরও ৪২৪০ টাকা দাবি করছে। অসহায় মা দাবিকৃত টাকা দিতে না পেরে ঘুরছেন পরিচালনা কমিটির কর্তা ব্যক্তিদের দরজায়। এর পর কানপুল বিক্রি করে দাবিকৃত টাকাসহ গেলে সুপারের পারিবারিক ইস্যু টেনে স্বেচ্ছাচারি মনোভাব পোষন করে টালবাহানা করছেন বলে তিনি জানান।

বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম সহ অন্যান্য সদস্যরা ৫দফায় বৈঠক করলেও সুপারের কারণে ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেনি বলে পরিচালনা কমিটির সদস্য সূত্রে জানাযায়।

পরিচালনা কমিটির সদস্য আনিসুল হক জানান, সুপার জায়নুল কমিটির কোনো কথা মানে না। শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। কমিটির সবাই একমত হলেও সুপারের কারণে ছেলেটি ফরম ফিলাপ করতে পারছে না। অপর সদস্য আবু তাহের লোকজনের উপস্থিতিতে জানান, অনেক অনুরোধের পরও  কাজ হয়নি তাই তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

স্থানীয় পলাশ চৌধুরী জানান, সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে মাদ্রাসার সুপার। তাঁর প্রতিবেশী গরিব শিক্ষার্থীর জন্য অনেক তদবির করেছেন, কিন্তু সুপার সরকারি নয় নিজের নিয়মে কাজ করায় দুঃখ প্রকাশ করেন। অনেক শিক্ষার্থী, অভিভাবকের অভিযোগ শুনে অনিয়ম পরিহারের অনুরোধ করেছেন কিন্তু সুপার কোনো কর্ণপাত করেনি। তিন বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের তিনি অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে বাড়তি মার্ক দেওয়ার অভিযোগ করেন পলাশ চেীধুরী।

অপরদিকে ২০১৮সালে সুপারের ছেলে প্রেমের চিঠি ও নির্বাচনী পরীক্ষায় নকল সহ হল পর্যবেক্ষকের হাতে ধরা পড়ার পর নিজের ছেলে বলে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গরিব বলে অন্যদের শাস্তি অনেক ব্যতিক্রম।

এছাড়াও সুপারের নিজ এলাকা রামগড় গর্জনতলীর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং তার নিকট আত্মীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময়ের জামাতের অন্যতম সংগঠক জায়নুলের অনিয়মের অভিযোগ নতুন বাজার মাদ্রসায় রয়েছে। সেখানে তিনি লাঞ্চিত হয়ে গুইমারা মাদ্রাসায় বর্তমানে স্থান নিয়েছে। তার চারিত্রিক বিষয়ে ও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

এছাড়াও বিগত জেডিসি পরীক্ষায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলে প্রথম বারের মত ক্ষমা করা হয়। এর পর অনিয়মের মাত্রা বেড়েই চলছে।

২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য দাখিল পরীক্ষার ফরম ফিলাপে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ ব্যক্তিগত রোষানলের অভিযোগ উঠেছে। বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি’র ৩গুণ অর্থ আদায় করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, ফরম ফিলআপের সাথে বিভিন্ন উন্নয়ন খাত দেখিয়ে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সুপার।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গির আলম বলেন, ,তিনি অসুস্থ, বর্তমানে হাসপাতালে তবে পারিবারিক সমস্যা পরিহার করে  নুরুন্নবীকে ফরম পিলাপ করাতে তিনি সুপারকে  বলেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত এসএসসি বিজ্ঞান ১৭৩৫ টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ ১৫৫৫টাকা।

একাধিক অভিভাবক সুত্রে জানা গেছে, বোর্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী প্রতি ৪২৪০টাকা নিলেও দিচ্ছেন না রশিদ। কোনো অভিভাবক বা পরীক্ষার্থী এ ব্যাপারে মুখ খুললে তাকে পড়তে হয়েছে নুরুন্নবীর মত ঝামেলায়। এসব কারণে অভিভাবকরা হতাশাবোধ করছেন।

এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় সরকারি নির্ধারিত ফি ৫০টাকার পরিবর্তে ৭৫জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৫০টাকা হারে আদায় করেছেন। প্রশ্ন করে পাওয়া যায়নি সঠিক কোনো উত্তর।

এ বিষয়ে গুইমারা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি জেনেছেন এবং সুপার সত্যতা স্বিকার করেছেন তবে নানান খাতও দেখেয়েছেন । কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যবস্থা তিনি নেননি। অভিযোগ রয়েছে সুপারের সাথে শিক্ষা অফিসারের ব্যক্তিগত সখ্যতার।

অভিযুক্ত সুপার জায়নুল আবদীন বলেন, ৪২৪০টাকা নিয়েছেন, দুদক চাইলে উপযুক্ত হিসেব দিবেন। তবে এসকল বিষয়ে তাঁর বেতন বন্ধ বা চাকুরী যাবে না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন