গুইমারা উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণ না হওয়ায় প্রশাসনিক কাজে বিঘ্ন

গুইমারা প্রতিনিধি:

জেলার নবসৃষ্ট নবম উপজেলা হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরুর তিন বছরেও নিজস্ব ভবন নির্মাণ করা হয়নি। গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে স্বল্প পরিসরে চলছে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম। ফলে গুইমারা উপজেলায় প্রশাসনিক কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।

বর্তমানে গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের দোতলায় দায়সারা ভাবে চলছে উপজেলার কার্যক্রম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যক্রম চললেও অনেক বিভাগেরই দাপ্তরিক কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। আবার কিছু দপ্তরের কর্যক্রম চলছে ভাড়া বাড়িতে।

এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে গুইমারাকে উপজেলা ঘোষণা করার পরও সেবার জন্য  নানান কাজে মানুষকে এখনও দৌড়াতে হচ্ছে পাশ্ববর্তী উপজেলা মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও মহালছড়িতে। যার ফলে কাঙ্খিত মৌলিক সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে নতুন এ উপজেলাবাসী। এদিকে গুইমারা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হলেও নিজেদের কাঙ্খিত নতুন কার্যালয়ে বসতে পারেনি তারা।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কার্যক্রম চলছে গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের কক্ষে। পাশের আরেকটি কক্ষে চলছে উপজেলা মৎস্য বিভাগের কার্যক্রম। ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের কয়েকটি ছোট কক্ষে উপজেলা নির্বাচন অফিস, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগ ও উপজেলা  প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। এছাড়াও অফিসের ব্যবস্থা না থাকায় একটি বাড়ি একটি খামার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা অফিস একটি ভাড়া বাড়িতে থেকেই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম কোনমতে চললেও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের জন্য নেই কোনো অফিসের ব্যবস্থা। নাগরিক সেবার জন্য দৌড়াতে হয় চেয়ারম্যানদের বাড়িতে।

অন্যদিকে উপজেলা হিসাব রক্ষন কার্যালয়, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও কৃষি বিভাগের কার্যক্রমসহ বেশ কিছু কার্যালয়ের কার্যক্রম এখনও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে পাশের তিন উপজেলা থেকে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ সেবা, ভূমি ও কৃষি বিভাগের কাজে গুইমারা উপজেলার জনগণকে এখনও ছুটতে হয় মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও মহালছড়ি উপজেলায়।

এছাড়াও গুইমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দীর্ঘ দিনেও গড়ে ওঠেনি। উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে গভীর রাতে প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ছুটতে হয় পাশের উপজেলায়।

গুইমারা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মেমং মারমা জানান, গুইমারাবাসীর সেবার কথা ভেবেই তিনি নতুন ইউপি ভবনের কার্যালয়টি উপজেলা প্রশাসনের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। এখনো পূর্বের ভাঙ্গা ঘরে নিজের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

এ বিষয়ে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ বড়ুয়া জানান, প্রশাসনিক অবকাঠামো গড়ে না ওঠার কারণে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনেই প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। ভবনের অভাবে বেশ কয়েকটি অফিসের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও কৃষি বিভাগ এখনও পূর্বের ন্যায় পরিচালিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে উপজেলার ১৪টি বিভাগের দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে অতিরিক্ত দায়িত্বে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবনের জন্য প্রায় ৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চলছে। খুব সহসাই সকল প্রক্রিয়া শেষে ভবনের কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সম্পর্কিত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) ১০৯তম সভায় খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার হাফছড়ি, মহালছড়ির সিন্দুকছড়ি ও মাটিরাঙ্গার গুইমারা ইউনিয়নকে নিয়ে ‘গুইমারা উপজেলা’ ঘোষণা করা হয়। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর একই বছরের ৩০ নভেম্বর গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে গুইমারা উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ির সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন